হযরত ওমর (রা:) তখন মুসলিম বিশ্বের খলিফা, একদিন তিনি জনৈক বেদুইনের কাছ হতে ঘোড়া কিনলেন। ঘোড়ার দাম পরিশোধ করে তিনি ঘোড়ায় চড়লেন এবং তাকে হাকিয়ে নিয়ে গেলেন। কিছুদূর যেতেই ঘোড়াটি হোচট খেয়ে খোড়া হয়ে গেল। হযরত ওমর (রা:) ভেবেছিলেন হয়তো ঘোড়াটি আগে হতে খোড়া ছিল তাই বেদুইনের কাছে গিয়ে ঘোড়াটি ফেরত দিতে চাইলেন। ওমর (রা:) বেদুইনকে বললেন- “তোমার ঘোড়া ফেরত নেও এর পা ভাঙ্গা।” সে বলল- আমিরুল মুমিনিন আমি ফেরত নিতে পারব না, কারণ আমি যখন বিক্রি করছি তখন ঘোড়াটি ভালো ছিল। ওমর (রা) বললেন – ঠিক আছে একজন সালিশ মানা হোক, যে আমাদের বিরোধ মিটিয়ে দিবে। অতঃপর লোকটি শুরাইহ বিন হারিস নামে একজন দ্বীনদার জ্ঞানী ব্যক্তিকে সালিশদার হিসেবে পছন্দ করলেন ওমর (রা) ও তাতে রাজি হলেন। শুরাইহ বললেন- আমিরুল মুমিনিন! আপনি কি ঘোড়াটি সুস্হ অবস্হায় কিনেছিলেন। ওমর (রা:) বললেন – হ্যা। শুরাইহ বললেন- “তাহলে হয় আপনি ঘোড়াটি মূল্য দিয়ে কিনে নিন নয়তো ঘোড়াটি যে অবস্হায় ছিল সে অবস্হায় ফেরত দিন। একথা শুনে ওমর (রা:) বললেন- এটাই সঠিক বিচার বটে। তুমি সম্পূর্ণ নির্ভুল ও নায্য রায় দিয়েছো। তুমি কুফায় চলে যাও, আজ হতে তুমি কুফার বিচারপতি। হযরত আলী (রা:) যখন খলীফা তখন তিনি তার অতি প্রিয় বর্ম হারিয়ে ফেললেন। কিছুদিন পর জনৈক ইহুদির কাছে এটি দেখে তিনি চিনে ফেললেন। ইহুদি লোকটি কুফার বাজারে সেটি বিক্রি করতে এনেছিলেন। আলী (রা) তাকে বললেন এটি আমার বর্ম অমুক রাত্রে অমুক সময়ে উটের পিঠ হতে পড়ে গিয়েছিল। ইহুদি বলল- এটা আমার বর্ম এটা আমার দখলে রয়েছে। আলী (রা) বললেন- আমি এটা কাউকে দান করিনি, কারো কাছে বিক্রি করিনি, এটা তোমার কাছে আসলো কি করে। ইহুদি বলল চলেন কাজীর কাছে যাই। বিচারপতি ছিলেন সেই শুরাইহ। তিনি আলী (রা:) কে দুজন সাক্ষী আনতে বললেন। আলী (রা) বললেন- আমার ভৃত্য ও ছেলে হাসান সাক্ষী। বিচারপতি বললেন- ভৃত্যুর সাক্ষী নেয়া যাবে কিন্তু ছেলের সাক্ষী বাপের জন্য গ্রহণযোগ্য না। ফলশ্রুতিতে আলী (রা:) ইহুদিকে বর্ম নিয়ে যেতে বললেন, এই ছাড়া আমার কোন সাক্ষ্য নেই। ইহুদি তখনি বলে উঠলেন- আমি স্বয়ং সাক্ষ্য দিচ্ছি এটা আপনার বর্ম, কি আশ্চর্য মুসলিমদের খলিফা আমাকে বিচারপতির দরবারে হাজির করে আর বিচারপতি খলিফার বিপক্ষে রায় দেয়। এমন সত্য ও ন্যায় যে দ্বীনে রয়েছে আমি তা গ্রহণ করলাম এবং তিনি কালেমা পড়ে মুসলিম হন। হযরত আলী (রা:) বললেন- বেশ তুমি যখন ইসলাম গ্রহণ করছো আমি এটা তোমাকে উপহার দিলাম। আলী (রা:) বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে নিয়োগ দেন। আর ইহুদি ব্যক্তিটি যে মুসলিম হয়েছিল আলী (রা:) পক্ষে খারেজিদের বিপক্ষে জেহাদে শহীদ হন। একবার বিচারক শুরাইয়ের ছেলে এক আসামীর জামিন হন, আসামী মুক্তি পেয়ে পালিয়ে যায়, শুরাইহ আসামীর বদলে তার ছেলেকে জেলে আটকান। যতদিন আসামীকে পাওয়া যায়নি ততদিন ছেলেকে জেলে রাখেন, তিনি নিজে প্রতিদিন ছেলের জন্য খাবার নিয়ে যেতেন (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)। খলীফা রাশেদীনের যুগে ইসলামের এমন সুন্দর বিচারব্যবস্হা ছিল যেখানে স্বয়ং খলিফার বিপক্ষে রায় দেওয়া যেত এবং খলিফারা তা মেনে নিতেন ও বিচারকদের সম্মানিত করতেন।তখন সততার মূল্যায়ন করা হত আর চাটুকারদের ভাগ্যে ছিল অপমান। আর বর্তমান তাগুতি বিচারব্যবস্হায় চাটুকাররা আর্থিক সম্মান ও পদমর্যাদা পায়। এখন প্রভাবশালীদের তো দূরের কথা তাদের আত্মীয়, কর্মচারী এমনকি ক্ষমতাসীনদলের সবচেয়ে নিচের পদের লোকের বিচার হয় না। খলীফার বিচারব্যবস্হার সৌন্দর্য্যতায় বিধর্মীরা দলে দলে ইসলামের ছায়াতলে এসেছিল। আর এখন এমন এক সমাজব্যবস্থা যেখানে মুসলিমরা ইসলাম হতে দূরে সরে যাচ্ছে। ইসলামের এমন স্বর্নযুগ ছিল তখন কেউ চাইলে পাপ করতে পারত না। মদ নেই, গানবাজনা নেই, সুদ ও জেনা-ব্যাভিচারমুক্ত রাষ্ট্র ছিল। আজ মুসলিম চাইলেও পাপমুক্ত হতে পারছে না, মাদক ও গানবাজনার ব্যাপকতা, সুদের ধোয়াযুক্ত চারপাশ, জাতীয়তাবাদ ও শিরকের ছড়াছড়ি এমনকি ধর্ম নিয়েও নোংরা রাজনীতির খেলা চলে।