হালালকে হারামে পরিণত করা

ভারতবর্ষে মাজারের নামে বহু হালালকৃত প্রাণী হারাম বানানো হচ্ছে। অমুক মাজারের মাছ ধরা, কবুতর খাওয়া নিষেধ, অমুক গাছ কাটা নিষেধ। অথচ এগুলো আল্লাহ হালাল বা বৈধ করেছেন। আল্লাহর বদলে এসব পীর, দরবেশদের হালাল ও হারামকে মেনে চলে তারা এসব পীর, দরবেশদেরই রব মানছে। আল্লাহ বলেন –

“বাহীরাহ, সায়েবাহ, ওহীলাহ ও হামী আল্লাহ প্রবর্তণ করেননি; কিন্তু কাফেররা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে এবং তাদের অধিকাংশই বুঝে না।” (সূরা মায়েদা, ১০৩)।

আমরা সহীহ বুখারী থেকে সায়ীদ ইবন মূসাইয়্যেবের ব্যাখ্যা উদ্ধৃত করছি- ‘বাহীরাহ’ এমন জন্তুকে বলা হয় যার দুধ প্রতিমার নামে উৎসর্গ করা হত এবং কেউ নিজের কাজে ব্যবহার করত না। ‘সায়েবাহ’ ঐ জন্তু যাকে প্রতিমার নামে আমাদের দেশের ষাড়ের মত ছেড়ে দেয়া হত। ‘হামী’ পুরুষ উট, যে বিশেষ সংখ্যক রমন ক্রিয়া সমাপ্ত করে। এরূপ উটকেও প্রতিমার নামে ছেড়ে দেয়া হত। ‘ওছীলাহ’ যে উষ্ট্রী উপর্যুপরি মাদী বাচ্ছা প্রসব করে। জাহেলিয়াত যুগে এরূপ উষ্ট্রীকেও প্রতিমার নামে ছেড়ে দেয়া হত। [বুখারী ৪৬২৩; অনুরূপ মুসলিম: ২৮৫৬]। যারা এরূপ করে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি আমর ইবন আমের আল-খুজায়ীকে জাহান্নামে তার নিজের অন্ত্র নিয়ে টানাটানি করতে দেখলাম। কেননা, সে প্রথম সায়েবাহ ছেড়েছিল। [বুখারীঃ ৪৬২৩-৪৬২৪, মুসলিমঃ ২৮৫৬, আহমাদঃ ২/২৭৫]।

তাহলে যারা বর্তমানে মাজারের নামে হালালকৃত পাখি, মাছ, পশু খাওয়াকে হারামে পরিণত করেছে তাদের শাস্তি হবে অনুরূপ। যারা তা খুশিমনে মেনে নিচ্ছে তারা আল্লাহর বদলে ঐসব পীর আউলিয়াকে রবে পরিণত করেছে। আল্লাহ বলেন,

“তারা আল্লাহ্ ব্যতীত তাদের পণ্ডিত ও সংসার-বিরাগিদেরকে তাদের রবরূপে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়াম-পুত্র মসীহকেও। অথচ এক ইলাহের ইবাদাত করার জন্যই তারা আদিষ্ট হয়েছিল। তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে তা থেকে তিনি কত না পবিত্ৰ।” (সূরা তওবা, ৩১)।

এ আয়াতে বলা হয় যে, ইয়াহুদী-নাসারাগণ তাদের আলেম ও যাজক শ্রেণীকে আল্লাহর পরিবর্তে রব ও মাবুদ সাব্যস্ত করে রেখেছে। অনুরূপ ঈসা আলাইহিস সালামকেও মা’বুদ মনে করে। তাকে আল্লাহর পুত্ৰ মনে করায় তাকে মা’বুদ সাব্যস্ত করার দোষে যে দোষী করা হয়, তার কারণ হল, তারা পরিষ্কার ভাষায় ওদের মা’বুদ না বললেও পূর্ণ আনুগত্যের যে হক বান্দার প্রতি আল্লাহর রয়েছে, তাকে তারা যাজক শ্রেণীর জন্যে উৎসর্গ রাখে। অর্থাৎ তারা যাজক শ্রেণীর আনুগত্য করে চলে; যতই তা আল্লাহর নির্দেশের বিরোধী হোক না কেন? বলাবাহুল্য পাদ্রী ও পুরোহিতগণের আল্লাহ বিরোধী উক্তি ও আমলের আনুগত্য করা তাদেরকে মা’বুদ সাব্যস্ত করার নামান্তর, আর এটি হল প্রকাশ্য কুফরী ও শির্ক।

আদী ইবন হাতেম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি গলায় একটি সোনার ক্রুশ নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলাম। তখন তিনি বললেনঃ হে আদী, তোমার গলা থেকে এ মূর্তিটি সরিয়ে ফেল এবং তাকে সূরা আত-তাওবাহর এ আয়াতটি তেলাওয়াত করতে শুনলাম- “তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের পণ্ডিত ও সংসার-বিরাগীদেরকে তাদের পালনকর্তারূপে গ্রহণ করেছে।” আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল, আমরা তো তাদের ইবাদত করি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারা তোমাদের জন্য কোন কিছু হালাল করলে তোমরা সেটাকে হালাল মনে কর আর কোন কিছুকে হারাম করলে তোমরা সেটাকে হারাম হিসাবে গ্রহণ কর। [তিরমিযীঃ ৩০৯৫]।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *