বিশ্বের বহুদেশে একসময় রাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র চালু ছিল। রাজ পরিবার বিলাসী জীবনযাপন করলেও সাধারণ মানুষ ছিল অবহেলিত। অধিকাংশ সম্পদের মালিক ছিল রাজপরিবার, তাদের পৃষ্ঠপোষক ব্যবসায়ী, আমলারা, আত্মীয়রা।
তাদের জুলুম,নির্যাতন ও অভাব অনটন হতে মুক্তির জন্য মানুষ বিভিন্ন উপায়ের সন্ধান করে – একটা সময় মানবতার মুক্তির পথ ভেবে অনেক দেশ গনতন্ত্রকে বেছে নেয়। এভাবে হয়তো একনায়কতন্ত্র, পুজিবাদ, ক্ষমতাসীন অধিপত্য হতে রক্ষা পাবে আসলে কি গনতন্ত্র মুক্তি দিতে পেরেছে!? গনতন্ত্র যখন বিশ্বের অনেক দেশে জনপ্রিয় হল, মানুষ ভাবল নেতা নির্বাচন করার অধিকার পেয়েছে, তাদের পছন্দনীয় লোকের হাতে ক্ষমতা দিলে ওদের সমস্যার সমাধান মিলবে! কিন্তু বর্তমান গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নির্বাচন নীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনা নীতিটা অনেকটা পুজিবাদীদের হাতে বন্দী।
একজন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নির্বাচনী প্রচারনায় প্রচুর ব্যয়ের প্রয়োজন হয়- অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ব্যয় ব্যক্তি বা দল বহন করতে সক্ষম হয় না। তখন তারা ব্যবসায়ীদের নিকট লক্ষমতা পেলে ব্যবসায়ীরা কি সুবিধা পাবে তা তুলে ধরা শুরু করে – যাতে ব্যবসায়ীরা আকৃষ্ট হয়, ওদের ডোনেশান করতে থাকে।
আস্তে আস্তে ব্যবসায়ীরা এভাবে নিজেদের সুবিধা হয় এরকম পছন্দনীয় প্রার্থীকে সহায়তা ও নিজেদের মিডিয়ায় ওদের সাপেক্ষে প্রচারণা চালানো শুরু করে যাতে তাদের পছন্দের প্রার্থী বিজয়ী হয়।
গনতন্ত্র জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম কারন ছিল পুঁজিবাদীদের প্রতি মানুষের ক্ষোভ। তাই প্রথম অবস্থায় ব্যবসায়ী, পুজিবাদীরা, রাজপরিবারের সদস্যরা রাজনীতিতে প্রবেশ করলে জনসমর্থন পেত না। কিন্তু এভাবে তারা প্রার্থী নির্বাচন ও ক্ষমতায়নে ভূমিকা রেখে নিজেদের সুবিধা টিকিয়ে রাখলো।
আজও উন্নত দেশে ক্ষমতাসীনরা নির্বাচিত হয় – অস্ত্র, তেল, গ্যাস ব্যবসায়ীর টাকায়। ফলে নির্বাচিত হওয়ার পর ক্ষমতাসীন বিভিন্ন মুসলিম অধ্যুষিত দেশ, গরিব দেশে যুদ্ধ সংঘর্ষ বাধায়। এর জন্য অস্ত্র কেনার জন্য বড় অংকের বাজেটের প্রয়োজন হয় – আর অস্ত্রের তৈরি ও কেনা হয় এসব কোম্পানি হতে যারা তাদের নির্বাচনে বিজয়ী হতে সহযোগিতা করে (অর্থ ও ওদের মিডিয়া দ্বারা)।
আবার ক্ষমতাসীনদের দখলকৃত ভূমির সম্পদ (তেল, গ্যাস, স্বর্ন) উত্তোলনের কনট্রাক ওদের পছন্দনীয় ব্যবসায়ীরা পায়। আর যুদ্ধ ক্ষতিগ্রস্থ দেশের ব্রীজ, স্হাপনা নির্মানের কাজও ওদের ঘনিষ্ঠ কোম্পানিগুলোকে দেওয়া হয়। এভাবে প্রকৃত ক্ষমতা পুজিবাদীদের হাতে থেকে যায়। ভারত উপমহাদেশসহ বহুদেশে ব্যবসায়ীর অর্থে, সাহায্যে নির্বাচিত হওয়া ক্ষমতাসীনরা তাদের প্রিয় ব্যবসায়ীদের লোন মওকুফ করে দেয়, বিভিন্ন বানিজ্যিক সুবিধা দেয়। এভাবে তারা জনগণকে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতা নেয়। কিন্তু আসলে প্রকৃত উন্নয়ন ব্যবসায়ীদের হয়।
বিশ্বের অনেক দেশে ইসলামী দল গড়ে উঠে- তাদের অধিকাংশ জনপ্রিয় কম থাকায় কোন না কোন বড় দলের সাথে জোট বাধে। ফলে তাদের মূল আদর্শই হারিয়ে যায়। ইসলামের নামে যারা ব্যবসা (ব্যাংক, লাইফ ইনসুরেন্স) করত এরকম দল/সংগঠন/কোম্পানি তাদের মাঝে ভাবনা আসে- আমরা যদি নিজেরা প্রার্থী নির্বাচন বা ক্ষমতায় আসতে পারি তাহলে আমাদের লাইসেন্স, ব্যবসা সম্প্রসারণে অন্যদের দ্বারস্থ হতে হবে না। এভাবে অনেক ব্যবসায়ী ও তাদের সমর্থকরা ইসলামী রাজনীতির নামে দল গঠন করে। ওরা হয়তো কোন বড় দলের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে বা এককভাবে ক্ষমতাশ যেতে চায় বা পায়। তাতে ইসলামী আইন ও ইসলামের কোন উপকার হয় না বরং তাদের ব্যবসাসহ, নিরাপত্তার স্বার্থ চরিতার্থ হয়।
বিশ্বের বহুদেশে উল্টো ক্ষমতা পেতে বা ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের ঈমান ও আমল ধ্বংস করেছে। মুমিনদের সাথে জুলুম করেছে আর কাফেরদের সাথে মধুর সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
ইসলামী ব্যাংক নামে কোন ব্যাংকেই যেমন সুদমুক্ত নয় – তেমনি ইসলামী গনতন্ত্র বলে কিছু নেই। ইসলামে এরকম হাজার কোটি সম্পদ জমাতে উৎসাহ দেয় না- বরং যাকাত, সদকা ও দানে অনুপ্রেরণা দেয়। একদিকে ব্যাংকগুলো সম্পদ জমাচ্ছে অন্যদিকে কতজন না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছে!!
(ইসলামী রাষ্ট্র হলে সম্পদ নিজগৃহে নিরাপদে থাকতো)
ইসলামী নির্বাচন পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন – মজলিসে শুরায় অল্পকিছু ঈমানদার আলেম দ্বারা নির্বাচিত হয় খলিফা। যেখানে কাফের, ফাসেক, মুনাফেকদের সমর্থন দেওয়ার অধিকার রাখে না। ফাসেক, কাফের, মুনাফেক কি কখনও মুমিন ব্যক্তি ক্ষমতাসীন হোক চাইবে?
যদি বলেন বর্তমানে এটার আধুনিকায়ন প্রয়োজন! তাহলে বলবো ইসলাম সকল যুগের উপযোগী। আর যদি এরকমই নির্বাচন চান, সহজ ও কম খরচে পদ্ধতি চালু করুন- প্রত্যেক এলাকায় মসজিদ ও মসজিদের ঈমাম আছে যাদের মুসল্লীরা যাচাই বাচাই করে নিয়োগ করবে।
আর সকল মসজিদের ঈমামরা একজন নেতা নির্বাচন করুক। তাহলে দ্বীনদার লোক নির্বাচিত হবে, খরচও কম হবে। অথচ আজ পর্যন্ত দেশের মসজিদের ঈমামরা ঐক্য হতে পারেনি- কারো কাছে যেটা ইসলাম। অন্যদের কাছে শির্ক, কুফর, বিদআত। তাহলে ওরা কি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবে!!