দেশপ্রেম ঈমানের অংশ এটা ক্ষমতাসীনদের তৈরি করা মিথ্যাচার। বরং যেখানে দেশপ্রেমের নামে অন্ধ চেতনা ছড়ানো হয়েছে মানবিক অধিকার, মূল্যবোধ হারিয়ে গেছে। নিজ দেশের জনগনের কাছে জনপ্রিয়তা ও ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য শাসকরা এমন সিদ্ধান্ত নেয় যা অন্যদেশের মানুষের জন্য ক্ষতিকর। নিজ দেশের সামান্য পানি বাড়লে বাঁধ ছেড়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশের মানুষকে মরতে দেওয়া হয়। পশ্চিমারা নিজ দেশের সমৃদ্ধির জন্য আফ্রিকা, আরব, শামসহ বিভিন্নদেশে যুদ্ধ ছড়ায়।
নিজ দেশের কুকুর মারলে বিচার করা লোকগুলো নিজ দেশ বা অন্যদেশের মুসলিম/সংখ্যালঘুর উপর আঘাত আসলে নিরব থাকে। ক্ষমতাসীনরা এসব ক্ষেত্রে ধর্মীয়, দেশীয় আবেগ ও চেতনাকে ব্যবহার করে। অথচ ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে সকল মানুষের কল্যান বয়ে আনবে।
আল্লাহ বলেন-
তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানব জাতির জন্য যাদের বের করা হয়েছে; তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দিবে, অসৎকাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনবে। (সুরা আল ইমরান -১১০)
ক্ষমতাসীনরা এরকম একটা আবেগকে কাজে লাগায় ক্ষমতার জন্য যার নাম অখন্ড ভারত। কিন্তু অখন্ড ভারত বলতে তারা যে সীমা বুঝায় – তা শুধুমাত্র সম্রাট আশোক (দাক্ষিণাত্য ব্যতীত), মোগলদের কিছু সময় আর ইংরেজদের শাসনামলে এক শাসক বা রাষ্ট্রের অধীনে ছিল। বাকী সময় ভারতবর্ষ খন্ড খন্ড অঙ্গরাজ্যে বিভক্ত ছিল। সুতরাং পুরো ভারতবর্ষ কখনও হিন্দুরাজ্য ছিল না আর হবেও না।
একটু চিন্তা করুন- ভারতে কি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বই মনুসংহিতা দিয়ে শাসন হয়? অথবা বর্তমানে কেউ চালু করলে কেউ কি তা মেনে নিবে? বরং বহু হিন্দুরা এর বিরোধিতা করবে জাত প্রথার কারণে। অথচ ভারতের সংবিধানের মুখ্য লেখক ভীমরাও তাদের ধর্মগ্রন্থ/রাষ্ট্রীয়নীতির বই মনুসংহিতার হাজার হাজার কপি পুড়িয়েছেন এবং সংবিধানে কখনো যাতে মনুসংহিতা নীতি অনুসরণ করা না হয় এমন আইনগুলো রচনা করেন। এজন্য তাকে পুরস্কার দেওয়া হয়। আজও তার লেখা অধিকাংশই আইনে বিদ্যমান। ভারতীয়রা তার নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।
অপরদিকে ইসলামের নামে ক্ষমতা নিলেও পাকিস্তানের শাসকগণ, সেনারা অধিকাংশই ছিল শিয়া ইশনে আশারী। পশ্চিমাদের সমর্থন পেতে হিন্দু, কাদেয়ানীদের পদ দেওয়া হয় বরং ওদের নেতৃত্বে সংবিধান রচনা করা হয়, কুরআনের সংবিধান বাদ দিয়ে। আর পাক-বাংলা কি কুরআন দ্বারা শাসিত হয়েছিল নাকি মানবরচিত আইন দ্বারা? ওরা ইসলাম ও মুসলিমের কল্যাণে অন্য দেশের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে জীবন দিতে রাজি অথচ নিজ দেশে ইসলাম কায়েম করতে চায় না।
রসুল (সা:) মদীনায় প্রথম ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন পরে কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই ও এসবদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। খন্দকের যুদ্ধের পর আল্লাহ স্বয়ং জিবরাইল (আ) কে পাঠান মদীনা রাষ্ট্রের প্রথমে বিশ্বাসঘাতক ইহুদিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। এরপর মক্কা বিজয়, রুম ও পারস্য বিজয় হয়েছিল। আবু বকর (রা:) যাকাত অস্বীকারকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন, সালাউদ্দিন আইয়ুবী (রহ:) ঘরের শত্রু মুনাফেকদের প্রতিরোধ না করলে আকসা বিজয় সম্ভব হতো না।
ঠিক তেমনি খলিফা মাহাদীর (হাফি) বিরুদ্ধে প্রথম লড়াই হবে সুফিয়ানী মুনাফেকদের সাথে। এই বিজয়ের পর অন্য বিজয়ের পথ তৈরি হবে। সংখ্যালঘু ভাইয়েরা চিন্তা করুন – ভারতে প্রতিনিয়ত দাঙ্গা, রাজনীতি, সংঘর্ষে, হামলায় কত হিন্দু মারা যায়। কেউ কি বলে ভারতে হিন্দুদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ?
আর পাক-বাংলায় কত মুসলিম দাবিদার মারা যায়, কয়টা মিডিয়া বলে এসবদেশে মুসলিমদের জীবন সংকটাপন্ন? অথচ বাংলা-পাকে একজন সংখ্যালঘু মরলে তখন মিডিয়া প্রচার করে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নয়। ভারতের গুলিতে যত লোক মারা গেছে পাক-বাংলায় তার চেয়ে শতগুন মারা গেছে দেশীয় ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার লোভে। বরং এসব ক্ষমতাসীনরা ধর্মীয়, দেশীয় আবেগকে হাতিয়ার করে নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখে।
ভারতে যত মুসলিমের বিরুদ্ধে জুলুম ও নির্যাতন করবে ও বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিরাপদ নয় ঘোষণা করবে বা সংখ্যালঘুর উপর আঘাত আসবে, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা লোকগুলো জনপ্রিয় হবে, ভোট ও ক্ষমতা পাবে।
যারা ওদের ফাদে পড়ে ভাবেন- ভারত আপনাদের রক্ষায় অনেক কিছু করবে তাহলে মিথ্যা স্বপ্ন দেখে নিজেদের বিপদ ডাকছেন। অপরদিকে পাকিস্তান-বাংলাদেশের শাসকরা যত ভারত বিদ্বেষ ছড়াবে ততই তাদের জনপ্রিয়তা বাড়বে ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সুবিধা হবে। অথচ চীনের উইঘুর, মিয়ানমারের মুসলিমদের উপর কি পরিমাণ জুলুম হয়েছে, হচ্ছে তাদের সাথে এরা পরমবন্ধুতা বজায় রাখে।
আল্লাহ বলেন-
ইয়াহূদী ও নাসারারা তোমার প্রতি রাজী হবে না যে পর্যন্ত না তুমি তাদের ধর্মের আদর্শ গ্রহণ কর। বল, ‘আল্লাহর দেখানো পথই প্রকৃত সুপথ এবং তুমি যদি জ্ঞান আসার পরেও এদের ইচ্ছে অনুযায়ী চল, তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর ক্রোধ হতে রক্ষা করার মত কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না’। (সুরা বাকারাহ)
তাই যখনি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, অরাজকতা, হত্যার বিচার বিভিন্ন ইস্যুতে শাসকদের জনপ্রিয়তা কমে যায়। তখনি কেউ স্বাধীনতা, দেশপ্রেম, ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগায়। অথচ নিজরাষ্ট্র কুফরী আইন দ্বারা পরিচালিত করে। কেউ ইসলামের আইন প্রতিষ্ঠা করতে বললে উগ্রবাদী বলে। ইসলাম ও মুসলিমের কল্যাণ চাইলে আগে নিজ রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েম করতো।
আমাদের আবার ভারতের দালাল উপাধি না দিয়ে বাস্তবতা দেখুন- ইংরেজরা মীর জাফরদের ব্যবহার করে ক্ষমতা নেয় এরপর তাদের ছুড়ে ফেলে দেয়। হালাকু খানরা আব্বাসীদের সাম্রাজ্য শেষ করে মুনাফেকদের ষড়যন্ত্রে। আফগানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সাহায্য করেছিল নিজ স্বার্থে, তাদের শত্রুদের দুর্বল বা পরাজিত করতে। পরাজিত হওয়ার পর উল্টো আফগানে ওরা আক্রমণ করে। মালহামার পূর্বে যখন তৃতীয় শক্তি পরাজিত হবে তখন চুক্তি ভেঙ্গে রুমরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে।
ফ্রান্স, বিট্রেনের কারণে পুরো আফ্রিকা গৃহযুদ্ধ ও ধ্বংসের মুখে। ভারত নিজ সুবিধার জন্য বাংলাদেশকে সাহায্য করে। পরে পাকিস্তানের প্রভুত্ব শেষ হলে, ভারত নতুন প্রভু হয়ে উঠে। তাই চীন বা অন্য কারো মদদে যদি যুদ্ধে জয়ী হয় তখন তারা নতুন প্রভু হয়ে উঠবে।
শাম, লেভান্তে ৩৪ টা পতাকাতলে যুদ্ধ চলছে, ঐক্যহারা জাতি ধ্বংসের মুখে। তাই আমাদের নিজেদের শক্তিশালী করতে হবে, নিজের ইসলামী চেতনা ও ইসলাম রক্ষার বাহিনী তৈরি করে। বনু উমাইয়া, বনু আব্বাসী, উসমানী, মোগল সাম্রাজ্যের শক্তিশালী বাহিনী থাকা স্বত্বেও পতন হয়েছিল। তাদের বিলাসী জীবন ছিল খেলাফাহ রাশেদীনের বিপরীত। খেলাফায়ে রাশেদীনের যুগে শাসকদের জবাবদিহিতা করা যেত। মুসলিমরা ইসলাম, খলিফাকে ভালোবাসতো, তাই জেহাদ করতো দ্বীন রক্ষায় ও প্রতিষ্ঠায়। শাহাদাত ছিল তাদের আকাঙ্ক্ষা। তাই সংখ্যায় কম হলেও কাফেররা এসব ভূমি আক্রমণ করার সাহস পায়নি।
অপরদিকে রাজতন্ত্রের কর্মকর্তা, সৈনিকদের (বেতনভুক্ত)
মধ্যে অনেকই ছিল বিলাসী। তারা টাকা ও ক্ষমতার জন্য লড়াই করতো। তাই অর্থ, দুনিয়াবী স্বার্থের জন্য কখনও হালাকু খানের সাহায্যকারী, কখনও কামাল আতাতুর্ক ও মীর জাফরদের মত ক্ষমতালোভী দ্বারা বিশাল ক্ষতিসাধন হয়।
আজও আমরা যদি তাকওয়া, দ্বীন প্রতিষ্ঠার বাহিনী তৈরি না করে শুধু বেতনভুক্ত সৈনিকদের ভরসায় থাকি তাহলে জেনে রাখুন মহাবিপদ সম্মুখে। সকল ধর্মের লোকদের রসুলের (সা:) খেলাফায়ে রাশেদীনের কল্যাণকর আদর্শ জানাতে হবে।
নিজদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে বুঝবেন- কারা ইসলাম ও মুসলিমের কল্যাণ চায়। আর ইসলাম কোন নির্দিষ্ট ভূখন্ড চেতনা ও শত্রুতা মানে না। মদীনার রাষ্ট্রে বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা যেমন একত্রিত হয়েছিল তেমনি নিজদেশের মুনাফেক ও ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল।
বাংলাদেশ, পাক-ভারতসহ প্রতিটি দেশের মুমিন আমাদের ভাই ও বন্ধু। আবার সবদেশের ইসলাম বিরোধীরা ও ইসলাম প্রতিষ্ঠায় বাধাদানকারীরা আমাদের শত্রু! আর ইনশাআল্লাহ অখন্ড ভারত নয় বরং অখন্ড শান্তির বিশ্ব ঘটবে ঈসা (আ:), খলিফা মাহাদীর (হাফি:) হাত ধরে।