উম্মুল মোমেনীন আয়েশা (রাঃ) ফিকাহবিদদের মতে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ও সর্বশ্রেষ্ঠ নারীদের অন্তর্ভুক্ত। কুরআনের আয়াত ও হাদীস দ্বারা তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত।
আল্লাহ ও তার রসুল (সাঃ)-এর অগ্রাধিকার
ইমাম মুসলিম (রহ.) আয়েশা (রা) হতে বর্ণনা করেন যে, যখন আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা প্রদানের আয়াত নাযিল করলেন, তখন প্রথমে আয়েশা (রা) থেকে শুরু করলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে এমন একটি বিষয় সম্পর্কে বলছি, যে বিষয়ে তুমি তোমার মাতা-পিতার সাথে পরামর্শ না করে কোনো উত্তর দেবে না। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন।
“অর্থাৎ হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে বলে দাও যে, যদি তোমরা পার্থিব জীবন ও তার সৌন্দর্য চাও, তবে এসো আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং সম্মানের সাথে তোমাদেরকে বিদায় দেই।”
সূরা আহযাব: আয়াত-২৮
অতঃপর আয়েশা (রা) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এ ব্যাপারে আর কি পরামর্শ করব । আমি তো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকেই অগ্রাধিকার দেই।
বরকতময়
হিশাম তার পিতার সূত্রে আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। একদা আয়েশা (রা:) আসমা (রা)-এর গলার হার ধার নিলেন। অতঃপর তা হারিয়ে ফেললেন। তখন রাসূল (সা) আনাস (রা)-কে ঐ হার খোঁজার জন্য পাঠালেন। এমতাবস্থায় সালাতের সময় হয়ে গেলে তারা অযু ব্যতিতই সালাত আদায় করে নেন। অতঃপর যখন তারা রাসূল (সা)-এর নিকট ফিরে আসলেন, তখন ঐ বিষয়ে তাঁর নিকট জানতে চাইলে তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ হয়। যা পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ৪৩ নং আয়াত এবং সূরা মায়েদার ৬ নং আয়াত হিসেবে পরিচিত। তখন উসাইদ বিন হুযাইর আয়েশা (রা)-কে লক্ষ্য করে বললেন, আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ আপনাকে কেন্দ্র করে এমন একটি বিধান অবতীর্ণ করেছেন যা আর কাউকে কেন্দ্র করে তা করেননি। আর এতে আল্লাহ মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য বরকত নিযুক্ত করে দিয়েছেন।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, আবু বকর রাগান্বিত হয়ে আয়েশা (রা)-কে তিরস্কার করে বলছিলেন, তুমি সকল লোককে আটকে রেখেছ যে সময় তাদের সাথে কোনো পানি নেই। তখন তায়াম্মুম এর আয়াত অবতীর্ণ হয়। ইবনে শিহাব বলেন, আমাদের নিকট এরূপ বর্ণনা পৌঁছেছে যে, আবু বকর আয়েশা (রা)- কে বললেন, আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় তুমি বরকতময় ।
দানশীলতার অন্যান্য উদাহরণ
সহীহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় রয়েছে। আয়েশা (রা) বলেন, আমার নিকট একটি মিসকিন মহিলা আসল। আর তার সাথে ছিল দুটি বাচ্চা। এ সময় আমার নিকট খাওয়ার জন্য তিনটা খেজুর ছিল। তখন দুটা খেজুর মহিলাটির দুই বাচ্চাকে দিয়ে দিলাম এবং একটি নিজে খাওয়ার জন্য মুখে উঠালাম, তখন মহিলাটির দুই বাচ্চা সেটাও খেতে চাইল। ফলে আমি সে খেজুরটাকেও দুই ভাগে ভাগ করে ঐ দুই বাচ্চাকে দিয়ে দিলাম। এ ঘটনা দেখে মহিলাটি আমার ওপর আশ্চর্য হয়ে গেল।
অতঃপর যখন রাসূল (সা) আসলেন, তখন ঐ মহিলা ঘটনাটি রাসূল (সা)-এর কাছে উল্লেখ করল। তখন তিনি বলেন, এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা তাঁর ওপর জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেছেন ।
ওহী আসা
ইবনু আবী খাইসামা বর্ণনা করেন- রমিসা বিনতে হারেস হতে বর্ণিত, নবী (সা)-এর বিবিগণ উম্মু সালামা (রা)-কে বললেন, আপনি রাসূল (সা)-কে বলুন, মানুষেরা আয়েশা (রা)-এর পালার সময় বেশি বেশি হাদীয়া পাঠায়। রাসূল (সা) লোকদের যেন বলে দেন, সবার পালার সময় যেন হাদীয়া পাঠায়।
কেননা, আয়েশা (রা:) যেমন কল্যাণ পছন্দ করেন আমরাও নিশ্চয় তেমন কল্যাণ পছন্দ করি ।
উম্মু সালামা যখন রাসূল (সা)-এর নিকট এসে কথাগুলো বললেন, রাসূল (সা) তখন মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তার নিকট এসে জিজ্ঞাসা করল যে, রাসূল (সা) তখন কি বলেছেন? উম্মু সালামা (রা) বলেন, রাসূল (সা) মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তারা সকলে উম্মে সালামাকে বলল আবার যেয়ে বলো। উম্মে সালামা পুনরায় সেই কথাগুলো বললে রাসূল (সা) তাকে বললেন: হে উম্মে সালামা আয়েশার ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দিবে না।
আল্লাহ আয়েশার লেপের নিচে ছাড়া তোমাদের কারো নিকটেই ওহি অবতীর্ণ করেননি।।
রসুল (সাঃ) আয়েশার (রা) মর্যাদা ব্যাপারে অবগত ছিলেন তার মর্যাদাহানি হয় এমন কোন সিদ্ধান্ত নিতেন না। আয়েশা (রাঃ)-এর মর্যাদাক্ষুন্ন হয় এরূপ অপবাদ প্রিয় মুসলিম উম্মাহ সহ্য করবে না সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু অজ্ঞতাবশত এখন দ্বিমুখী নীতি চলছে।
একদিকে রসুল (সাঃ) ও আয়েশা (রাঃ)-এর অপবাদকারীর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে, বয়কটের আহ্বান চলছে অথচ নিজ দেশে রসুল, সাহাবী, উম্মুল মুমিনীনদের অপবাদদাতার ব্যাপারে নিরাপত্তা ও আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।
যেসব কারণে আজ আন্দোলনরত মুসলিমদের প্রায় একই আকীদা অধিকাংশ শিয়াদের। শিয়া গোষ্ঠী বলে থাকে যে “কোরআন সম্পূর্ণ দোষত্রুটি মুক্ত নয়! কোরআনকে যদি কেউ কামেল বা পূর্ণাঙ্গ মনে করে তবে সে তাওহীদের বিপরীত!” কত বড় ভুল ও মিথ্যা কথা!
শিয়াদের সবচাইতে পবিত্র গ্রন্থ উসুলে কাফীরের ঈমান অধ্যায়ে উল্লেখ করেছে মা আয়িশাহ (রাঃ) নাকি যিনা করেছিলেন। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালেক)। মা আয়িশাহ (রাঃ) যে নির্দোষ ও সচ্চরিত্রের ছিলেন, এই সার্টিফিকেট স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন সুরা নূরে। কোরআনের স্পষ্ট আয়াতের যে বিরোধিতা করে সে সরাসরি কাফের হয়ে যায়। এছাড়াও এই শিয়া মুনাফেকরা বলে থাকে যে রাসুলের (সাল্লালাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) মৃত্যুর পরে মাত্র ৩ জন সাহাবী ছাড়া বাকি সব সাহাবীরা কাফের হয়ে গিয়েছিলেন! (নাউযুবিল্লাহ)।
এসব কথার রেফারেন্স শিয়াদের সবচেয়ে পবিত্র গ্রন্থ ‘উসুলে কাফীরে পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন ধরে কুয়েতী জন্মগ্রহণকারী শিয়া আলেম Yasser Al Habib – উমর (রা), আয়েশা (রা) কে সরাসরি কাফের বলে প্রচার করছে এবং প্রকাশ্যে অভিশাপ দিচ্ছে সহাবীদের।
Obscenity the other side of Aisha,
How Was Islam Hijacked? নামে দুটো বই লিখেন যেখানে উমর (রাঃ) ও আয়েশা (রাঃ)-কে কাফেরসহ চরিত্রের উপর বহু অপবাদ দেওয়া হয়। কিন্তু ক্ষমতাসীন আরব নেতাগণ চুপ ছিল। এরপর সম্প্রতি তারই মদদে ২ জুন ২০২২ সালে Lady of heaven নামে ফাতেমার (রাঃ) জীবনী কেন্দ্রিক মুভি মুক্তি পায়।
যেখানে রসুলের (সঃ) চরিত্রের মুখছব্বি ও উমর (রাঃ) ও আয়েশার (রাঃ) চরিত্রকে খুবই খারাপভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে। UK মুসলিমদের ব্যাপাক আন্দোলনের ফলে মুভি আপাতত UK তে বন্ধ করা হয়েছে!!?
এখন একটু ভাবুন – এসব ভ্রান্ত শিয়াদের ব্যাপারে আরব নেতাগুলো নিরব কেন আর ভারতদের ব্যাপারে সরব কেন!!?
আসলে প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মুসলিমরা রসুলকে (সাঃ) ভালোবেসে আন্দোলন, প্রতিবাদ, সংগ্রাম করে কিন্তু রাজনীতিবিদ, শাসক ও নেতারা নিজ প্রয়োজনে ওদের আবেগকে ব্যবহার করে।
আমাদের আগে মূল শত্রু চিনতে হবে। মূল শয়তানকে ভুলে ছোট শয়তানদের দমন করা যাবে না।
ভিন্ন ধর্ম্বালম্বীরা ইসলামের সূক্ষ্ম তথ্যই জানে না- এসব ফেতনাবাজরা বই, মুভিতে কুরআন সুন্নাহ ভুল ব্যাখা করে তাদের জানিয়ে দেয়।
ভিডিওগুলোগুলো দেখুন