খেলাফত ও গণতন্ত্র

অনেকে নিজেদের ক্ষমতার লোভে/স্বার্থে ইসলামী পবিত্র খেলাফাহ আর বর্তমান কুফরী গণতন্ত্রের সাথে তুলনা করে নাউজুবিল্লাহ।

অথচ দুটোর মধ্যে আকীদাগত পার্থক্য বিদ্যমান-

১. খেলাফাহ হল ইসলামী শাসনব্যবস্থা যা কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা শাসিত হবে। যেখানে বিধানদাতা আল্লাহ। নেতা নির্বাচন করা হয় – যিনি কুরআন, সুন্নাহ দ্বারা শাসন করবে আর বিপরীত আইন প্রয়োগের অধিকার দেওয়া হয় না।

অপরদিকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসক জনগণ বা নির্দিষ্ট সদস্যের মত অনুযায়ী আইন তৈরির অধিকার পায়। ফলে তারা আল্লাহর হালালকৃত বস্তুকে হারাম ও হারামকে হালালে পরিনত করে।

প্রকৃতপক্ষে খেলাফাহ হল- আল্লাহর অধীন শাসনব্যবস্থা আর গণতন্ত্র হল জনগণ/শাসকদের ইচ্ছের অধীন শাসনব্যবস্থা।

২. খেলাফতে শুধুমাত্র মুসলিমদের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের রায় হতে নেতা নির্বাচন করা হয়, অন্যরা বায়াত নিবে। আর খলিফা কোরাইশ থেকে হতে হবে (মুসলিম শরীফ, বুখারী)। এই নিয়ে বিস্তারিত পোস্ট আছে।

আর গণতন্ত্রে কাফের, মুশরিক, ধর্ষক, সুদখোর, পুজিবাদী, নাস্তিক, মুনাফেক সবাই একটি ভোটের অধিকার লাভ করে। ফলে নিকৃষ্ট ব্যক্তিরা কি উৎকৃষ্ট মুসলিমকে ভোট দিবে?

প্রকৃত মুসলিম ক্ষমতা পেলে ওদের সুদের ব্যবসা, জেনার অধিকার বন্ধ করে দিবে। মানে আবু বকর (রা:) এর যে অধিকার, আবু জাহেলদেরও নেতা নির্বাচনে সেই একই অধিকার। আচ্ছা আবু জাহেলরা ইসলামই গ্রহণ করেনি, ইসলাম দ্বারা শাসনব্যবস্থা কিভাবে মেনে নিবে?

৩. ইসলামে গভর্ণর, রাষ্ট্র কর্মকর্তা, সেনা নিয়োগ হতো মুসলিমদের থেকে। কারণ শাসনব্যবস্থা ছিল ইসলাম। কাফেরের ইসলাম সম্পর্কে ইলম ও ভালোবাসা নেই সে কিভাবে শাসনব্যবস্থার অংশ হবে? অপরদিকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মুনাফেক, কাফের, চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ সবাই পদ-পদবি পায়।

৪. ইসলামী রাষ্ট্রে- নেতা, গভর্ণর, কর্মকর্তা নির্বাচিত করার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন হতো না। প্রকাশ্যে মত প্রকাশ করা হতো ফলে নির্বাচনের নামে ব্যাপক খরচ ও কারচুপি হতো না।

বর্তমান পদ্ধতিতে সৎ, দরিদ্র ব্যক্তি নির্বাচিত হতে চাইলে – তাকে ব্যবসায়ী, দল হতে অর্থ নিয়ে নির্বাচনের খরচ চালাতে হয়। ফলে অধিকাংশ নির্বাচিত হওয়ার পর ব্যবসায়ীর বা দলের স্বার্থ দেখে। তাই তেল, গ্যাস, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চলে।

৫. ইসলামে শাসকদের কর্ম, সম্পদের জবাবদিহি করার অধিকার ছিল সাধারণ মানুষের। ইসলামের ইলম অনুযায়ী যে কেউই উপযুক্ত পরামর্শ দিতে পারতো। অপরদিকে গণতন্ত্রে মুক্তমত প্রকাশের নামে ইসলাম, রসুলের (সা) চরিত্র নিয়ে সমালোচনা ও আলোচনার অধিকার দেওয়া হয়।

সাহাবীরা কি এমন আলোচনা অনুষ্ঠান, টকশো আয়োজন করতেন যেখানে রসুল (সা:) ও তার পবিত্র স্ত্রীগণ নিয়ে সমালোচনা করা হবে?

৬. ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা করা হয় – যাকাত, উসুর, জিজিয়া, গনীমত দ্বারা। সুদ, করের মত অভিশাপ ছিল না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সুদ, কর বৈধ। এরুপ শত উদাহরণ দেওয়া যায়। একটু চিন্তা করুন যারা কুরআনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জীবন দেয় আর যারা স্বপ্ন দেখায় ক্ষমতা পেলে কুরআন ধরে শপথ করবে – কুরআন বিরোধী আইনের উপর (সংবিধান) অটল থাকার। এরপর জনগণ রাজি হলে ইসলামী আইন তৈরি করবে, তারা কি এক হতে পারে। ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর নির্দেশ রয়েছে – সে নির্দেশ ততক্ষণ পর্যন্ত কার্যকর হবে না যতক্ষণ (আইন তৈরি) অধিকাংশ জনগনের রায়/রাজি না হয়। তাহলে তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে জনগণকে সর্বশক্তিমান ক্ষমতার অধিকারী মানলো!

মুসলিমরা যখন সিরিয়া, জেরুজালেম, ইরান বিজয় করে তখন মুসলিমের সংখ্যা ছিল কম, কাফেররা সংখ্যাগরিষ্ট ছিল। তখন মুসলিম, কাফের সবাই মিলে গনতান্ত্রিক নির্বাচন চালু করলে মুসলিমদের কাছে শাসন ক্ষমতা থাকতো না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *