সাহাবীদের মা ও আমাদের মা

আসমা বিনতে আবুবকর (রা:) মুসলিম নারীদের আর্দশ। তিনি ছিলেন আবুবকর সিদ্দিক (রা:) এর মেয়ে, আয়েশা (রা:) এর বোন ও তার স্বামী ছিলেন যুবায়ের (রা:)। তার বাবা ও স্বামী প্রথম অবস্হায় ইসলাম গ্রহনকারী ও জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবীর অন্তর্ভূক্ত। রাসুল (সা) যখন মদীনায় হিজরতের পথে সাওর গুহায় অবস্হানরত ছিলেন আসমা (রা:) রাত্রিতে তাদের জন্য খাবার নিয়ে যেতেন। তার জীবন অনেক অভাব-অনটন ও কষ্ট-দুঃখের মধ্যে কাটে। একদিন তার পুত্র মুনযের ইরাক যুদ্ধে বিজয় লাভ করে তাকে নকশা করা চিকন কাপড় উপহার দেয়। আসমা (রা:) তখন অন্ধ, কাপড় স্পর্শ করে তিনি রেগে গেলেন। পরে পুত্র মুনয মোটা কাপড় দিলে তিনি খুশি হয়ে বললেন- “আমাকে এমন কাপড় পরাবে।” তার প্রিয় ছেলে আবদুল্লাহ (রা:) যিনি মদীনায় জন্মগ্রহণ করে প্রথম মুহাজিরদের শিশু। তার জন্মের সময় এতবেশি খুশি হয়েছিলেন রাসুল (সা:) ও সাহাবীরা, স্বয়ং রাসুল (সা:) জিহ্বা নিঃসৃত খেজুর ছিল তার প্রথম খাদ্য আর রাসুল (সা:) তার নাম রাখেন। আসমা (রা:) এর বয়স তখন ১০০ বছর ও অন্ধ এবং হোসেন (রা:) শহীদ হন। স্বৈরাচাররা তখন ক্ষমতায়। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইয়ের (রা:) বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন। জালেম হাজ্জাজ ৫ মাস ১৭ দিন মক্কায় তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। হাজ্জাজ চিঠিতে সংবাদ পাঠান যে কোন তিনটি পথ বেচে নিতে-

১. বন্দি অবস্হায় শাসকের কাছে যাওয়া

২.স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া

৩. আমরন যুদ্ধ করা

চিঠি পাওয়ার পর একদিনে ১০,০০০ লোক আবদুল্লাহ (রা:) এর দল ছেড়ে চলে যায়। তিনি তার মা আসমা (রা:) কে এসে বলেন- “মৃত্যুর মাঝে আমি শান্তি পাব। আমার লোকেরা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, এমনকি আমার পরিবারও। আমার কাছে আছে গুটিকয়েক লোক। প্রতিপক্ষ আমাকে দুনিয়ায় যা চাযই তাই দিবে, আপনার অভিমত কি?” আসমা (রা:) বলেন- “তুমি আমার হতে তোমার পরিস্থিতি ভালোই জান। তুমি যদি মনে কর, তুমি সত্যের পথে আছ, তাহলে এগিয়ে যাও আর তোমার সাথীদের মত লড়ে শহীদ হয়। কিন্তু যদি দুনিয়ার পিছে ঘুরো, তুমি একজন হতভাগ্য পুরুষ। সেক্ষেত্রে তোমার ও তোমার সাথীদের জীবন বৃথা। এই জীবনে তুমি আর কতকালই বাচবে? যদি সত্যের পথে থাকো, যদিও তোমার অনেক সাথী তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে, তুমি দূর্বল হয়ে গেছো, কিন্তু এভাবে বেচে থাকা মুক্ত ঈমানদারের কাজ নয়।” আবদুল্লাহ (রা:) বলেছিলেন- “আমার ভয় জবাই করার পর ওরা আমার লাশকে বিকৃত করবে।” আসমা (রা:) বলেন- “জবাই করার পর মেষশাবক ব্যাথা অনুভব করে না তাকে যেভাবে ঝুলানো হোক না কেন।” আসমা (রা:) মাথায় চুমু দিয়ে আবদুল্লাহ (রা:) কে বলেন- “আল্লাহর কসম, এই দুনিয়ায় বাচার নূন্যতম ইচ্ছে আমার নেই। আমার আশা পরকালের জীবন। সারাজীবন আমি সত্যের পথে থেকেছি। কিন্তু আমি আপনার মতামতকে জানতে চেয়েছিলাম যেনো আপনার মতামত আমার সিদ্ধান্তকে শক্তিশালী করে।” আসমা (রা:) তার ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল- “সাহসের সাথে লড়ো তুমি যুবাইয়ের (রা:) এর ছেলে, আবুবকর (রা) ও সাফিয়া (রা:) এর নাতি। সেদিন দৃঢ়ভাবে যুদ্ধ করে আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইয়ের (রা:) শহীদ হন তার লাশ বিকৃত করে কিছুদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়। জালেম হাজ্জাজ, আসমা (রা:) কে বলেছিল- “দেখ আল্লাহ তার শত্রুদের কি অবস্হা করে।” আসমা (রা:) বলেছিলেন- “তুমি তার দুনিয়া ধ্বংস করছো সে তোমার পরকাল নিঃশেষ করে দিয়েছে।” ইসলামের সোনালী যুগে মায়েরা তার সন্তানদের বড় করতো তার ছেলে যেন দ্বীনদার ও শহীদ হয়। ফলে তাদের ঠিকানা ও গৃহ হবে জান্নাত ও সম্মানজনক জান্নাতি মুকুট পরানো হবে তাদের। তারা আখিরাতের জন্য দুনিয়াকে ত্যাগ করতেন আর এখন দুনিয়ার খ্যাতি, সম্মান, সম্পদের লোভে দ্বীন হতে সন্তানকে দূরে রাখে। ফলে সন্তান ডাক্তার, শিল্পপতি, সরকারী বড় কর্মকর্তা হওয়ার পরও মা-বাবার স্হান হয় বৃদ্ধাশ্রমে। কয়জন ঈমাম, দিনমজুর, রিকশাওয়ালার মা থাকে বৃদ্ধাশ্রমে? তখন ঈমাম হোসেন (রা:) ও আবদুল্লাহ (রা:) এর সঙ্গীরা দলত্যাগী ও অনেকে নিরব ছিল লোভে ও ভয়ে, তাই স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা দীর্ঘদিন টিকে ছিল। আজও লোভে ও ভয়ে সত্যত্যাগী লোকের সংখ্যা বেশি তাই স্বৈরাচারও টিকে আছে। আজ আমরা ঠিকই মরছি দুর্ঘটানায়, অসুখে, বেকারত্বের টেনশনে কিন্তু শহীদী সম্মানের মৃত্যু ভাগ্যে জুটে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *