আলী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন :
لا تَكْذِبُوا عَلَيَّ فَإِنَّهُ مَنْ كَذَبَ [يَكْذِبْ] عَلَيَّ فَلْيَلِجِ النَّارَ.
‘‘তোমরা আমার নামে মিথ্যা বলবে না; কারণ যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলবে তাকে জাহান্নামে যেতে হবে।’’ (বুখারী, আস-সহীহ ১/৫২; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ১/১৯৯, মুসলিম, আস-সহীহ ১/৯)
যুবাইর ইবনুল আউয়াম (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন :
مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
‘‘যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলবে তার আবাসস্থল জাহান্নাম।’’ (বুখারী, আস-সহীহ ১/৫২)
সালামাহ ইবনুল আকওয়া (রা) বলেন: রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন :
مَنْ يَقُلْ عَلَىَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
‘‘আমি যা বলি নি তা যে আমার নামে বলবে তার আবাসস্থল জাহান্নাম।’’ (বুখারী, আস-সহীহ ১/৫২)
এভাবেই রাসুলুল্লাহ ﷺ উম্মাতকে তাঁর নামে মিথ্যা বলার বিষয়ে সতর্ক করেছেন এবং বহু সাহাবী এ অর্থে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর কোনো হাদীস এত বেশি সংখ্যক সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়নি। (নাবাবী, শারহু সাহীহ মুসলিম ১/৬৮, ইবনুল জাওযী, আল-মাউযূ‘আত ২৮-৫৬)
আসুন আমাদের বিরুদ্ধে হাদীসের ভুল ব্যাখার অভিযোগগুলো দেখি আর বাস্তবতা দেখি-
সুরা আহকাফের আয়াত, “যে ব্যক্তি তার মাতা-পিতাকে বলে, ‘তোমাদের জন্য আফসোস’! তোমরা কি আমাকে এই প্রতিশ্রুতি দাও যে, আমি পুনরুত্থিত হব’ অথচ আমার পূর্বে অনেক প্রজন্ম গত হয়ে গেছে’? আর তারা দু’জন আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলে, ‘দুর্ভোগ তোমার জন্য! তুমি ঈমান আন। নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য’। তখন সে বলে, ‘এটা কেবল অতীতকালের কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছু নয়’। (সূরা আহকাফ: ১৭)
এই আয়াতের ব্যাখায় বুখারীতে এসেছে –
মূল আরবির সাথে বাংলার এমনকি ইংরেজিরও মিল নেই। আয়েশা (রা) পর্দার আড়াল হতে বক্তব্য দিয়েছিল তা বাদ দিয়ে বাংলা করতে হয়েছে যেন মারওয়ানদের দোষ ঢাকা পড়ে, পক্ষান্তরে অপবাদ পড়ল আবদুর রহমান ইবনে আবুবকরের (রা) উপর।
অথচ হাদীসের মূল বাংলা করলে কি দাড়ায় যা তাফসীর ইবনে কাসীরসহ অন্যরা করেছেন।
ইউসুফ ইবনু মাহাক থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, মারওয়ান ছিলেন হিজাযের গভর্নর। তাকে নিয়োগ করেছিলেন মু’আবিয়াহ (রাঃ)। তিনি একদা খুতবা দিলেন এবং তাতে ইয়াযীদ ইবনু মুআবিয়ার কথা বারবার বলতে লাগলেন, যেন তাঁর পিতার মৃত্যুর পর তার বায়’আত গ্রহণ করা হয়। এ সময় তাকে ‘আবদুর রহমান ইবনু আবুবকর (রা:)কিছু কথা বললেন। মারওয়ান বললেন, তাঁকে পাকড়াও কর। তৎক্ষণাৎ তিনি আয়িশাহ (রাঃ)-এর ঘরে চলে গেলেন। তারা তাঁকে ধরতে পারল না।
তারপর মারওয়ান বললেন, এ তো সেই লোক যার সম্বন্ধে আল্লাহ্ অবতীর্ণ করেছেন, “আর এমন লোক আছে যে, মাতাপিতাকে বলে, তোমাদের জন্য আফসোস! তোমরা কি আমাকে এ ভয় দেখাতে চাও যে, আমি পুনরুত্থিত হব যদিও আমার পূর্বে বহু পুরুষ গত হয়েছে, তখন তার মাতাপিতা আল্লাহ্র নিকট ফরিয়াদ করে বলে, দুর্ভোগ তোমার জন্য। বিশ্বাস স্থাপন কর, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য। কিন্তু সে বলে এ তো অতীতকালের উপকথা ব্যতীত কিছুই নয়।” (একথা শুনে উম্মুল মুমিনীন “আয়েশা (রা:) পর্দার আড়াল থেকে “আল্লাহ আমাদের ব্যাপারে কুরআনে কিছুই নাযিল করেন নি, কেবলমাত্র আমার নির্দোষিতা ছাড়া”)। (সহিহ বুখারী)
فَقَالَتْ عَائِشَةُ مِنْ وَرَاءِ الْحِجَابِ مَا أَنْزَلَ اللهُ فِيْنَا شَيْئًا مِنَ الْقُرْآنِ إِلَّا أَنَّ اللهَ أَنْزَلَ عُذْرِي
ইসলামিক ফাউণ্ডেশন সহ অনেক প্রকাশনীর বাংলায় এই অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। যার অর্থ হল-
একথা শুনে উম্মুল মুমিনীন “আয়েশা (রা:) পর্দার আড়াল থেকে “আল্লাহ আমাদের ব্যাপারে কুরআনে কিছুই নাযিল করেন নি, কেবলমাত্র আমার নির্দোষিতা ছাড়া”।
ইবনে কাসীরসহ পূর্ববর্তী আলেমদের তাফসীর দেখি-
(হযরত মুআবিয়া রাঃ-কে) ইয়াযীদের ব্যাপারে এক সুন্দর মত পোষণ করিয়েছিলেন। যদি তিনি তাঁকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে গিয়ে থাকেন তবে তো হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত উমার (রাঃ)- কে তাঁর পরবর্তী খলীফা মনোনীত করে গিয়েছিলেন। তাঁর এ কথা শুনে হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর (রাঃ) তাঁকে বলেনঃ “আপনি কি তাহলে সম্রাট হিরাক্লিয়াস ও খৃষ্টানদের নিয়মনীতির উপর আমল করতে চান? আল্লাহর কসম!
প্রথম খলীফা (হযরত আবু বকর রাঃ) না তো নিজের সন্তানদের কাউকেও খলীফা হিসেবে মনোনীত করেছিলেন, না নিজের আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কাউকে মনোনীত করেছিলেন। আর হযরত মুআবিয়া (রাঃ) যে এটা করেছিলেন তা শুধু নিজের মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং নিজের সন্তানের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে।” তখন মারওয়ান তাকে বলেনঃ “তুমি কি ঐ ব্যক্তি নও যে, তুমি মাতা-পিতাকে “أَفْ لَّكُمَا” বলেছিলে?” উত্তরে আবদুর রহমান (রাঃ) তাঁকে বলেনঃ “আপনি কি একজন অভিশপ্ত ব্যক্তির পুত্র নন? আপনার পিতার উপর তো রাসূলুল্লাহ (সঃ) অভিশাপ দিয়েছিলেন।
হযরত আয়েশা (রাঃ) এসব কথা শুনে মারওয়ানকে বলেনঃ “হে মারওয়ান! আপনি আবদুর রহমান (রাঃ) সম্পর্কে যে কথা বললেন তা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা কথা। এ আয়াতটি আবদুর রহমান (রাঃ) সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়নি, বরং অমুকের পুত্র অমুকের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।” অতঃপর মারওয়ান তাড়াতাড়ি মিম্বর হতে নেমে হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বাড়ীর দরজায় এসে কিছুক্ষণ তাঁর সাথে কথা-বার্তা বলে ফিরে আসেন।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
সহীহ বুখারীতেও এ হাদীসটি অন্য সনদে ও অন্য শব্দে এসেছে। তাতে এও রয়েছে যে, হযরত মুআবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান (রাঃ)-এর পক্ষ হতে মারওয়ান হিজাযের শাসনকর্তা ছিলেন। তাতে এও আছে যে, মারওয়ান তাঁর সৈন্যদেরকে হযরত আবদুর রহমান (রাঃ)-কে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি দৌড়ে গিয়ে তার বোন হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর গৃহে প্রবেশ করেন। ফলে, তারা তাকে ধরতে পারেনি। ঐ রিওয়াইয়াতে একথাও রয়েছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) পর্দার আড়াল হতে বলেনঃ “আমার পবিত্রতা ঘোষণা সম্বলিত আয়াত ছাড়া আল্লাহ তা’আলা আমাদের সম্পর্কে কুরআন কারিমে আর কিছুই অবতীর্ণ করেননি।”
সুনানে নাসাঈর রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, মারওয়ানের এই ভাষণের উদ্দেশ্য ছিল ইয়াযীদের পক্ষ হতে বায়আত গ্রহণ করা। হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর উক্তিতে এটাও রয়েছেঃ “মারওয়ান তার উক্তিতে মিথ্যাবাদী। যার ব্যাপারে এ আয়াত অবতীর্ণ হয় তার নাম আমার খুব জানা আছে, কিন্তু এখন আমি তার নাম প্রকাশ করতে চাই না। হ্যা, তবে মারওয়ানের পিতাকে রাসূলুল্লাহ (সা:) মালউন বা অভিশপ্ত বলেছেন। আর মারওয়ান হলো তার ঔরষজাত সন্তান। সুতরাং তার উপরও লানত বাকী রয়েছে।” (ইবনে কাসীর সুরা আহকাফের ব্যাখায়)
এবার আসি যারা কথায় কথায় আমাদের ইহুদি, খ্রিস্টানদের দালাল, কেউ আবার শিয়া, কেউ সাহাবীদের অপবাদকারী বলেন। অথচ বহু হাদীসে আহলে বায়াতের নাম হতে (আ:) বাদ দেওয়া হয়েছে, বদলে (রা:) করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ওরা নিরব। অথচ ইয়াযিদের সাথে (রা) লাগিয়েছে মূল আরবিতে যা নেই।
এখানে (উপরের ছবিতে খেয়াল করুন) ফাতেমা আলাইহিমাস সালাম আরবিতে ছিল কিন্তু বাংলাতে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এখানে উম্মে কুলসুম (আ) হতে আলাইসাল্লাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কিছু হাদীসে আলী (আ) হাসান (আ), ও হুসায়ন (আ) এর বাংলায় (রা) করা হয়েছে।
অন্যদিকে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার নামের সাথে (রা) লাগানো হয়েছে যা আরবিতে নেই।
(ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১১৪,নফল সালাত অধ্যায়- তাওহীদ প্রকাশনী,আধুনিক প্রকাশনী হাদীসের শেষাংশ)
এখন যারা সামান্য মাসয়ালার একেতেলাফের কারনে একে অপরকে কাফের, মুনাফেক বলে, আশেকে রসুল বা রসুলের (সা:) সহীহ হাদীস মেনে চলার দাবি করে অন্যদের রসুলের (সা:) দুশমন বলেন অথচ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোয় নিরব কেন!?