মুহাম্মদ, হাসান ও হুসাইন এর নামের ছড়াছড়ি কি শিয়াদের কারনে হয়েছে?

এই কথাটি আমাদের সমাজে বহু প্রচলিত।

আলী (রাঃ) বলেন, যখন হাসানের জন্ম হলো, তখন তার নাম রাখলাম হামযা। যখন হুসাইন ভূমিষ্ঠ হলো তখন তার নাম রাখলাম জাফর। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকলেন এবং বললেনঃ এই দু’জনের নাম বদলে দেয়ার জন্য আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে। আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই এ বিষয়ে ভালো জানেন। অতঃপর তিনি তাদের নাম রাখলেন হাসান ও হুসাইন। (মুসনাদে আহমেদ)

যাদের আকীকা, নামকরন, আদর ও স্নেহে বেড়ে উঠা স্বয়ং রসুলের (সা:) সংস্পর্শে তাদের নামের চেয়ে উত্তম নাম ও উত্তম চরিত্র কি বা হতে পারে!? অনেকের দাবি শিয়া ও অন্যান্য ফেতনার কারনে মুহাম্মদ, হাসান, হুসাইন নামগুলো এই উপমহাদেশে ছড়িয়েছে আরবে এসকল নাম কম রাখা হতো!

আসুন একটু যাচাই করি

আবু বকরের (রা:) ছেলের নাম ছিল মুহাম্মদ (রা:), আলীর (রা:) ছেলের নাম ছিল হাসান (রা:), হুসাইন (রা:), মুহাম্মদ। তালহার (রা:) সন্তানের নাম ছিল মুহাম্মদ, সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাসের (রা:) সন্তানের নাম ছিল মুহাম্মদ, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা:) বংশধরের নাম ছিল মুহাম্মদ। জাফর বিন আবু তালেবের (রা:) সন্তান ও নাতির নাম ছিল মুহাম্মদ। ওসামা ইবনে যায়েদের (রা:) সন্তানের নাম ছিল মুহাম্মদ, মুহাম্মদ ইবনে মাসালামা (রা:) সাহাবী ছিল।

এভাবে সাহাবী, তাবেয়ীদের বহুজনকে পাওয়া যাবে যাদের নাম ছিল মুহাম্মদ, আলী, হাসান, হুসাইন। ঈমাম মালেকের (রহ.) সন্তানের নাম ছিল মুহাম্মদ, ফাতেমা। ঈমাম শাফীর (রহ:) সন্তানের নাম ছিল মুহাম্মদ, ফাতেমা। ঈমাম মুসলিম, ঈমাম বাইহাকিসহ বহুজনের সন্তানের নাম মুহাম্মদ ও আহলে বায়াতের নামের সাথে মিল ছিল!!

তাহলে কি তারা শিয়া ছিলেন? নাউজুবিল্লাহ!

তাহলে এসব নামের বিরোধিতা কেন আসলো! কারন রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে আহলে বায়াত বিদ্রোহ করেছিল আর তারাই এসব নামের বিরুদ্ধে গুজব ও বিরোধিতা ছড়িয়েছে। হুসাইন (রা:) রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। তারপরে তার বংশধর ঈমাম যায়েদ ও হাসানের (রা:) বংশধর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (রহ:) বিদ্রোহ করে, ঈমাম আবু হানিফা, ঈমাম মালেক তাদের সমর্থন ও সাহায্য করে। ফলে আহলে বায়াতদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, তাদের লাশ দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়। ঈমাম মালেক, ঈমাম আবু হানিফার (রহ.) উপর জুলুম, নির্যাতন করা হয়। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া – ৯, ১০, ১১খন্ড)

আব্বাসীদের বিরুদ্ধে যিনি বিদ্রোহ করেন মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ যাকে নফসে জাকিয়া বলা হতো। আবার খলিফা মাহাদীর (হাফি.) নাম হবে মুহাম্মদ। আজকে যারা এসব নামের বিরুদ্ধে বলে আল্লাহ সহায় হোক তখন না জানি মাহাদীর (হাফি) বিরুদ্ধে না অবস্থান নেয়! আলী (রা:), হাসান, হুসাইন (রা:) অধিকাংশ বংশধর অর্থাৎ আহলে বায়াতের নাম -মুহাম্মদ, আলী, হাসান, হুসাইন রাখা হতো ও হয়।

অথচ মসজিদ, মাদ্রাসা, শহরের নাম বহু দেবদেবীর নামে এই ব্যাপারে নিরব। এসব বললে উগ্রবাদী বলা হয়। মসজিদ, মাদ্রাসার নাম লক্ষীপুর, দুর্গাপুর, নারায়নের নামে। আর নামগুলো মসজিদ, মাদ্রাসার দেওয়ালে স্থান পায়। আমরা আজ পর্যন্ত মসজিদ হতে শিরককে মুক্ত করার সাহস অর্জন করতে পারি নি। কিভাবে রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবো?

দূর্গা ও লক্ষী শিরকী দেবীর নাম আর পুর মানে শহর। আজ কোন মুসলিম তার সন্তানের নাম যদি দূর্গা, লক্ষী, নারায়ন রাখে তাকে কাফের ফাতওয়া দেওয়ার মানুষের অভাব হবে না। অথচ আল্লাহর পবিত্র ঘর মসজিদ ও দ্বীন শিক্ষার স্থান মাদ্রাসার পাশে এসব নাম স্থান পায় তখন সবাই চুপ। রসুল (সাঃ) ইয়াসরিবের নাম বদলে রাখেন মদীনা তাইয়্যেবা বা পবিত্র স্হান। আমরা মসজিদ হতে শিরকী নাম বাতিল করতে ব্যর্থ। এখন অনেকে বলবে এগুলো তেমন সমস্যা না! আচ্ছা কোন মুসলিমের নামের আগে মুহাম্মদ রাখা বড় সমস্যা, না এগুলো বড় সমস্যা? আজও মসজিদের দেওয়ালে শিরকী নাম বুঝার তৌফিক হয়নি।

আহমাদ ইবন মানী’ (রহঃ) ….. সাফীনা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের খিলাফত হবে ত্রিশ বছর। এরপর হবে বাদশাহী। সহীহ, সহিহাহ ৪৫৯,

নু’মান বিন বশীর (র) আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর গোপন বিষয়ের জ্ঞানধারণকারী হুযাইফা (র) হতে বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শাসকদের সম্পর্কে হাদিস মুখস্থ রেখেছি। তিনি বলেন: “নবুওয়্যাত তোমাদের মাঝে থাকবে, যতদিন মহান আল্লাহ চান, এরপর তিনি তা উঠিয়ে নেবেন যখন তিনি চান। অতপর, নবুওয়্যাতের আদলে খিলাফাহ আসবে এবং তা বিদ্যমান থাকবে যতদিন তিনি চান এবং তিনি উঠিয়ে নেবেন যখন তিনি চান। অত:পর আসবে উত্তরাধিকার সূত্রে রাজতন্ত্র এবং তা থাকবে যতদিন মহান আল্লাহ চান এবং তিনি তা উঠিয়ে নেবেন যখন চান। অতঃপর আসবে চরম জবরদস্তির শাসন, যা থাকবে যতদিন মহান আল্লাহ চান এবং যখন তিনি চান, তা উঠিয়ে নেবেন। অতঃপর আসবে নবুওয়্যাতের আদলে খিলাফাহ। এর পর তিনি চুপ হয়ে গেলেন। মুসনাদে আহমাদ – ৪ খন্ড

আল হাকিমের মুস্তাদরাকুস সাহীহাইন গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত হাদীসটি হুবহু নিচে উল্লেখ করা হলো:

আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন: আমরা মহানবী (সা.)-এর সমীপে উপস্থিত হলাম। তিনি অত্যন্ত হাস্যোজ্জ্বল মুখে ও আনন্দের সাথে আমাদের বরণ করলেন। আমরা তাঁর কাছে যা জিজ্ঞাসা করলাম সে ব্যাপারে তিনি উত্তরও দিলেন। আর আমরা নীরব হলে তিনি কথা বলে যাচ্ছিলেন। আর ঐ সময় একদল হাশিম বংশীয় যুবক সেখান দিয়ে যাচ্ছিল যাদের মধ্যে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনও ছিলেন।

মহানবী (সা.)-এর দৃষ্টি তাদের ওপর পড়লে তাঁর দু’নয়ন অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। আমরা তখন বললাম হে রাসূলাল্লাহ্! আমরা প্রায়ই অপনার মুখমণ্ডলে এমন কিছু দেখতে পাই যা আমাদেরকে কষ্ট দেয়।

মহানবী (সা.) বললেন: আমরা এমন এক পরিবার, মহান আল্লাহ্ আমাদের জন্য পার্থিব জগতের ওপর আখেরাতকে মনোনীত করেছেন। শীঘ্রই আমার পরে আমার আহলে বাইত শহর-নগর, অঞ্চল ও দেশসমূহে শরণার্থীর মতো ছড়িয়ে পড়বে।

আর এ অবস্থা ঐ সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে যখন প্রাচ্য থেকে কালো পতাকাসমূহ উত্থিত হবে ও পতপত করে উড়তে থাকবে। কালো পতাকাবাহীরা তাদের ন্যায্য অধিকার দাবি করবে। তবে তাদের অধিকারসমূহ প্রদান করা হবে না। এজন্য তারা তাদের অধিকারসমূহ থেকে হাত গুটিয়ে নেবে না। কিন্তু তাদের দাবির প্রতি সাড়া দেয়া হবে না।

তারা পুনরায় তাদের অধিকার চাইবে কিন্তু তাদের দাবির প্রতি গুরুত্ব দেয়া হবে না। এমতাবস্থায় তারা সংগ্রাম করার পথ বেছে নেবে এবং বিজয়ী হবে। যদি তোমাদের মধ্য থেকে কেউ অথবা তোমাদের বংশধরদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তি ঐ সময় বিদ্যমান থাকবে তখন তার উচিত হবে আমার আহলে বাইতভুক্ত নেতার সাথে যোগ দেয়া, এমনকি কষ্ট করে বরফের ওপর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তার সঙ্গে যোগ দেবে।

কারণ, এ সব কালো পতাকা হবে হেদায়েতের পতাকা যেগুলো আমার আহলে বাইতের এক ব্যক্তির (ইমাম মাহদী) হাতে তারা অর্পণ করবে, যার নাম হবে আমার নামের অনুরূপ এবং যার পিতার নাম হবে আমার পিতার নাম। সে পৃথিবীর অধিপতি হবে এবং এ পৃথিবী অন্যায়, অত্যাচার ও বৈষম্যে পরিপূর্ণ হয়ে যাবার পর সে তা ন্যায় ও সুবিচার দিয়ে পূর্ণ করে দেবে।

অনেক কাফেররা ইউসুফ নাম রাখে, অনেক কাদেয়ানী মুহাম্মদ নাম রাখে তার জন্য কি এই নাম রাখা নাজায়েজ হবে? নাউজুবিল্লাহ।

আজ পর্যন্ত কি কারো নাম ইয়াজিদ, মারওয়ান, হাজ্জাজ রাখলে তাদেরকে কি নাসেবীদের অনুসারী বলা হয় নাকি তখন নিরবতা পালন করা হয়?

ইয়াজিদ ইবনে আবু সুফিয়ান (রা:) যেমন বিশিষ্ট্য সাহাবী তাকে ভালোবাসি তেমনি ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া কে আহলে বায়াত হত্যা, রাজতন্ত্রের জন্য ঘৃনা করবো।

প্রত্যেকে তার আকীদা ও নিয়ত অনুযায়ী ফলাফল পাবে।
অধিকাংশ মানুষ এই নামগুলো রাখে ভালোবেসে তাদের ইসলাম ইলম কম হলেও রসুল (সা) ও তার বংশধরদের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে!

সুস্পষ্ট সত্য বলা হোক-

আমাদের চোখের শেষ ফোটা অশ্রু দিয়ে হলেও রসুল (সা:) ও আহলে বায়াতের সাথে জান্নাত কামনা করবো। আমাদের শরীরের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত তাদের আদর্শ অনুযায়ী চলবো, ইনশাআল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *