দাজ্জাল, জিন (কারিন), জাদুকর

মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ফেতনা হল দাজ্জাল। তার একটা ফেতনা হল- তার সময় জিনরা মৃত ব্যক্তির ছদ্মবেশ নিবে ফলে স্বজনরা ভাববে দাজ্জাল তাকে জীবিত করেছে তাই তাকে রব মনে করে সিজদাহ্ দিবে (আল ফিতান)। আলেমদের অভিমত দাজ্জাল কারিন নামক জিন দ্বারা এটা করবে। এছাড়া বদর যুদ্ধের পূর্বে শয়তান সুরাকার ছদ্মবেশ নেয় আর হিজরতের পূর্বে নজদের বৃদ্ধের বেশ ধরে। শয়তান কোরাইশদের সকল গোত্র হতে কিছুলোক মিলে রসুলকে (সাঃ) হত্যা করার পরামর্শ দেয়, তাহলে বনু হাশেম সবার সাথে লড়াই করতে পারবে না৷ তাহলে রক্তপন দিয়েই বনু হাশেমকে শান্ত করতে পারবে (সীরাতে ইবনে হিশাম, আর রাহিকুল মাখতুম)। আজও সারা বিশ্বে মুসলিম দেশগুলোতে কাফের জোট ঐক্যবদ্ধ হয়ে এজন্য আক্রমন করে কারণ মুসলিমরা প্রত্যেক দেশের সাথে লড়তে পারবে না। আর মুসলিমদের ধোকা, মিথ্যে সান্তনা দিতে শরনার্থী শিবির খুলে খাদ্য, ত্রাণ দেয়, অথচ তা মুসলিমের সম্পদ হতে লুণ্ঠিত সম্পদের সামান্য মাত্র। প্রতিটা মানবশিশু জন্মের পর পরই তার সাথে কারিন বা সঙ্গী জিন থাকে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভিন্ন হয় না। অনেক আলেমের অভিমত- মানুষ মারা গেলেও তার কারিন অনেক বছর জীবিত থাকে। কারিনের চেহারা তার সঙ্গী মানুষটার মত, মানুষ পাপ করলে তার কারিন শক্তিশালী হয় আর নেক আমল করলে দুর্বল হয়ে যায়। রসুল (সাঃ) বলেন- “তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার সাথে তার সহচর (কারিন) শয়তান নিযুক্ত করে দেয়নি। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেনঃ আপনার সাথেও কি হে আল্লাহর রসুল? তিনি বললেনঃ আল্লাহ তায়ালা তার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করেছেন। ফলে সে ইসলাম গ্রহন করেছে আর আমাকে ভালো কাজেরই পরামর্শ দেন।” (সহীহ মুসলিম)। এছাড়া কুরআনে বর্নিত আছে- “তার কারিন বা সঙ্গী শয়তান বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমি তাকে অবাধ্যতায় লিপ্ত করিনি। বস্তুত সে নিজেই সুদূর পথভ্রান্তিতে লিপ্ত। আল্লাহ বলবেন আমার সামনে বাকবিতণ্ডা করো না। আমি তো পূর্বেই তোমাদের আজাব দ্বারা ভয় প্রর্দশন করেছিলাম।” (সুরা ক্বাফ -২৭-২৮)। যেহেতু সে আমাদের সাথে থাকে, আমাদের অতীত, বর্তমানের অনেককিছু সে জানে ও আমাদের আলোচনা শুনতে পায়, দেখতে পায়। ধরুন, আপনি কোন একটা জিনিস হারিয়ে ফেলেছেন বা মিলানো হিসাব ভুলে গেছেন, আপনি সালাত পড়তে গেলে সে মনে করিয়ে দিবে অন্তরে অসওয়াসার মাধ্যমে যেন সালাত বিঘ্নিত হয়। হয়তো আপনি কোন মেয়েকে পছন্দ করেছেন সে দেখেছে ক্ষনে ক্ষনে আপনাকে মেয়েটার কথা স্মরন করিয়ে দিবে যেন পাপে লিপ্ত হন। তারচেয়ে মারাত্মক হল কারিনের মাধ্যমে গণক, খোনাররা অনেক কারসাজি করে। যখন কেউ গণক, খোনারের কাছে যায় গণক, খোনার তার কারিনের মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তির কারিনের নিকট হতে কিছু তথ্য জেনে নিবে তা বলে চমকিয়ে দিবে, ভক্ত বানাবে এরপর ভবিষ্যৎ বিপদ আপদ বা কোন প্রাপ্তির লোভ দেখিয়ে কুফর, শিরক করাবে ও অর্থ হাতিয়ে নিবে। আর এসব তারা সোলাইমান (আঃ) এর বিদ্যা বলে প্রচার করলেও কুফর, শিরক জঘন্য পাপ ছাড়া শয়তান সাহায্য করে না। যেমন শয়তানকে সিজদাহ দেওয়া, কুরআনকে ময়লায় ফেলা, মহররম বা শিশুর সাথে সহবাস এসব ছাড়া জ্বিন সাহায্য করে না। ইহুদিরা কাবালাহ, অফ্রিকায়, মিশর, ব্যবিলনে কালোজাদু নামে হাজারও বছর ধরে এগুলো করে আসছে। আল্লাহ বলেন- “তারা বরং সেগুলো অনুসরণ করত, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বের নামে মিথ্যা অপপ্রচার করত। সুলাইমান (আঃ) কোনদিন কুফরী করেনি, বরং শয়তানগুলো কুফরী করেছিল। ওরা মানুষকে জাদু শিখিয়েছিল। বাবিল (ব্যবিলিয়ন) শহরে পাঠানো হারুত ও মারুত যা দিয়ে পাঠানো হয়েছিলো তা শিখিয়েছিল, আমার পরীক্ষার জন্য, কাজেই তোমরা কুফরী করো না। এরপরও তারা শিখত, যার মাধ্যমে তারা পুরুষ ও তার স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটাত। অথচ তারা কোন ক্ষতি করতে পারে না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া।”(সুরা বাকারহ-১০২)। এই কাজগুলো যারা করে এসব খোনার, গণক কাফের হয়ে যায় কারণ কুফরী ছাড়া শয়তান সাহায্য করে না, আর আল্লাহর বদলে শয়তানের সাহায্য চাওয়া কুফরী। আবার এমনও হয় শয়তান জিন কোন বাসায় বা মানুষকে ক্ষতি করার চেষ্টা করে সে বাসায় বাইবেল বা কোন কুফরী গ্রন্হ বা কাজ করলে সে চলে যায়। ক্ষতি, ভয় দেখানো এজন্য বন্ধ করে যেন ভুক্তভোগী মনে করে- বাইবেল বা অমুক ধর্ম সত্য, এভাবে ঈমানহারা করে বা ভুল ধর্মে অটল রাখে। আবার চাইলে যেকোন সময় ফিরে আসতে পারে, পক্ষান্তরে কুরআন দ্বারা রুকইয়া করলে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হয়, তিনিই নিরাপত্তার ব্যবস্হা করেন। অনেক পীর, পুরোহিত, তান্ত্রিককে দেখবেন তার ভক্তরা সিজদাহ্ দিতে। মূলত তারা শয়তান/ জিন পূজারী, তাদের ভিতর থাকা কারিন জিন খুশি হয়। সে ভাবে তাকে সিজদাহ্ দেওয়া হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন- “তোমাদের কেউ যখন সালাত পড়ে, তখন সে যেন তার সামনে দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে না দেয়। যদি সে অস্বীকার করে তবে সে যেন তার সাথে লড়াই করে। কেননা তার সাথে তার সঙ্গী (কারিন) শয়তান রয়েছে।” (মুসলিম -৫০৬)। কারিন ওয়াওয়াসা দিবেই তবে কারিনকে দুর্বল করতে হলে রসুলের (সাঃ) সুন্নাহ অনুযায়ী চলতে হয়, পাপ করলে সে শক্তিশালী হয়। রসুল (সাঃ) বলেন- “মানুষের সাথে শয়তানের সম্পর্ক থাকে, ফিরিশতাদের সম্পর্ক থাকে। শয়তানের সম্পর্ক হল মন্দের দিকে প্ররোচিত করা ও সত্যকে মিথ্যা বানানো এবং ফেরেশতাদের সম্পর্ক হল সৎকাজের প্রতি অনুপ্রেরণা দেওয়া ও সত্যকে স্বীকার করা। আর যে ব্যক্তি এটা বুঝতে পারবে (সে ফেরেশতা দ্বারা উপকৃত হয়েছে) তাহলে তার উচিত এটাকে আল্লাহর বিশেষ দান মনে করা, আল্লাহর প্রশংসা করা। আর যে ব্যক্তির অবস্থা এর বিপরীত হবে, সে যেন শয়তানের অনিষ্ট হতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থণা করে। এরপর রসুল (সাঃ) এই আয়াত পড়েন- ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যতার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদের তার পক্ষ হতে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আল্লাহ প্রাচুর্য্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারাহ -২৬৮)” (তিরমিজি ২৯৮৮)।

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *