আজ আমরা এমন জাহেলিয়াতে বসবাস করছি যে নিজেদের বিভিন্ন জাতীয় পরিচয় নিয়ে অহংকাররত। কোন দেশের মুসলিমরা নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষনের শিকার হলে প্রতিবাদ করলে এদেশের মুসলিম নামধারী কিছু জাতীয়তাবাদী মানুষ বলে নিজ দেশ নিয়ে ভাব অন্য দেশের মানুষ নিয়ে ভাবার দরকার নাই। অথচ মুসলিম সে যে ভূখন্ডের হোক না কেন তার জাতীয় পরিচয় মুসলিম আর মুসলিমরা পরস্পর ভাই ভাই (সুরা হুজুরাত-১০)। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেন- ঈমানদারের সাথে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন যেমন মাথার সাথে দেহের সম্পর্ক। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট ঠিক অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যাথা অনুভব করে। (মুসনাদে আহমদ)। রাসুলের (সা:) সময় মদীনার আনসাররা মক্কার মুহাজির ও রাসুলের (সা:) পক্ষ নিয়ে কেন বদর যুদ্ধে কোরাইশদের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন পক্ষান্তরে এক যুদ্ধে মদীনার মুনাফিক উবাই ঘোষনা করেছিল-“এবার যুদ্ধ শেষে সম্মানিত ব্যক্তি অপমানিত ব্যক্তিদের বের করে দেবে।” এখানে সম্মানিত ব্যক্তি বলতে সে নিজকে ও অপমানিত ব্যক্তি বলতে রাসুল (সা:) কে বুঝিয়েছে। উবাইর ছেলে আবদুল্লাহ ছিলেন দ্বীনদার মুসলিম সে তার বাবাকে বলে “আমি আপনাকে মদীনায় প্রবেশ করতে দেব না যতক্ষন না আপনি স্বীকার করে নেন যে, আপনি অসম্মানের পাত্র ও রাসুল (সা:) সম্মানের পাত্র। ছেলের রণভঙ্গি দেখে পিতা বাধ্য হলেন স্বীকার করতে। (সীরাতে ইবনে হিশাম, আল বিদায়া আন নিহায়া)। সাহাবীদের কাছে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ছিল ভূখন্ড, পরিবার সবকিছুর উর্ধ্বে। তারা আল্লাহর জন্য ভালোবাসতেন আল্লাহর জন্যই শত্রুতা করতেন। আল্লাহপাক আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন পরস্পর ঐক্যবদ্ধ মুসলিম হয়ে থাকতে। যুগে যুগে পৃথিবীতে আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ছিল ইসলাম এবং তার অনুসারীদের জাতীগত পরিচয় ছিল মুসলিম। আল্লাহপাক বলেন-“হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে যেমনভাবে ভয় করা উচিত, তেমনভাবে ভয় করতে থাক।অবশ্যই মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরন করো না। আর তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে আকড়ে ধর পরস্পর বিছিন্ন হয়ো না।”(সুরা আল ইমরান -১০২-১০৩)।” আল্লাহপাক বলেন- “ইব্রাহিম ও ইয়াকুব এই সম্বন্ধে তাহাদের নির্দেশ দিয়ে বলেছিল- আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দ্বীনকে মনোনীত করেছেন। সুতরাং মুসলিম না হয়ে তোমরা মৃত্যুবরণ করো না।”(সুরা বাকারাহ-১৩২)। ইয়াকুব (আ:) এর এক ছেলের নাম ছিল ইয়াহুদ তার মৃত্যুর পর তার বংশধররা নিজেদের মুসলিম পরিচয় বাদ দিয়ে ইয়াহুদী পরিচয় দিতে শুরু করে আস্তে আস্তে ইসলামকে বিকৃত করে ইহুদি ধর্ম পরিচয় দিতে শুরু করে। ঠিক একই পরিণতি হয়েছিল ঈসা (আ:) পরবর্তী তার অনুসারীদের। আজ আমরা একই পথে হাটছি। নিজেদের ধর্মীয় পরিচয়ের উর্ধ্বে ভূখন্ডগত পরিচয়কে প্রাধান্য দিচ্ছি। আল্লাহপাক বলেন “যখন ঈসা তাহাদের অবিশ্বাস উপলব্দি করল তখন সে বলল- আল্লাহর পথে কারা আমার সাহায্যকারী? হাওয়ারীগণ বলল – আমরা আল্লাহর পথে আপনার সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর পথে ঈমান এনেছি, আমরা মুসলিম তুমি ইহার স্বাক্ষী থাক। (সুরা আল ইমরান- ৫২)। আল্লাহপাক বলেন- “তারা বলে ইহুদী, খ্রিষ্টান হয়ে যাও তবেই সুপথ পাবে। আপনি বলুন, কখনও নয় বরং আমরা ইব্রাহীমের ধর্মে আছি যাতে কোন বক্রতা নেই। সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। (সুরা বাকারাহ-১৩৫)। সুতরাং ইব্রাহীম থেকে রাসুল (সা:) পর্যন্ত সকল উম্মতের জাতিগত পরিচয় ছিল মুসলিম ও দ্বীন ইসলাম। এর ভিত্তিতে মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ হত তা বর্ণ, গোত্র, ভূখন্ড ভিন্ন হলেও।