কিন্তু দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু লোক কাউকে মারছে শুধুমাত্র চুল লম্বা রাখার জন্য, গরিব রিকশাচালক ও দিনমজুরদের প্রতি কঠোর হচ্ছে সামান্য অন্যায়ের কারণে। অন্যদিকে, একদল লোক না বুঝেই তাদের বাহবা দিচ্ছে। অথচ এই বাহিনীগুলো আবার তাগুতী আইন রচনাকারীদের পাহারা দিচ্ছে। দামি হোটেলগুলোতে যেখানে মদ, পতিতাবৃত্তি হয় এবং সুদ-ভিত্তিক ব্যাংক নির্বিঘ্নে চলছে, সেখানে এই বাহিনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
দেখবেন, বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে তারা সরব, কিন্তু পরকীয়ার ক্ষেত্রে নীরব। কিন্ত এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে লাখ লাখ লোক আপন মায়ের সাথে জেনা করার সমপরিমাণ গোনাহে লিপ্ত এটা যেন কোন অপরাধ নয়!
রসুলুল্লাহ’ (সাঃ) বলেন- সুদ হল সত্তর প্রকার পাপের সমষ্টি, তার মাঝে সবচেয়ে নিম্নতম হল আপন মায়ের সাথে ব্যভিচার করা। (ইবনে মাজাহ)।
তারা কি তাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কুফর, ব্যভিচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সেভাবে অবস্থান নিতে পারে, যতটা তারা গরিব ও দিনমজুরদের বিরুদ্ধে কঠোর হয়? বরং এসব উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরোধীতা করলে তারাই জেল, জুলুম কার্যকর করে।
আল্লাহ আপনাদের বিবেক দিয়েছেন, কিন্তু আপনারা এটাকে জুলুম প্রতিরোধ ও দেশপ্রেমের নামে প্রচার করছেন! এটা আর কিছু নয়, বরং মানুষের তৈরি শিরকী আইন বাস্তবায়ন করা। ঠিক যেমনটা ফেরাউন যতই অন্যায় করত, তার বাহিনী চুপ থাকত। অন্যদিকে, অসহায় বনী ইসরাইল সামান্য কিছু করলেই তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হতো। আর ইহুদিরাও এই রীতি অনুসরণ করেছে।
আল্লাহ বলেন-
হে রসূল, তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না, যারা দৌড়ে গিয়ে কুফরে পতিত হয়; যারা মুখে বলেঃ আমরা মুসলিম অথচ তাদের অন্তর মুসলিম নয় এবং যারা ইহুদী; মিথ্যা বলার জন্যে তারা গুপ্তচর বৃত্তি করে। তারা অন্যদলের গুপ্তচর, যারা আপনার কাছে আসেনি। তারা বাক্যকে (তাওরাতের) স্বস্থান থেকে পরিবর্তন করে। তারা বলেঃ যদি তোমরা এ নির্দেশ পাও, তবে কবুল করে নিও এবং যদি এ নির্দেশ না পাও, তবে বিরত থেকো। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান, তার জন্যে আল্লাহর কাছে আপনি কিছু করতে পারবেন না। এরা এমনিই যে, আল্লাহ এদের অন্তরকে পবিত্র করতে চান না। তাদের জন্যে রয়েছে দুনিয়াতে লাঞ্ছনা এবং পরকালে বিরাট শাস্তি। (সুরা মায়েদাহ -৪১)
বারা ইবনে আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশ দিয়ে এক ইয়াহুদীকে মুখ কালো ও বেত্ৰাঘাত করা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি তাদেরকে ডেকে বললেন, তোমরা কি ব্যভিচারের শাস্তি এরকমই তোমাদের কিতাবে পাও? তারা বললঃ হ্যাঁ। তখন তিনি তাদের আলেমদের একজনকে ডেকে বললেন, “তোমাকে সে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, যিনি মূসা (আঃ)-এর প্রতি তাওরাত কিতাব অবতীর্ণ করেছিলেন, এরূপই কি তোমরা তোমাদের কিতাবে ব্যভিচারীর শাস্তি পেয়েছ? সে বলল, না।
তবে যদি আপনি আমাকে এর দোহাই দিয়ে জিজ্ঞেস না করতেন, তাহলে আমি কখনই তা বলতাম না। আমাদের কিতাবে আমরা এর শাস্তি হিসেবে ‘প্রস্তারাঘাতকেই দেখতে পাই। কিন্তু এটা আমাদের সমাজের উঁচু শ্রেণীর মধ্যে বৃদ্ধি পায়।
ফলে আমাদের উঁচু শ্রেণীর কেউ সেটা করলে তাকে ছেড়ে দিতাম। আর নিম্নশ্রেণীর কেউ তা করলে তার উপর শরীআত নির্ধারিত হদ (তথা রজমের শাস্তি) প্রয়োগ করতাম।
তারপর আমরা বললাম, আমরা এ ব্যাপারে এমন একটি বিষয়ে একমত হই যা আমাদের উঁচু-নীচু সকল শ্রেণীর উপর সমভাবে প্রয়োগ করতে পারি। তা থেকেই আমরা রজম বা প্রস্তারাঘাতের পরিবর্তে মুখ কালো ও চাবুক মারা নির্ধারণ করি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি প্রথম আপনার সেই মৃত নির্দেশকে বাস্তবায়ন করব, যখন তারা তা নিঃশেষ করে দিয়েছে। তখন তাকে রজম করার নির্দেশ দেয়া হল এবং তা বাস্তবায়িত হলো। তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করলেন। (মুসলিম)
অথচ ইসলামের সৌন্দর্য্য দেখেন, বিচারব্যবস্থা সবার জন্য সমান।
সাঈদ ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। মাখযুমী সম্প্রদায়ের জনৈকা মহিলার ব্যাপারে কুরাইশ বংশের লোকদের খুব দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল যে কিনা চুরি করেছিল। সাহাবাগণ বললেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কে কথা বলতে পারবে? আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় পাত্র উসামা (রাঃ) ছাড়া কেউ এ সাহস পাবে না।
তখন উসামা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কথা বললেন। এতে তিনি বললেনঃ তুমি আল্লাহ তা’আলার দেওয়া শাস্তির বিধানের ক্ষেত্রে সুপারিশ করছ? এরপর তিনি দাঁড়িয়ে খুতবা প্রদান করলেন এবং বললেনঃ হে মানব মণ্ডলী! নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের লোকেরা পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছে। কেননা কোন সম্মানিত লোক যখন চুরি করত তখন তারা তাকে রেহাই দিয়ে দিত। আর যখন কোন দুর্বল লোক চুরি করত তখন তার উপর শরীয়তের শাস্তি প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ এর কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করে তবে অবশ্যই মুহাম্মাদ তাঁর হাত কেটে দেবে। (সহীহ বুখারী -৬৩৩১)
আল্লাহ বলেন-
“আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদানুযায়ী ফয়সালা করুন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন- যেন তারা আপনাকে এমন কোন নির্দেশ থেকে বিচ্যুত না করে, যা আল্লাহ আপনার প্রতি নাযিল করেছেন। অনন্তর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে নিন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের গোনাহের কিছু শাস্তি দিতেই চেয়েছেন। মানুষের মধ্যে অনেকেই নাফরমান। তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্যে উত্তম ফয়সালাকারী কে?” (সুরা মায়েদাহ, ৪৯-৫০)।
তাই আল্লাহর আইনের বিপরীত জাহেলদের বিধান হতে বিরত থাকুন, স্বেচ্ছায় তাদের বিচার করার অধিকার দিয়ে ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্থ করা উচিত কি?