আল্লাহ বলেন,
“আর যদি তোমরা আশংকা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না। তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে, দুই, তিন বা চার। আর যদি আশংকা কর যে সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই গ্রহণ কর।”
সূরা নিসাঃ আয়াত ৩
এই আয়াত হতে অনেকে বহুবিবাহের বৈধতা মানলেও বহু পরহেজগার দাবিদারদের জানি যারা নারীর দেনমোহর, সম্পদের প্রকৃত অধিকার দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তার মানে আপনারা কুরআনের কিছু অংশ মানবেন আর কিছু মানবেন না – এটা ইসলাম নয় বরং আপনারা নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে চলেছেন।
বহুজনকে দেখি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করছে – তখন জ্বালাময়ী প্রতিবাদী বক্তব্য দেয় অথচ নিজ বোন, ফুফুদের প্রাপ্য অধিকার হতে বঞ্চিত করে- তাহলে জেনে রাখুন আপনাদের মধ্যে ইহুদিদের বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান!! একদিকে নারীর বেপর্দা ও চাকরির বিরোধিতা করবেন – অন্যদিকে নারীদের প্রাপ্য অধিকার দেনমোহর ও সম্পদের হক্বদারিতা হতে বঞ্চিত করবেন। তাহলে কিভাবে আশা করেন – তারা আপনাদের কতৃত্ব মেনে নিবে?
নারীদের আজকের অধঃপতনের কারণ শুধু নারীদের একা নয় বরং পুরুষদের ইসলাম না মানা অন্যতম কারণ। ছোটবেলায় মা-খালাদের দেখতাম তাদের হাতগুলো অর্থশূন্য থাকতো। দেনমোহরের টাকা তো পেতই না আর বাবা বাড়ীর সম্পদের হক্বও পেতেন না।
ছোটবেলায় দেখতাম কোন আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসলে এক প্যাকেট বিস্কুটের জন্য মা-খালাদের টাকা ধার বা বাকী করতে হতো। অপরদিকে বাবা-খালুরা জমি কিনতেন কিন্তু দেনমোহর দিতেন না। যদি দেনমোহরের (নারীর অধিকার) এই অর্থ স্বাধীনভাবে ব্যয় করতে পারতো তাহলে আর নিজেকে এতো ছোট মনে হতো না।
একসময় দুই খালুই মারা গেল। তাদের সন্তানগুলো ছোট। এদেশে সন্তানওয়ালা বিধবার দায়িত্ব কেউ নিতে চায় না।
খালতো ভাই, বোনগুলো একেকজন একেক পরিবারে বড় হলো। মনে পড়ে – মাঝে মাঝে বছর ২-৩ পরে যখন খালার সন্তানরা একত্রিত হতো মামাবাড়িতে খালার সে কি কান্না ঝরত!! অথচ খালুর আত্মীয় ও মামারা আল্লাহর নির্ধারণকৃত হক্ব যদি বুঝিয়ে দিত- সে সম্পদ দিয়ে খালা তার পিতৃহীন সন্তানদের সাথে একত্রে থাকতে পারতো।
আল্লাহ বলেন,
“এতীমদেরকে তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও। খারাপ মালামালের সাথে ভালো মালামালের অদল-বদল করো না। আর তাদের ধন-সম্পদ নিজেদের ধন-সম্পদের সাথে সংমিশ্রিত করে তা গ্রাস করো না। নিশ্চয় এটা বড়ই মন্দ কাজ।”
সূরা নিসাঃ আয়াত ২
এক খালা মারা গেল বিনা চিৎকিসায় – অথচ মামারা জমি বেচে বিল্ডিং করছে বা ছেলেদের প্রতিষ্ঠিত করছে। কিন্তু খালাদের তার প্রাপ্য দিলো না।
● রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কারো এক বিঘত সম্পদ যদি কেউ আত্মসাৎ করে তাহলে কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ তার গলায় সাত স্তবক জমিন ঝুলিয়ে দেবেন। ধসাতে থাকবেন তাকে।
মা, খালাদের এরকম নির্মম জীবনধারন দেখে তারা সিদ্ধান্ত নিলেন- বোনদের উচ্চশিক্ষিত করবেন, চাকরি করাবেন। আজ বোনরা ইউরোপ, আমেরিকাসহ বহুদেশে উচ্চপদে রয়েছে- তাদের জিগাস করি তোমরা কি সুখ, শান্তি পেয়েছো!?
তাদের অভিযোগ – কর্মক্ষেত্রে বা স্বামী দ্বারা আজও নির্যাতিত হয়। তখন তাদের দেনমোহরসহ, সম্পত্তির বন্টনের অধিকারগুলো তুলে ধরি – বলি ইসলাম একমাত্র সমাধান যা নারীদের জীবনে সম্মান, শান্তি আনতে পারে।
আশ্চর্য হলেও সত্যি, তারা অকপটে মেনে নেয়। এমনকি বহুজনকে বুঝিয়ে বিবাহের ৩০ বছর পরও দেনমোহর আদায় করা হয়েছে।
নারীদের পর্দার সহিত গৃহে রাখতে চান? তাহলে শুধু শাসন নয় তাদের অধিকারগুলো ফিরিয়ে দেন। ইসলাম শুধু কঠোরতা দ্বারা প্রতিষ্ঠা পায়নি বরং ইসলাম হল ইনসাফ ও ভারসাম্যের পরিমিত মিশ্রণ।
একজন নারী ১০ বছর চাকরি করে যে টাকা জমাতে পারে – অথচ অতি সহজে দেনমোহর ও সম্পদের অধিকার দিলে তারচেয়ে বেশি সম্পদের মালিকানা পেতে পারে।
আল্লাহ বলেন,
“বাবা-মা এবং আত্মীয় স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পদে পুরুষের অংশ রয়েছে এবং বাব-মা ও আত্মীয় স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পদে নারীরও অংশ রয়েছে, তা অল্পই হোক বা বেশি হোক, এক নির্ধারিত অংশ।”
সূরা নিসাঃ আয়াত ৭
আরও বর্নিত হয়েছে,
“আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের (অংশ পাওয়া) সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, এক ছেলের অংশ হবে দুই মেয়ের মতো; আর যদি দুইয়ের বেশি মেয়ে থাকে তবে তারা মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পদের তিনভাগের দুইভাগ পাবে। আর যদি একজন মেয়ে হয় তবে সে অর্ধেক পাবে। মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে তার বাবা-মায়ের ছয়ভাগের একভাগ করে পাবে। মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকলে মা-বাবা ওয়ারিশ হলে তবে তার মা পাবে তিনভাগের একভাগ, যদি মৃত ব্যক্তির কোনো ভাইবোন থাকে তাহলে তার মা পাবে ছয়ভাগের একভাগ অসিয়ত ও দেনা পরিশোধের পর।”
সূরা নিসাঃ আয়াত ১১
প্রায়ই মৃত ব্যক্তির বিধবা স্ত্রী কিছুই পায় না। অথচ ইসলামে স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর অধিকার খুব মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। যদি কারো স্বামীর ইন্তিকাল হয় আর সে স্বামীর কোনো সন্তান না থাকে তাহলে স্বামীর সমূদয় সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবেন। আর যদি স্বামীর সন্তান থাকে তাহলে স্ত্রী পাবেন এক-অষ্টমাংশ (আট ভাগের এক ভাগ)।
পবিত্র কোরআনুল কারিমে এরশাদ হয়েছে,
“স্ত্রীদের জন্য তোমাদের ত্যাজ্য সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ যদি তোমাদের কোনো সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে তাহলে তাদের জন্য হবে ওই সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ।”
সূরা নিসাঃ আয়াত ১২
আর সম্পদের অধিকারগুলো সম্পদের মালিকের মৃত্যু্র সাথে সাথে তার স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া উচিত।
দুঃসময়ে সম্পদ কাজে না আসলে এই সম্পদ মূল্যহীন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকের কাছে পেশ করো না।”
সূরা আল-বাকারাঃ আয়াত ১৮৮
আরও বর্ণিত আছে,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা আমানতকে তার মালিকের কাছে প্রত্যার্পণ করো বা ফেরত দাও।”
সূরা আন-নিসাঃ আয়াত ৫৮
প্রকৃত ঈমানদার হওয়ার আলামত হল আমানত রক্ষা করা। এ সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আর (তারাই প্রকৃত মুমিন) যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।”
সূরা আল-মুমিনুনঃ আয়াত ৮
সম্পদ মেরে হজ্ব, দান-সদকা করবেন মানুষ বুজুর্গ ভাববে!! ফায়েদা কি হবে? ভাবছেন – হয়তো সম্পদের হিসাব দিয়ে জাহান্নামে না যেতে হয়।
● আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন: এক সফরে করকরাহ নামক এক লোক রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাল-সামানার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। তার মৃত্যুর পর রাসূল (সা.) বললেন: ‘সে জাহান্নামি।’ সবাই গিয়ে দেখতে পেল, সে আলখাল্লা জাতীয় একটি পোশাক অবৈধভাবে দখল করেছিল। (মালেক, আহমদ আবু দাউদ)।
যদি সামান্য পোষাক অবৈধ হস্তক্ষেপের কারণে জাহান্নাম হতে পারে তাহলে ইয়াতিম, বিধবাদের সম্পদ জবরদখলের ক্ষেত্রে কিরূপ শাস্তি হতে পারে!?