মুসা (আঃ) ও খিজিরের শেষ ঘটনা ছিল একটি প্রাচীর নির্মাণ কেন্দ্র করে। যা খিজির (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে করেন। সুরা কাহাফে বর্ণিত-
فَانطَلَقَا حَتَّى إِذَا أَتَيَا أَهْلَ قَرْيَةٍ اسْتَطْعَمَا أَهْلَهَا فَأَبَوْا أَن يُضَيِّفُوهُمَا فَوَجَدَا فِيهَا جِدَارًا يُرِيدُ أَنْ يَنقَضَّ فَأَقَامَهُ قَالَ لَوْ شِئْتَ لَاتَّخَذْتَ عَلَيْهِ أَجْرًا
“অতঃপর তারা চলতে লাগল, অবশেষে যখন একটি জনপদের অধিবাসীদের কাছে পৌছে তাদের কাছে খাবার চাইল, তখন তারা তাদের আতিথেয়তা করতে অস্বীকার করল। অতঃপর তারা সেখানে একটি পতনোম্মুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন, সেটি তিনি সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন। মূসা বললেনঃ আপনি ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে এর পারিশ্রমিক আদায় করতে পারতেন।” (সূরা কাহাফ, আয়াত ৭৭)।
قَالَ هَٰذَا فِرَاقُ بَيْنِي وَبَيْنِكَ ۚ سَأُنَبِّئُكَ بِتَأْوِيلِ مَا لَمْ تَسْتَطِعْ عَلَيْهِ صَبْرًا
“তিনি বললেনঃ এখানেই আমার ও আপনার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হল। এখন যে বিষয়ে আপনি ধৈর্য্য ধরতে পারেননি, আমি তার তাৎপর্য বলে দিচ্ছি।” (সূরা কাহাফ, আয়াত ৭৮)।
وَ اَمَّا الۡجِدَارُ فَکَانَ لِغُلٰمَیۡنِ یَتِیۡمَیۡنِ فِی الۡمَدِیۡنَۃِ وَ کَانَ تَحۡتَهٗ کَنۡزٌ لَّهُمَا وَ کَانَ اَبُوۡهُمَا صَالِحًا ۚ فَاَرَادَ رَبُّکَ اَنۡ یَّبۡلُغَاۤ اَشُدَّهُمَا وَ یَسۡتَخۡرِجَا کَنۡزَهُمَا ٭ۖ رَحۡمَۃً مِّنۡ رَّبِّکَ ۚ وَ مَا فَعَلۡتُهٗ عَنۡ اَمۡرِیۡ ؕ ذٰلِکَ تَاۡوِیۡلُ مَا لَمۡ تَسۡطِعۡ عَّلَیۡهِ صَبۡرًا
“প্রাচীরের ব্যাপার- সেটি ছিল নগরের দুজন পিতৃহীন বালকের। এর নীচে ছিল তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ন। সুতরাং আপনার পালনকর্তা দয়াবশত ইচ্ছা করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পন করুক এবং নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। আমি নিজ মতে এটা করিনি। আপনি যে বিষয়ে ধৈর্য্যধারণ করতে অক্ষম হয়েছিলেন, এই হল তার ব্যাখ্যা।” (সূরা কাহাফ, আয়াত ৮২)।
মুসা (আঃ) এর আপত্তির কারণে তারা যে কওমের কাছে ছিল তারা চিরচারিত নিয়মে তাদের আতিথিয়তা জানান নি আর খিজির (আঃ) কাজের বিনিময়ে তাই পারিশ্রমিক নিতে পারতেন। কিন্তু মুসা (আঃ) জানতেন খিজির (আঃ) তা আল্লাহর নির্দেশে করেছেন।
শিক্ষাঃ
দ্বীনের পথটা ঠিক এ রকম। মুমিন দাওয়াত, জেহাদ সবই করে আল্লাহর জন্য। কারো কাছে প্রাপ্য চায় না। সে তার কর্মের প্রারশ্রামিক আশা করে আল্লাহর নিকট। কেউ আমন্ত্রণ জানাক বা সমালোচনা বা বাধা দিক সে তার দ্বীনী দায়িত্ব পালন করে যায়।
আরেকটা শিক্ষা হল রিযিকের গুপ্তরহস্য শুধু আল্লাহ জানেন। তিনি তার প্রিয় বান্দাদের অসহায় ছেড়ে দেন না। তিনি যেমন রিযিকদাতা তেমনি তার হেফাজতকারী। উপযুক্ত সময়ে মুমিন তার রিযিক পেয়ে যায়।
এই ঘটনা শিক্ষনীয় ছিল বনী ইসরায়েলের জন্য। যখন তারা অসহায়ের মত হিজরত করে চলে এসেছিল খোলা প্রান্তরে তখন আল্লাহ তাদের মাটির নিচের গুপ্ত রিযিক পানি ও আসমান হতে মান্না, সালওয়ার মত রিযিক দেন যা তারা বিনা প্ররিশ্রমে পেয়েছিল। আল্লাহ চেয়েছিলেন তারা সহজে দ্বীন শিখে দ্বীন পালন করুক। কিন্তু তারা তা অপছন্দ করলে আল্লাহর সে রহমত হতে বঞ্চিত হয়। ফলে কঠোর কাজ করতে হয় যাতে সময়, পরিশ্রম দুটোই হতো কিন্তু ফসল কখনও মান্না, সালওয়ার মত ছিলো না। দুনিয়ার মোহে সহজ রিযিক ছেড়ে ব্যস্ততা, পরিশ্রমের কষ্টসাধ্য রিযিক পেল তারা।
আমাদের অনেককে আল্লাহ রিযিক সহজ করেছেন বা অবসর দিয়েছেন যাতে আমরা তার দ্বীন শিখে তা প্রচার ও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা যখন সে দায়িত্ব ভুলে দুনিয়ার আনন্দ সম্পদের মোহে ব্যস্ত হয়ে পড়ি তখন কর্মের পিছে ছুটতে ছুটতে জীবনের বহু সময় শেষ হয়ে যায়, কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া হয় না। বর্তমানে আরব বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখুন- আল্লাহ তাদের কিরূপ রহমত করেছিল স্বর্ন, তেলসহ মূল্যবান সম্পদ দিয়ে যাতে তারা পৃথিবীতে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
কিন্তু দুনিয়ার লোভে তারা দামী গাড়ী, বাড়ি, নারী অধিক সম্পদ হাসিল করায় ব্যস্ত। ফলে শেষ জমানার হাদীস অনুযায়ী- অচিরেই তাদের এমন দিন আসবে যার ফলে তাদের অপমান, ক্ষুধার কষ্ট অনুভব করতে হবে যখন অবরোধ ও সংঘাতগুলো শুরু হবে।
দাজ্জালের সময় ঠিক যারা দৃঢ়ভাবে ঈমান আনবে তাদের জিকির দ্বারা ক্ষুধা নিবারন হবে। আর দাজ্জাল যাদের তার জাহান্নাম খ্যাত আগুনে ফেলবে মুমিন সেখানে জান্নাতের রিযিক পেয়ে যাবে।
[…] মুসা ও খিজির পর্ব-৩ […]
[…] মুসা ও খিজির পর্ব-৩ […]