২য় ঘটনা ছিল খিজির (আঃ) এক বালককে হত্যা করে। তার ব্যাখায় খিজির (আঃ) বলেন- “বালকটির ব্যাপার তার পিতা-মাতা ছিল ঈমানদার। আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে অবাধ্যতা ও কুফর দ্বারা তাদেরকে প্রভাবিত করবে। অতঃপর আমি ইচ্ছা করলাম যে, তাদের পালনকর্তা তাদেরকে মহত্তর, তার চাইতে পবিত্রতায় ও ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর একটি শ্রেষ্ঠ সন্তান দান করুক।” (সুরা কাহাফ-৮০-৮১)। এ ঘটনায় শিক্ষনীয় হল- তাকদীরের ভালোমন্দের জ্ঞান আল্লাহর নিকট। আমাদের নিকট যা অকল্যাণকার মনে হয় তার ভিতরে কিছু কল্যাণ রয়েছে আমরা জানি না। অনেক আলেমের অভিমত খিজির (আঃ) ছিল মালাইকা যারা আল্লাহর নির্দেশে এভাবে জীবন নেয়। আজও দেখুন ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাক সারাবিশ্বে মুসলিম শিশুদের করুন মৃত্যু আমাদের মনে কষ্ট দেয় কিন্তু এসব শিশুদের আল্লাহ মালহামা, সুফিয়ানী, দাজ্জালের ফেতনা হতে হেফাজত করেছেন মৃত্যু নামক রহমত দিয়ে। এ ঘটনার আরেকটা শিক্ষনীয় বিষয় ছিল – কেউ যদি দ্বীন হতে ফিরে যায় আল্লাহ তার বিকল্প অন্যদের তৈরী করেন যাদের হাতে ইসলামের বিজয় দিবেন। যেমন এই বালকের বদলে নেককার সন্তান দিবেন। তাই পরবর্তীতে বনী ইসরায়েল যখন এই ঘটনা হতে শিক্ষা না নিয়ে গোবাছুর পূজা ও জেহাদ হতে বিরত রইলো আল্লাহ তাদের মৃত্যু দিলেন আর তাদের দীর্ঘদিন শরণার্থীর মত রাখলেন। তারা জেরুজালেম প্রবেশ করতে পারেনি। দীর্ঘ কয়েকবছর পর মুসা (আঃ) এর সঙ্গী ইউশা ইবনে নুন (আঃ) নবী হয়। দীর্ঘদিন মুসার (আঃ) দাওয়াতের অবদানে একটি তরুন সাহসী প্রজন্ম গড়ে উঠে যারা ইউশার (আঃ) নেতৃত্বে জেরুজালেম বিজয় করে। আল্লাহ বলেন- “আর যখন মুসা স্বগোত্রকে বললেন হে আমার জাতি গো বৎসকে উপাস্যরুপে গ্রহণ করে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছ। সুতরাং তোমরা তোমাদের প্রভুর পানে ফিরে যাও এবং তোমরা নিজেদেরকে সংযত কর, প্রভুর নিকট তোমাদের ইহাই শ্রেয় তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরবশ হবেন, তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (সুরা বাকারাহ-৫৪)।
সুরা মায়েদায় বর্ণিত – “যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেনঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে পয়গম্বর সৃষ্টি করেছেন, তোমাদেরকে রাজ্যাধিপতি করেছেন এবং তোমাদেরকে এমন জিনিস দিয়েছেন, যা বিশ্বজগতের কাউকে দেননি। হে আমার সম্প্রদায়, পবিত্র ভুমিতে প্রবেশ কর, যা আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং পেছন দিকে প্রত্যাবর্তন করো না। অন্যথায় তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। তারা বললঃ হে মূসা, সেখানে একটি প্রবল পরাক্রান্ত জাতি রয়েছে। আমরা কখনও সেখানে যাব না, যে পর্যন্ত না তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়। তারা যদি সেখান থেকে বের হয়ে যায় তবে নিশ্চিতই আমরা প্রবেশ করব।’ আল্লাহভীরুদের মধ্য থেকে দু’ব্যক্তি বলল, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছিলেনঃ তোমরা তাদের উপর আক্রমণ করে দরজায় প্রবেশ কর। অতঃপর তোমরা যখন তাতে প্রবেশ করবে, তখন তোমরাই জয়ী হবে। আর আল্লাহর উপর ভরসা কর যদি তোমরা বিশ্বাসী হও। তারা বললঃ হে মূসা, আমরা জীবনেও কখনো সেখানে যাব না, যতক্ষণ তারা সেখানে থাকবে। অতএব, আপনি ও আপনার পালনকর্তাই যান এবং উভয়ে যুদ্ধ করে নিন। আমরা তো এখানেই বসলাম। মূসা বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আমি শুধু নিজের উপর ও নিজের ভাইয়ের উপর ক্ষমতা রাখি। অতএব, আপনি আমাদের মধ্যে ও এ অবাধ্য সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করুন। আল্লাহ বললেনঃ এ দেশ চল্লিশ বছর পর্যন্ত তাদের জন্যে হারাম করা হল। তারা ভুপৃষ্ঠে উদভ্রান্ত হয়ে ফিরবে। অতএব, আপনি অবাধ্য সম্প্রদায়ের জন্যে দুঃখ করবেন না।” (সুরা মায়েদাহ২১-২৬)।
ঠিক তেমনি আমরা দ্বীন হতে ফিরে গেছি, জেহাদ ভুলে গেছি। সারাবিশ্বে মুসলিমরা শরণার্থীর মত ঘুরছে, জেরুজালেম বিজয় করতে পারছে না। কিন্তু মনসুর ইয়ামেনী, হারস হাররাস, শোয়েব বিন সালেহ, খলিফা মাহাদীর নেতৃত্বে এমন একটি জাতি গড়ে তুলবেন যারা আবার জেরুজালেম বিজয় করবে। আল্লাহ বলেন- “হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।” (সুরা মায়েদাহ-৫৪)।
[…] মুসা ও খিজির পর্ব-২ […]
[…] মুসা ও খিজির পর্ব-২ […]