হযরত ওমর (রা.) একদিন বললেন, আমি জানি না আমি বাদশাহ নাকি খলীফা। যদি বাদশাহ হয়ে থাকি তবে এটা খুব বড় কথা। একজন সাহাবী বললেন, হে আমীরুল মোমেনীন বাদশাহী এবং খেলাফতের মধ্যে তো বিরাট পার্থক্য রয়েছে।
বাদশাহ জনগণের উপর জুলুম করেন। গ্রহণ এবং প্রদানের ক্ষেত্রে ন্যায়নীতির তোয়াক্কা করেন না। অথচ খলীফা ন্যায়নীতি ব্যতীত কিছু গ্রহণ করেন না। ন্যায়-নীতি এবং সত্য পথ ব্যতীত সামান্যও ব্যয় করেন না।
হযরত ওমর (রা.) চুপ করে রইলেন। কিছুক্ষণ পর হযরত সালমান ফারসী (রা.)-এর মতামত জানতে চাইলেন। সালমান (রা.) বললেন, হে আমীরুল মোমেনীন আপনি মুসলমানদের যমীন থেকে যদি এক দিরহাম বা তার চেয়ে কম পরিমাণ মূল্যের জিনিসও গ্রহণ করেন এবং সেই জিনিস অন্যায় পথে ব্যয় করেন তবে আপনি বাদশাহ, খলীফা নন।
একথা শুনে হযরত ওমর (রা.)-এর দুই চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠলো। এই হল বাদশাহী আর শরীয়ার শাসকদের মাঝে পার্থক্য।
খলীফা মনোনীত হওয়ার পর হযরত ওমর (রা.) মসজিদে নববীতে দাঁড়িয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে এক ভাষণ দেন।
সেই ভাষণে আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসূল (স.)-এর প্রতি দরূদ সালাম পাঠিয়ে তিনি বলেন, হে লোক সকল আমি জানি তোমরা আমার কঠোর ব্যবহার দেখেছ (অথচ আজকের শাসকদের ভাষন দেখুন- তাদের তথাকথিত নেতার ও পূর্বপুরুষের কীর্তিকলাপের মিথ্যা প্রশংসা করে)। কারণ আমি রাসূল (স.)-এর সঙ্গে ছিলাম, তার খাদেম এবং অনুগত ছিলাম।
তিনি ছিলেন কোরআনের ভাষায় মোমেনদের জন্য অতিশয় দয়ালু। আমি ছিলাম রাসূল (স.)-এর সামনে খাপ খোলা তলোয়ারের মতো। তিনি আমাকে যা আদেশ করতেন আমি তা করতাম। তিনি আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। তারপর আল্লাহ তাঁর নবীকে ওফাত দিয়েছেন। ওফাতের সময়ে আল্লাহর রাসূল আমার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন। তাঁর সন্তুষ্টির কথা আল্লাহ কোরআনে উল্লেখ করেছেন।
এরপর আমি আবু বকরের (রা.) সঙ্গে ছিলাম। নবীজীর পরে তিনি খলিফা হন। সবাই জানে তিনি ছিলেন কোমল মনের মানুষ। আমি ছিলাম তাঁর সেবক। তাঁর কোমলতার সাথে আমার কঠোরতা মিশিয়ে দিয়েছিলাম। তিনি আমাকে কোন বিষয়ে নিষেধ করলে আমি সে কাজ করতাম না। অন্যথায় সেই কাজ করতাম। এভাবে চলছিল। এক সময় হযরত আবু বকর (রা.) ইন্তেকাল করেন। তিনি আমার উপর ছিলেন সন্তুষ্ট। আমি আবু বকরের কারণে সৌভাগ্য অর্জন করেছি। এখন খেলাফতের দায়িত্ব আমার উপর এসেছে। আমি জানি সমালোচকরা বলবে আগেই এতো কঠোর স্বভাবের ছিল এখন না জানি আরো কতো কঠোর ব্যবহার করবে। আমার বিষয়ে কাউকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নাই।
তোমরা রাসূল (স.)-এর সুন্নাহ সম্পর্কে জানো। অত্যাচারীদের জন্য আমার কঠোরতা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পাবে। সেই কঠোরতার মাধ্যমে আমি দুর্বল মুসলমানদের অধিকার আদায় করবো। তবে সৎ এবং ভালো মানুষদের সাথে আমার ব্যবহার হবে কোমল।
আর যারা জালেমদের সাথে কঠোর, বিরোধিতা করলে খারেজী বলে তাদের জানা উচিত – জালেমের প্রতি কঠোরতা সাহাবীদের আদর্শ যাতে অসহায়, দুর্বলরা, বঞ্চিতরা সুরক্ষা পায়।
আর উমর (রাঃ) এর উপদেশ মত- বিভিন্ন তন্ত্র, মন্ত্র, মতবাদ, কোন ব্যক্তি বা আলেমের অন্ধ অনুসরন না করে রসুলের (সাঃ) জীবনী জানুন ইনশাআল্লাহ জীবন বদলে যাবে।