কুরআন একটা স্থায়ী মু’জিযা। জিন ও মানব জাতিকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে যে, পারলে তারা এর অনুরূপ একটি কুরআন বা দশটি সূরা কিংবা একটি মাত্র সূরা তৈরী করুক, কিন্তু উভয় জাতিই এ চ্যালেঞ্জের মুকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বুখারী ও মুসলিমে লায়ছ ইব্ন সা’দ ….. আবূ হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন: পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবীকেই কোন না কোন মু’জিযা দান করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ সেভাবে তার উপর ঈমান আনেনি।
আর আমাকে যে মু’জিযা দেয়া হয়েছে তা হল আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ওহী। আমি আশা রাখি কিয়ামতের দিনে আমার অনুসারীর সংখ্যা বেশি হবে। অর্থাৎ পূর্বের নবীগণকে যে সব মু’জিযা দেয়া হয়েছিল তাতে কেবল জ্ঞানী ও দূরদর্শী ব্যক্তিরাই ঈমান আনত। হিংসুক ও পাপিষ্ঠরা ঈমান আনত না।
এই অলৌকিক কুরআনের অন্যতম রহমত হল জেহাদ – তাই কুরআনে অনেক জেহাদের আয়াত এসেছে। পূর্ববর্তী জাতির অনেকে নবী, রসুলগনকে অস্বীকার ও জুলুম করার কারনে আল্লাহ অধিকাংশ জাতিকে আযাব দিয়ে সমূলে ধ্বংস করেন। ফলে তারা কাফের, মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুবরন করে আজীবন জাহান্নামের বাসিন্দা হোন। অপরদিকে রসুল (স:) হলেন রহমতের নবী৷ আল্লাহ রসুল (সা:) ও সাহাবিদের জেহাদ দ্বারা জালেমদের পতন ঘটান। জুলুমের ভয়ে ও ইসলামের সত্যতা নিয়ে দ্বিধায় ছিল বলে যারা প্রকাশ্যে ঈমান আনেনি তারা ইসলামের বিজয় ও সত্যতা, ক্ষমার সৌন্দর্য্য দেখে ঈমান আনেন। আল্লাহ বলেন-
তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদেরকে আযাব দেবেন এবং তাদেরকে অপদস্থ করবেন, আর তোমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য করবেন এবং মুমিন কওমের অন্তরসমূহকে চিন্তামুক্ত করবেন।
সুরা তওবা -১৪
আল্লাহ আরো বলেন-
যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে। আর তুমি মানুষদের দেখবে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে। তখন আপনি আপনার রবের প্ৰশংসাসহ তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী।
সুরা নাসর
পবিত্র কুরআন ও জেহাদের কল্যানে – একসময়ের
ইসলামের শত্রুরা ঈমান আনে মুসলিম, ইসলামের রক্ষক হয়ে উঠেন।
যাদের পিতা ছিল ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু আর পুত্ররা পেয়েছেন জান্নাতের সুসংবাদ। এইরকম একজন সাহাবী ইকরিমা ইবনে আবু জাহেল (রা:)। তার বাবা ছিল ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু আবু জাহেল।
তিনি রসুলের (সাঃ) বিরোধিতা করে যান ও যুদ্ধ করেন। তিনি বীরযোদ্ধা ও খালিদ (রাঃ) এর ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন।
মক্কা বিজয়ের পর যাদের ক্ষমা করা হয়নি তিনি তাদের একজন।
আর ইকরিমা ইবনে আবু জাহেল নৌযানে সমুদ্র পার হতে গেলে ঝড়ের কবলে পড়লো। জাহাজের লোক বললো, এখন তোমরা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাক। কেননা তোমরা যে মূর্তির পূজা কর তারা তোমাদের কোন সাহায্য করতে পারবে না। ইকরিমা বললেনঃ আল্লাহর কসম! যদি সমুদ্রে তিনি ব্যতীত আমাকে আর কেউ রক্ষা করতে না পারেন; তবে স্থলভাগেও তিনি ছাড়া আমাকে কেউ রক্ষা করতে পারবেন না। আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ওয়াদা করছি, যদি আপনি আমাকে এই মুসীবত হতে নাজাত দেন তবে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হবো এবং আমি তাঁর নিকট বায়’আত গ্রহণ করবো। আমার ধারণা, তিনি আমায় ক্ষমা করবেন এবং রহম করবেন। পরে তিনি এসে মুসলিম হয়ে যান। (সুনান নাসায়ী:৪০৬৮)।
তিনি হেদায়তপ্রাপ্ত হন ও ক্ষমা পান। ইকরিমা (রাঃ) বলেছিলেন – আল্লাহর শপথ রসুলুল্লাহ, আমি শপথ করছি- যা কিছু আমি আল্লাহর পথে শত্রুতায় ব্যয় করেছি, তার দ্বিগুন ব্যয় করবো আল্লাহর পথে। ইসলামের বিরুদ্ধে যত যুদ্ধ করেছি তার দ্বিগুন করবো ইসলামের পক্ষে। রোমান সাম্রাজ্য তৎকালীন সবচেয়ে বড় পরাশক্তির সাথে মুসলিমরা মুখোমুখি হয় ইয়ারমুকের যুদ্ধে, দেড় লাখ রোমান সেনার মেকাবিলায় মাত্র তেত্রিশ হাজার মুসলিম।
ইকরিমা (রাঃ) সিদ্ধান্ত নিলেন সুরক্ষিত রোমান বাহিনীর ভেতরে প্রবেশ করবেন। খালিদ (রা) বাধা দিয়ে বললেন – তোমার মৃত্যু হবে মুসলমিদের জন্য বড় আঘাত। ইকরিমা (রাঃ) বলেছিলেন- কাফের অবস্থায় আমি রসুলের (সাঃ) বিরুদ্ধে অনেক যুদ্ধ করেছি, আর এখন আমি মুসলিম রোমানদের দেখে পালিয়ে যাবো তা হতে পারে না।
ইকরিমা (রাঃ) এর বাহিনী লোকদের আহ্বান করলেন – কে কে আছো, আমার সাথে মৃত্যুর জন্য বায়াত করবে আমার কাছে, মোট ৪০০ মুজাহিদ তাকবির ধ্বনি দিয়ে রোমান বাহিনীর ভেতর ঢুকে গেল এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়তে থাকলো এবং তার আক্রমণে যে ক্ষতি হয়েছিল রোমানরা তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ইকরিমা (রাঃ) শহীদ হন।
এটা ইসলামের সৌন্দর্য্য, তাই পাপ করে নিরাশ না হয়ে আল্লাহর পথে ফিরে আসেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে আছে উওম প্রতিদান। পাপের পথে যতটা শ্রম, ত্যাগ, অর্থ ব্যয়, দৃঢ়তা ছিল ইসলামের পথে তার চেয়ে বেশি ত্যাগ, ব্যয়, দৃঢ়তা দেখিয়ে আল্লাহর প্রিয় হয়ে উঠেন।