অন্যান্য নবী রাসূলগণকে যেরূপ মু’জিযা প্রদান করা হয়েছিল, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কেও অনুরূপভাবে মু’জিযা দান করা হয়েছে। কিন্তু তাঁকে এমন কতিপয় মু’জিযা দেয়া হয়েছে, যা অতীব মহান, তেমনটি আর কাউকেই দেয়া হয়নি। এগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মু’জিযা কুরআন মজীদ, এর মধ্যে কোন প্রকার পরিবর্তন না তাঁর জীবদ্দশায় হয়েছে না তাঁর পরে হতে পারে। মহাজ্ঞানী আল্লাহর পক্ষ থেকে তা অবতীর্ণ।
কুরআন একটা স্থায়ী মু’জিযা, তার অকাট্য হওয়া কারও কাছে অবিদিত নয়, অথচ কোনটি এর সমতুল্য হতে পারে না। জিন ও মানব জাতিকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে যে, পারলে তারা এর অনুরূপ একটি কুরআন বা দশটি সূরা কিংবা একটি মাত্র সূরা তৈরী করুক, কিন্তু উভয় জাতিই এ চ্যালেঞ্জের মুকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। মু’জিযার আলোচনায় ইতিপূর্বে এ বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বুখারী ও মুসলিমে লায়ছ ইব্ন সা’দ ….. আবূ হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন: পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবীকেই কোন না কোন মু’জিযা দান করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ সেভাবে তার উপর ঈমান আনেনি।
আর আমাকে যে মু’জিযা দেয়া হয়েছে তা হল আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ওহী। আমি আশা রাখি কিয়ামতের দিনে আমার অনুসারীর সংখ্যা বেশি হবে। অর্থাৎ পূর্বের নবীগণকে যে সব মু’জিযা দেয়া হয়েছিল তাতে কেবল জ্ঞানী ও দূরদর্শী ব্যক্তিরাই ঈমান আনত। হিংসুক ও পাপিষ্ঠরা ঈমান আনত না।
পক্ষান্তরে আমাকে যে মু’জিযা অর্থাৎ কুরআন দেয়া হয়েছে তা অতি মহান ও অতি বড়। কারণ এটা সর্বযুগে থাকবে, কখনও অপসৃত হবে না। অন্যান্য নবীদের মু’জিযা এরূপ নয়। তাঁদের যুগ শেষ হয়ে গেছে, কখনও আর তা প্রত্যক্ষ করা যাবে না। বরং অন্যের মাধ্যমে বহু জনের বর্ণনা পরম্পরায় বা একক বর্ণনার মাধ্যমে কেবল সে সম্পর্কে জানা যায়।
অথচ পক্ষান্তরে কুরআন শরীফ আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত মু’জিযা, যা অব্যাহতভাবে চলছে- যার কান আছে সে শুনতে পায় এবং যার চোখ আছে সে দেখতে পায়।
বহু মনীষী এ মত ব্যক্ত করেছেন যে, পূর্ববর্তী নবীগণের যাঁর যে মু’জিযা ছিল তা শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর মু’জিযা বলেও গণ্য হবে। কারণ, তাঁরা প্রত্যেকেই শেষ নবীর শুভাগমনের সুসংবাদ দিয়েছেন এবং তিনি আসলে তাঁরই অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ্ বলেনঃ
“অর্থাৎ স্মরণ কর, যখন আল্লাহ্ নবীদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত যা কিছু দিয়েছি তার শপথ, আর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থকরূপে যখন একজন রাসূল আসবে তখন নিশ্চয় তোমরা তাকে বিশ্বাস করবে এবং তাকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি স্বীকার করলে এবং এ সম্পর্কে আমার অঙ্গীকার কি গ্রহণ করলে? তারা বললো, আমরা স্বীকার করলাম। তিনি বললেন, তবে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম। এরপর যারা মুখ ফিরিয়ে নেবে তারাই সত্যপথ ত্যাগী।”
আলে ইমরানঃ ৮১-৮২
বুখারী ও অন্যান্য হাদীসবেত্তা ইব্ন আব্বাস (রা)-এর উক্তি বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ্ দুনিয়ায় প্রেরিত প্রত্যেক নবী থেকে এই শপথ ও অঙ্গীকার নিয়েছেন যে, যদি মুহাম্মদের আবির্ভাব হয় আর ঐ নবী জীবিত থাকে তবে অবশ্যই তিনি তাঁর আনুগত্য করবেন ও তাঁকে সাহায্য করবেন।
বহু সংখ্যক আলিমের বক্তব্য এই যে, আওলিয়াদের কারামত প্রকৃতপক্ষে রসুলের (সাঃ) মোজেজা আল কুরআন আর তার সুন্নাহ অনুসরণের কারণে হয়।
কিন্তু আমাদের দেশে একদল আলেম শুধু কারামত নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে আর রসুলের (সাঃ) মোজেজা আল কুরআন ও সুন্নাহ হতে জাতিকে অজ্ঞ রাখছে। ফলে রসুলকে (সাঃ) ভালোবেসে হাজারও ছাত্রছাত্রীসহ মানুষ আন্দোলন ঠিকই করে, জেহাদ চায় বলে স্লোগান দেয়। কিন্তু রসুলের (সাঃ) ভালোবাসার অর্থ আর জেহাদ কি, কেন ফরজ হয় তাই জানে না!?
আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে রসুলের (সাঃ) মত করে আর রসুল (সাঃ) কে ভালোবাসতে হবে সাহাবিদের মত তার সুন্নাহ অনুসরণ করে। আর জেহাদ হয় জালেম, জুলুমের বিরুদ্ধে।
কুরআনে বর্ণিত –
“আর স্মরণ করুন, যখন লুকমান উপদেশ দিতে গিয়ে তার পুত্ৰকে বলেছিল, হে আমার প্রিয় বৎস! আল্লাহর সাথে কোন শির্ক করো না। নিশ্চয় শির্ক বড় যুলুম।”
সুরা লোকমানঃ ১৩
রোম, পারস্যের সমাট্ররা যে শিরকী ধর্ম মানতো তা জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল তাদের হতে কর নিয়ে। তাই মুসলিমরা তাদের দাওয়াত দিয়ে পরে জোহাদ করত। এখন দেখা যায়, আমাদের দেশের মুসলিমরা বুঝেছে জেহাদ মানে শুধু ভিনদেশী শত্রুর বিরুদ্ধে (ভারত, পাক, ইসরায়েল)। তাই আন্দোলনকারীর অনেকেই আবার মঙ্গলশোভা, শহীদমিনারের বিরোধিতাকারীকে দেশদ্রোহী ভাবে!! তারাই আবার এসব শিরকী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।
মন্দিরের পূজিত মূর্তিকে হারাম মানলেও বিভিন্ন চেতনার নামে নির্মিত ভাস্কর্য নামক মূর্তির বিরুদ্ধে বললে উগ্রবাদী ভাবে। রসুলের (সাঃ) সুন্নাহ না জানা লাখো মুসলিমের চেয়ে সুন্নাহ মানা হাজার মুসলিম অনেক ভালো। মুসলিমদের বিজয়ের জন্য সংখ্যা নয় বরং সহীহ আকীদাহ জানা অল্পকিছু অনুসারীই যথেষ্ট।
রসুলের (সাঃ) যুগেই রসুলকে (সাঃ) গালি দেওয়া হয়েছিল তারা কি আন্দোলন ও টকশো করেছিলেন!? নাকি রসুলের (সাঃ) নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছেন। আর বিচার চাইছেন কার কাছে!? কার আইনে!? জালেমের কাছে!? জাহেলিয়াতের আইনে!?
আল্লাহ বলেন-
“তবে কি তারা প্রাগ-ইসলামী (জাহেলী) যুগের বিচার-ব্যবস্থা পেতে চায়? খাঁটি বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিচারে আল্লাহ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতর?”
সুরা মায়েদাহঃ ৫০