বেশিরভাগ মানুষের ধারণা আমরা দুনিয়ায় দুঃখ, কষ্ট, হতাশা, ব্যর্থ হয়ে আখেরাতমুখী বা ইসলাম মানি। তাদের বলি- “আল্লাহর রহমত হতে হতাশ হয় একমাত্র শয়তান” (সুরা ইউসুফ)। এক সময় প্রচুর গান শোনতাম, যখন বুঝলাম হারাম সংগীত শুনলে জান্নাতের সুমধুর সংগীত শুনতে পারবো না আর জান্নাতে গেলে আমাদের কন্ঠস্বর হবে দাউদ (আঃ) এর মত সুমধুর তখন হারাম গান শোনা ছেড়ে দিলাম এর বিকল্প হালাল নাশিদে আল্লাহ আনন্দ সৃষ্টি করে দিলো। নিজের চেহারাটা নিজের কাছেই খুব প্রিয় ছিলো। যখন চেহারায় দাগ পড়ত কষ্ট লাগতো। যখন বুঝলাম দাড়ি কাটলে এই চেহারা আগুনে পুড়তে পারে আর ভালো আমল করলে আমাদের চেহারা হবে ইউসুফ (আঃ) এর মতো তাই দাড়িটা রেখে দিলাম। ওরা বলে- আমরা দুনিয়ার অনেককিছু দেখিনি, বর্তমানে এভাবে চলা যায় না?! আমি বলি- যে আল্লাহ পৃথিবী, চাদ, সূর্য সবকিছুকে সচল রেখেছেন সর্বযুগে আর তার দ্বীন পৃথিবীতে চলবে না তা কেমন করে হয়!? আমি জীবনে অনেক ঘুরেছি, এই দুচোখে বহু সৌন্দর্য দেখেছে। আল্লাহর দুনিয়ার সৌন্দর্য্য আমাদের অন্তরে জান্নাতের পিপাসা বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই দ্বীনকে অস্বীকার করে কেয়ামতের দিন অন্ধ হয়ে উঠতে চাই না। ওরা বলে- তোমাদের সংখ্যা অতি নগন্য আর তোমাদের বিরোধীরা কত শক্তিশালী!? কুরআন বলে- “অধিকাংশ লোক ঈমান আনার পরও মুশরিক (সুরা ইউসুফ -১০৬)।” অধিকাংশ লোকই জাহান্নামী হবে তাহলে কি আমরা জেনেশুনে জাহান্নামীদের অনুসরণ করবো নাউজুবিল্লাহ!! আর আল্লাহর চেয়ে শক্তিশালী কে আছে!! জাহান্নামের চেয়ে কঠিন শাস্তি কি আছে!! ওরা অভিযোগ করে আমাদের ব্রেইন ওয়াশ নিজের পরিবারের খবর নাই বহিঃবিশ্বের মুসলিমদের নিয়ে ভাবে। আমি বলি- আমাদের ভাই, বোন, মা, বাবার জন্য রক্ত, অর্থ, সময় ও ওদের সন্তানকে যত্ন নিলে ভালো মানুষ উপাধি পাওয়া যায়, ওরা খুশি থাকে। অথচ আমাদের জীবন, অর্থ, সময়ের উপর একমাত্র অধিকার আল্লাহর। আল্লাহ ঘোষণা করেছেন- “মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই” (সুরা হুজুরাত)। এখানে আত্মীয়, দেশ নামক তার কাটার বেড়া নেই। তাহলে অন্যদেশের মুসলিম ভাই, বোন ও তাদের সন্তানদের নিয়ে ভাবলে উগ্রবাদী কেন হবো!? অথচ আল্লাহ বলেন- “তোমাদের কি হয়েছে যে তোমরা আল্লাহর পথে লড়াই করছ না অসহায় নারী, পুরুষ, ও শিশুদের রক্ষার জন্য!” (সুরা নিসা-৭৫)। ওরা ভাবে- আমরা অহংকারী, ঘাড়ত্যাড়া, পাগল, মিশতে পারে না কারো সাথে, কাউকে শ্রদ্ধা করে না। আমি বলি অহংকারের সংজ্ঞা বুঝনি, রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “অহংকার হলো সত্যকে গোপন করা (মানতে অস্বীকার করা) ও অন্যকে নিকৃষ্ট বলে জানা।” (সহীহ মুসলিম -৯১)। অহংকারী ছিল ইবলিশ, নমরুদ, ফেরাউন, আবু জাহেলরা তারা নিজেদের উৎকৃষ্ট দাবি করে আল্লাহর রসুলদের নেতৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করে পক্ষান্তরে ইব্রাহিম (আঃ), মুসা (আ, নূহ (আঃ), রসুলুল্লাহ’(সাঃ) শত বাধা, সমালোচনা স্বত্বেও দ্বীনে অটল ছিলেন। আর সম্মান, শ্রদ্ধা শুধু বয়সের উপর নির্ভর করে হয় না, শ্রদ্ধা করা মানে এই না তাদের অন্যায়ও মেনে নেওয়া। সম্মান ছিলো আবুবকর (রাঃ) এর মতো দ্বীনদারের জন্য অপরদিকে আবু লাহাব, আবু জাহেলদের মত তাগুত ও তাদের সমর্থকদের সম্মান দেখানো হল আল্লাহর দ্বীনকে অপমান করার প্রচেষ্টা চালানো। যারা আমাদের তুচ্ছ ভাবে, উপহাস করে, যাদের কাছে আমাদের বক্তব্য মূল্যহীন, তাদের সাথে হয়তো সম্পর্ক রাখা যায়, কিন্তু যারা আমাদের ইসলাম ও ইসলামি বক্তব্যকে তুচ্ছভাবে, যাদের সঙ্গ দ্বীন হতে দূরে রাখতে পারে সে যত আপনই হোক তার সাথে দূরত্ব বজায় রাখাই শ্রেয় মনে করি। এমন অনেক মানুষ আজও আছে যারা আমাকে দেখেওনি তবুও আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, শত মানুষ এখনও আমার সাক্ষাৎ চায়, ঘন্টার পর ঘন্টা এখনও কথা চলে তবু শেষ হয় না। যাদের এত ভালোবাসি তাদের ছাড়া কিভাবে জান্নাতে থাকবো? তাই দাওয়াত দি। আর একটু ভাবুন আপনারা যাদের ভালোবাসেন ও যে পথে আছেন, তাদের সাথে জান্নাতে থাকতে পারবেন না, জাহান্নামের সঙ্গী হবে। আসলে যারা আমাদের উপহাস করে তা এজন্য নয় যে আমরা অজ্ঞ বরং দ্বীন সম্পর্কে তারা অজ্ঞ। ওরে বলবে তোমরা ব্যর্থ!? আমি বলি- দুনিয়ার ব্যর্থতা/ সফলতা নির্ধারণ করতে পারেন তিনি যিনি দুনিয়া ও তার ভিতরের সকল নেয়ামত সৃষ্টি করেছেন আর আল্লাহ ঘোষণা করেছেন – “প্রকৃত সফলতা আল্লাহর সাক্ষাৎ ও জান্নাত লাভে।” আর মাঝে মাঝে সালাত পড়লে মনে হয় আল্লাহ অতি নিকটে এটাই পরম প্রাপ্তি। বিশ্বের ৯৯.৯৯ ভাগ লোকও যদি আমাদের বিরুদ্ধে যায় ইনশাআল্লাহ এই পথে অটল রইবো আমরা।