শয়তানকে যখন আল্লাহ তাআলা জান্নাত থেকে বের করে দিলেন, তখন শয়তান আল্লাহর কাছে মানুষের ক্ষতি করার জন্য বেশ কিছু ক্ষমতা চেয়ে নিয়েছেন। আর তা হলো-
- কেয়ামত পর্যন্ত হায়াত লাভ
- মানুষকে ধোকা দেয়ার ক্ষমতা লাভ
- সব দিক থেকে মানুষকে গোমরাহ করার ক্ষমতা লাভ
শয়তানকে দেয়া ক্ষমতার বিবরণও আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেন- সে (শয়তান) বলল, ‘সে দিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন, যেদিন তাদের (আদম সন্তানকে) পুনরুজ্জীবিত করা হবে।’ তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত।’ সে (শয়তান) বলল, ‘যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, সে কারণে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আপনার সোজা পথে বসে থাকব। তারপর অবশ্যই আমি তাদের কাছে তাদের সামনে থেকে, তাদের পেছন থেকে, তাদের ডান দিক থেকে, তাদের বাম দিক থেকে উপস্থিত হব। আর আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৪-১৭)। যুগ যুগ ধরে শয়তানের অনুসারী ফেরাউনরা আল্লাহর কাছে দোয়া করে আল্লাহ বিরোধী কর্মকাণ্ড করে তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য। যখন ক্ষমতা থাকে তখন শয়তানের মত অহংকরে লিপ্ত হয় আর যখন ধরা পড়ে তখন শয়তানের মত ইসলামকে ব্যবহার করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে রমযানের যাকাত হিফাযত করার দায়িত্বে নিযুক্ত করলেন। এক ব্যক্তি এসে অঞ্জলি ভর্তি করে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল। আমি তাকে পাকড়াও করলাম এবং বললাম, আল্লাহ্র কসম! আমি তোমাকে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত করব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি খুব অভাবগ্রস্থ, আমার যিম্মায় পরিবারের দায়িত্ব রয়েছে এবং আমার প্রয়োজন তীব্র। তিনি বললেন, আমি ছেড়ে দিলাম। যখন সকাল হলো, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু হুরায়রা, তোমার রাতের বন্দী কি করলে? আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! সে তার তীব্র অভাব ও পরিবার, পরিজনের কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়, তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, সাবধান! সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। ‘সে আবার আসবে’ আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উক্তির কারণে আমি বুঝতে পারলাম যে, সে পুনরায় আসবে। কাজেই আমি তার অপেক্ষায় থাকলাম। সে এল এবং অঞ্জলি ভরে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল। আমি ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। কেননা, আমি খুবই দরিদ্র এবং আমার উপর পরিবার-পরিজনের দায়িত্ব ন্যস্ত, আমি আর আসব না। তার প্রতি আমার দয়া হল এবং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকাল হলে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু হুরায়রা! তোমার বন্দী কী করলে? আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! সে তার তীব্র প্রয়োজন এবং পরিবার-পরিজনের কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, খবরদার সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। তাই আমি তৃতীয়বার তার অপেক্ষায় রইলাম। সে আসল এবং অঞ্জলি ভর্তি করে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল। আমি তাকে পাকড়াও করলাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে অবশ্যই নিয়ে যাব। এ হলো তিনবারের শেষবার। তুমি প্রত্যেক বার বল যে, আর আসবে না, কিন্তু আবার আস। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দেব। যা দিয়ে আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন। আমি বললাম, সেটা কী? সে বলল, যখন তুমি রাতে শয্যায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী ————————- আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়বে। তখন আল্লাহ্র তরফ হতে তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। কাজেই তাকে ছেড়ে দিলাম। ভোর হলে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, গত রাতের তোমার বন্দী কী করলে? আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! সে আমাকে বলল যে, সে আমাকে কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দেবে যা দিয়ে আল্লাহ আমাকে লাভবান করবেন। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি আমাকে বললেন, এই বাক্যগুলো কী? আমি বললাম, সে আমাকে বলল, যখন তুমি তোমার বিছানায় শুতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসী ———————- প্রথম হতে আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়বে এবং সে আমাকে বলল, এতে আল্লাহ্র তরফ হতে তোমার জন্য একজন রক্ষক মালাইকা নিযুক্ত থাকবেন এবং ভোর পর্যন্ত তোমার নিকট কোন শয়তান আসতে পারবে না। সাহাবায়ে কিরাম কল্যাণের জন্য বিশেষ লালায়িত ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, এ কথাটি তো সে তোমাকে সত্য বলেছে। কিন্তু হুশিয়ার, সে মিথ্যুক। হে আবু হুরায়রা! তুমি কি জান, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথাবার্তা বলেছিলে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন, না। তিনি বললেন, সে ছিল শয়তান। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৩১১, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস)। শয়তান এখানে নিজেকে মুক্ত করার জন্য প্রথমে অভাবী ব্যক্তি পরে আয়াতুল কুরসীর সূত্র দিয়েছিল কারণ জানতো আবু হুরাইরা (রাঃ) মত সাহাবীর কাছ হতে দুনিয়ার ধন-সম্পদ, নারীর লোভ দেখিয়ে মুক্ত হওয়া যাবে না শুধুমাত্র ইসলাম ও ইসলামী আবেগ ব্যবহার করে মুক্ত হতে পারবে। এছাড়া মালহামা ও ইস্তাম্বুল বিজয়ের পর শয়তান কষ্ট পেয়ে মুসলিমদের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য দাজ্জাল আসার গুজব ছড়াবে ফলে মুসলিমরা আতংকিত হয়ে গনীমত না নিয়ে সংবাদ যাচাই করতে যাবে। একই চরিত্র যুগ যুগ ধরে শয়তানের অনুসারী মানুষের মাঝে বিদ্যমান। শয়তান যেমন ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য কুটকৌশল করে আবার ধরা পড়লে ইসলামকে ব্যবহার করে তেমনি দেখবেন ক্ষমতাসীন অনেকেই অহংকারে লিপ্ত হয়ে ইসলামকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। যখনি কোন কারণে বিপদ বা ক্ষমতা নড়বড়ে হয়ে যায় তখন টুপি, ওয়াজ-মাহফিলে গিয়ে মুসলিমদের সহানুভূতি চায় যেন মুসলিমদের বিরোধীতার বদলে কিছুটা সমর্থন পায়। কেউ হজ্ব বা বোরকাকে ইস্যু করে কুকর্ম এড়িয়ে পাবলিক সহানুভূতি অর্জন করার কৌশল করে। ওদের অধিকাংশের ইসলামের প্রতি নূন্যতম ভালোবাসা নেই, ওরা নিজের স্বার্থে শয়তানের মত ইসলামকে ব্যবহার করে। বিপদ, স্বার্থ শেষ হলে শয়তানের মত অহংকার, অশ্লীলতা ও ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড করে চলে। আমি সবার কথা বলছি না – কারণ কে হেদায়েত পাবে আল্লাহই জানে তাই ওদের হতে সতর্ক থাকুন। আর এদেশে ইসলামের চেয়ে অশ্লীল তারকার মর্যাদা যেন বেশি। ইসলাম নিয়ে সমালোচনা/কটুমন্তব্য করলে শাস্তি পেতে হয় না, আরামে ক্ষমতায় থাকা যায় আর একজন অশ্লীল তারকার বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য করলে মিডিয়া সোচ্চার হয় ও পদ হারাতে হয় দ্রুত।