আমাদের অনেকের দাবি আমরা এদেশে জন্মেছি তাই গর্বিত বাঙ্গালি। কারো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, কারো নব স্বাধীনতার চেতনা গর্বের কারণ। আবার কারো কারো দাবি পীর, আউলিয়ার দেশ তাই এদেশে রহমত বিদ্যমান।
অথচ বাস্তবতা ভিন্ন! আমাদের জন্ম হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছেয় এতে আমাদের কোন অবদান নেই। শুধুমাত্র সৃষ্টিসূত্রে শ্রেষ্ঠ দাবিদার করেছিল শয়তান। সেই আগুনের তৈরি সেজন্য শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে আর আল্লাহ জানিয়েছেন – ইলম ও আমলে আদম (আ:) শ্রেষ্ঠ।
বনী ইসরায়েলও একই দাবি করে! সবচেয়ে বেশি নবী, রসুল তাদের মাঝে এসেছে। তারা ওদের বংশধর তাই শ্রেষ্ঠ। অথচ যে সমাজে নমরুদ, ফেরাউন, আবু জাহেলদের মত নিকৃষ্টরা ছিলেন সেই সমাজে ইব্রাহিম (আ:), মুসা (আ:), রসুলের (সা:) মত শ্রেষ্ঠ রসুলরাও ছিলেন। একই বংশের লোক রসুল (সা:), হামজা (রা:), আলী (রা:) শ্রেষ্ঠতর অপরদিকে আবু লাহাব ছিলেন নিকৃষ্ট। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব হয় তার কর্মে (আমলে), জন্মে নয়।
আহলে বায়াতকে ভালোবাসি এজন্য কারণ যুগ যুগ ধরে তারা হেদায়েতের পথে থাকবে যা হাদীসে জানিয়েছেন শুধু বংশ মর্যাদার কারণে নয়। তেমনি কোরাইশদের মধ্যে হতে কিছু নেতৃত্ব উপযোগী নেতা বা খলিফা (চার সাহাবী সহ এমনকি খলিফা মাহাদীও কোরাইশি হবেন ) পাঠানো হবে বা আসবে। তাদের ভালোবাসতে হবে আবার সবচেয়ে নিকৃষ্টরা কোরাইশদের হতে এসেছে ও আসবে (আবু জাহেল, আবু লাহাব, মারওয়ান, ইয়াজিদ, সুফিয়ানী)।
আবার কোন ঘটনা ঘটলে আমরা লজ্জিত হই দাবি করি,
তীব্র নিন্দা প্রকাশ করি। এই নিন্দা কার কাছে প্রকাশ করা হয়, করলে কি লাভ হয় বুঝে আসে না। অথচ ইসলামের নিয়ম হল- কোন ঘটনা ঘটতে দেখলে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও তা পরিবর্তনের চেষ্টা করা। খুন, ধর্ষনসহ সকল কিছুর সুবিচার নিশ্চিত করা।
আজ দেখুন কোলের শিশুও নিরাপদ নয় সমাজে। আইয়্যামে জাহেলী যুগেও শিশু ধর্ষন হতো না, আজ অহরহ হচ্ছে। চিন্তা করুন – নবী, রসুলদের জন্মভূমিগুলো ধ্বংসের মুখে অন্যায় প্রতিরোধ না করার কারণে। আর পীর, আউলিয়ার দেশ দাবি করে অন্যায় প্রতিরোধ না করলে আমরা বেচে যাবো?
আল্লাহ বলেন-
আর আমরা যখন কোন জনপদ ধ্বংস করতে চাই তখন সেখানকার সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিদেরকে আদেশ করি। ফলে তারা সেখানে অসৎকাজ করে ; অতঃপর সেখানকার প্রতি দণ্ডাজ্ঞা ন্যায়সঙ্গত হয়ে যায় এবং আমরা তা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি (সুরা বনি ইসরায়েল -১৬)।
আল্লাহ এই উম্মতকে একসাথে সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করবেন না কিন্তু আযাব দিবেন ঠিকই। আর কতদিন রাষ্ট্র, বিচারবিভাগের অপেক্ষায় থাকবেন? নিজেরা সচেতন হোন। অন্যায়গুলো প্রতিরোধ করতে স্বোচ্চার হোন।
প্রতিটি নিষ্পাপ শিশুকে নিজের সন্তানের মত ভাবুন। তাদের জুলুমকে নিজের সন্তানের উপর জুলুম ভাবুন। তখন কি চুপ করে থাকতে পারবেন?
একটু চিন্তা করুন – আজ অন্যের শিশু, কাল হয়তো আপনার।
যারা ধর্ষিত হয়ে মরে যায় তারা হয়তো বেচে যায়। না হয় সমাজটা বার বার ধর্ষণের ইতিহাস তুলে আনতো সহানুভূতির বদলে। প্রতিনিয়ত অভিভাবক সন্তান নিয়ে আতংকে দিন কাটাতে হচ্ছে। এদেশে নেককার মুসলিমকে উগ্রবাদী হিসেবে গ্রেফতার করলে আইনজীবী কেউ হতে চায় না, অনেক অভিভাবক পরিচয়ও দিতে চায় না। দিনের পর দিন কারাগারে স্বজনের সাক্ষাৎ এর আশায় কাটে। অথচ সুস্পষ্ট প্রমান থাকা স্বত্বেও ধর্ষকের আইনজীবী জুটে, অভিভাবকরা প্রভাব দেখিয়ে জামিন কিনে নেয়।
সামাজিকভাবে এইসকল আইনজীবী, অভিভাবকদের বয়কট করুন। ওদের নিকট পন্য ক্রয়-বিক্রয়সহ সকল প্রকার লেনদেন বন্ধ করুন। হা ওদের নিরপরাধ ব্যক্তি, নিষ্পাপ শিশুরা যারা এসব পাপের সমর্থন করে না তারা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় খেয়াল রাখুন।
আমরা অন্যদেশের মুসলিমের উপর জুলুম হয় তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পন্য বয়কটের আহবান করি। অথচ নিজ দেশের শিশু, লোকের ওপর জুলুম হলে জুলুমকারীর প্রতিষ্ঠান বয়কট করি না। কোন ধর্ষক, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে ক্রয় করবেন না। ওরা অন্তত কিনতে বাধ্য করতে পারবে না।
এভাবে সাময়িক প্রতিবাদ হোক এবং ইসলাম অনুযায়ী তাদের বিচার করা প্রয়োজন। এজন্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলুক যেখানে সকল মানুষ নিরাপদ থাকবে।
পোস্টের উদ্দেশ্য নয়- মাশাল্লাহ, আলহামদুল্লাহ বা প্রশংসা পাওয়া। আমাদের লেখা, বক্তব্য তখনই কাজে আসবে যখন সমাজে মানুষগুলো সচেতন হবে।