আমরা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি তাই আমরা বাংলাদেশী।বাংলা ভাষা, আল্লাহর দেওয়া এই প্রকৃতি আমাদের মনে আনন্দ জাগায়। তাই অনেকের দাবি এদেশকে ও এদেশের মানুষগুলোকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে, সাথে একটা জাল হাদীস বলে- “দেশপ্রেম ঈমানের অংশ, এটা কোন হাদীসের গ্রন্থে নেই।” তাহলে মক্কার রসুলকে (সাঃ) কি এদেশের মানুষের চেয়ে কম ভালোবাসতে হবে নাউজুবিল্লাহ? কিন্তু আমার জন্ম আমার ইচ্ছায় হয় নি হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছায়। আল্লাহ আমাদের জন্য এই আকাশ, পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন আর আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদাতের জন্য।বিশ্বের কোনকিছুই এই ভূখন্ডের তারকাটার কুফরী সীমানা মেনে চলে না শুধু শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষ ছাড়া। একটু ভেবে দেখেছেন কি, এদেশে যে এত বৃষ্টি হয় তার মেঘ কোথা হতে আসে। সে মরুর আরব সাগর হতে। অথচ সেখানেই বৃষ্টির কমতি। সাগরের মাছগুলো কখনও কোন সীমানা মানে কি!? তার কাছে কি বঙ্গসাগর, কি প্রশান্তমহাসাগর। সবখানে তার বিচরণ। আসমানের পাখিগুলো শীত, বসন্ত সময়ভেদে ছুটে চলে সারাবিশ্বে। শুধু আমরা ব্যস্ত জমিন পূজায়। আজ আমাদের শেখানো হচ্ছে বাঙ্গালীরা পরস্পর ভাই ভাই, আর ওরা এক জাতি। কেউ ভারতে জন্মগ্রহণ করলে সে ভারতীয় জাতি, পাকিস্হানে জন্মগ্রহণ করলে সে পাকিস্হানী জাতি। অথচ আল্লাহ আমাদের ভাগ করেছেব দুটো জাতিসত্তায়।
১. মুসলিম ২. কাফের, মুশরিক আর নাস্তিকরা (নাস্তিক একধরনের মুশরিক সে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে)।
“সকল ঈমানদারগণ পরস্পর ভাই ভাই।” (সুরা হুজুরাত- ১০)।আপনি যদি বলেন আপনি বাঙ্গালী আপনার জাতির পিতা ও আর্দশ বঙ্গবন্ধু, ভারতীয় হলে গান্ধী, মার্কিনী হলে জর্জ ওয়াশিংটন। এরকম প্রায় সব কাফের দেশে আলাদা আলাদা রাষ্ট্রপিতা, জাতিরপিতা ও আর্দশ মানব রয়েছে। অথচ মুসলিমদের জিতার পিতা ইব্রাহীম (আ:) আর আর্দশ মোহাম্মদ (সা:)। আজ প্রত্যেকটা জাতির আলাদা আলাদা সংবিধান। এটাই এদেশের সর্ব্বোচ আইন। অথচ মুসলিমদের সর্ব্বোচ আইন আল কুরআন ও রাসুলের সুন্নাহ। জাতীয়তাবাদে আমাদের আনন্দের দিন পহেলা বৈশাখ, ২১ শে ফ্রেবুয়ারি যে দিবসের নামে শিরক চলছে অথচ মুসলিমদের আনন্দের দিন দুই ঈদ। জাতীয়বাদের পতাকাও ভিন্ন ভিন্ন, জাতীয় ফল ও জাতীয় পশু ও খাদ্য ভিন্ন। অথচ মুসলিমদের পতাকা কালেমার, প্রিয় ফল/খাদ্য হওয়া উচিত হালাল খাদ্য যা রাসুলের সুন্নাহ। জাতীয়তাবাদ শিখায় যখন জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে তখন রাজা, চাকর সবাই কাতারবদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে দেশের প্রশংসা (হামদ), সম্মান দেখাবে। অথচ রাসুল (সাঃ) কে দাড়িয়ে সম্মান করা নিষেধ ছিল। আর মুসলিম সালাতে কুরআন তেলাওয়াত করে, যেখানে সবাই ভেদাভেদ ভুলে কাতারবন্দী হয়ে আল্লাহর হামদ, আনুগত্য স্বীকার, সম্মান প্রদর্শন করে। জাতীয়তাবাদ শিখায় এদেশে জন্মগ্রহণকারী কোন মুশরিককে ভালোবাসতে পারবে কিন্তু ভারত, পাকিস্তানে জন্মগ্রহণকারী মুসলিমকে ভালোবাসাতে পারবে না। আর কারণ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তুলে ধরে। অথচ আজ যেসব মুসলিমের বয়স ৩০-৩৫ বছর তারা কি মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মেছিল? তাহলে তারা কেন তাদের বাপ চাচার অপরাধ বহন করবে? এ জমিনে সবচেয়ে বড় অপরাধ শিরক, রাসুল পাক (সা:) এর চাচা ও ইব্রাহিম (আ:) এর বাবা ছিল মুশরিক, এজন্য তো আল্লাহ তাদের দোষারোপ করেননি। হা যারা আজও পাকিস্তানীদের বর্বরতা সমর্থন করে তারা ঘৃণিত।জাতীয়তাবাদ আজ শিখায় নিজ দেশের ইসলামের শত্রুকে ভালবাসতে আর অন্যদেশের মুসলিমদের গালি দিতে (ক্রীড়া বা ক্ষমতার দ্বন্দে)। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেন- “মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী (আল্লাহর আবাধ্য আচরন) ও তার সাথে লড়াই করা কুফরী।” (বুখারী-৬০৪৫, ৭০৭৬, তিরমিযি ১৯৮৩)। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন- “হে ঈমানদারগণ, তোমার স্বীয় পিতা, ভাইকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করো না, যদি তারা কুফরকে ঈমানের উপরে প্রাধান্য দেয়। তোমাদের মধ্যে যারা তাকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে তারাই হবে জালেম।” (সুরা আততওবা-২৩)। অথচ আজ আমাদের দেশের অভিভাবক মন্ত্রালয় ও সচিবালায় কতজন ইসলামের শত্রুরা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন- “যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তাদের তুমি আল্লাহ ও তার রাসুলের সাথে বিরুদ্ধাচরনকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবে না। হোক এই বিরুদ্ধাচরনকারী তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা বা তাদের গোত্র-জাতি।” (সুরা মুজাদালাহ ৫৮: ২২)। আমরা মুশরিকদের দাওয়াত দিবো যেন ইসলামকে জেনে গ্রহণ করতে পারে। মুসলিমরা দীর্ঘদিন একই পতাকাতলে, একই সংবিধানের অধীন একসাথেই ছিল। ইংরেজদের দালাল মক্কার তৎকালীন গভর্নর শরীফ হাসান, কামাল পাশা ওদের সাহায্য নিয়ে ফ্রান্স, বিট্রেন, রাশিয়া আমাদের বিভক্ত করে আর ইসরাইল নামক এক রাষ্ট্রের জন্ম দেয় আর আরব দালাল শাসকরা এর সুবিধা নেয়। তারা আল্লাহর জমিনের তেল, সোনা ও সম্পদ যা সকল মুসলিমের অধিকারে আছে তা হতে বঞ্চিত করে। আজও আরবে কোন বাংলাদেশী মুসলিম ভাই কাজ করতে গেলে তার উপর আকামার বোঝা চাপায়। অথচ রাসুল (সা:) বিদায় হজ্জ্বে বলেছিলেন, আরবরের উপর অনারবের প্রাধান্য নাই তাকওয়া ছাড়া।আমরা যখন জাতীয়তাবাদে অন্ধ অথচ ভারতীয়, মায়ানমার, চীনরা মুসলিমদের নিজদেশের নাগরিক ভাবে না বরং নির্যাতন চালায়। আসলে মুসলিমদের রাষ্ট্র বলতে বুঝায় যেখানে ইসলামী আইন বিদ্যমান, যেখানে সকল মুসলিমের মর্যাদা সমান। নবীরা নিজ দেশ, ভূখন্ড ছেড়ে হিজরত করেছিলেন দ্বীনের প্রয়োজনে। আর রাসুল (সা:) মক্কা বিজয়ের পরও মদীনায় থেকে গিয়েছিলেন আজও তার কবর মদীনায়। কারণ এখানে তিনি প্রথম ইসলামিক রাষ্ট্র গঠন করেন, এখানে পেয়েছিলেন মুমিনদের ভালোবাসা। আর মক্কার জীবন ছিল কষ্টের। তারমানে কি রাসুলুল্লাহ (সা:) নিজ জন্মভূমিকে ভালেবাসতেন না? তাদের ভালোবাসা মূলত ছিল আল্লাহকেন্দ্রিক, কোন ভালোবাসাকে আল্লাহর উপর প্রাধান্য দিতেন না। আল্লাহতাআলা বলেন- “বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্হান যাকে তোমরা পছন্দ কর আল্লাহ, তার রাসুল ও তার রাহে জেহাদ করা হতে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে পথ দেখান না।” (সুরা তাওবাহ- ২৪)। পরিশেষে বলি জাতিতে আমরা মুসলিম তা আমরা বাংলাদেশে থাকি বা আরব বা রাশিয়ায়, এদেশের মুসলিম, প্রকৃতিকে ভালোবাসি। তবে এই ভালোবাসা ততক্ষন যতক্ষন আল্লাহর কুরআন ও রাসুলের (সা:) বিরুদ্ধে না যায়।