আমাদের চাওয়া ও সাহাবীদের চাওয়া

আমাদের বেশিরভাগ চাওয়া/প্রার্থণা সবই দুনিয়াকেন্দ্রিক। কেউ হয়তো দান করে ছবি তুলে তা প্রচার করে খ্যাতির জন্য যা রিয়া (লৌকিকতা) ছোট শিরক। কেউ হয়তো সালাত শেষে মুনাজাতে শুধু দুনিয়ার খ্যাতি, সম্পদ, স্ত্রী, সুখ চায় আল্লাহর কাছে। অথচ এই দুনিয়া ধ্বংসশীল আপনি-আমি যা পাই না কেন একদিন তা শেষ হয়ে যাবে। দিনের সূর্য উদিত হয় পরম সৌন্দর্য্যে মায়াবী অনুভূতি নিয়ে, দুপুরে তার প্রখর তেজ, বিকালে তেজহীন ও সন্ধ্যায় হয় বিলীন। প্রথম দিনের চাঁদ বহু আকাঙ্ক্ষিত। এরপর পনের দিনে পূর্নিমায় পূর্ণ মহিমা ছড়ায়, এরপর ক্ষয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। এটা আমাদের শিক্ষণীয় উদাহরণ- আমাদের শৈশব বড় মায়াবী, যৌবন দুপুরের সূর্যের মত তেজ ছড়ায়। যে তাকে দ্বীনের কাজে লাগায় সে সফল, যে যৌবনের উত্তাপে জালেম হয় সে ঘৃনিত। সন্ধ্যার সূর্য ও শেষ চন্দ্রের মত আমরাও বিলীন হয়ে যাবো। তাই আমল যত ছোট হোক আল্লাহর কাছে জান্নাত কামনা করা উচিত। কারণ আল্লাহর রহমত অনেক বড়। সাহাবীরা তাই চাইতেন। আবু মুসা (রা:) হতে বর্নিত- “রাসুলুল্লাহ( সা:) একজন বেদুঈনের বাড়িতে অতিথি হন। সে রাসুলুল্লাহকে (সা:) খুব খাতির সম্মান করেন। রাসুলুল্লাহ বলেন- ‘মদীনায় গেলে তুমি আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে।’ কিছুদিন পর বেদুঈন রাসুলুল্লাহর (সা:) সাথে সাক্ষাৎ করে, রাসুলুল্লাহ (সা:) তাকে বলেন- কিছু চাও, সে একটি হাওদাসহ একটি উষ্ট্রী ও ছাগী চাইলো। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেন- বড়ই আফসোস! তুমি বনী ইসরাইলের বুড়ির মত চাও নি। মুসা (আ:) যখন মিশর ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় হল তখন ইউসুফ (আ:) এর ওসিয়ত মতে তার লাশটি সাথে করে নিয়ে যেতে চাইলেন কিন্তু লাশের সন্ধান জানতেন শুধু এক বুড়ি। সে এর বিনিময়ে জান্নাতে মুসা (আ:) এর সাথে থাকতে চাইলেন। মুসা (আ:) এতে ভারীবোধ করল। আল্লাহ তখন ওহী পাঠিয়ে মুসাকে (আ:) রাজী হতে বললেন ফলে বুড়ি লাশের তথ্য জানিয়ে জান্নাতে মুসা (আ:) এর সাথে ঠিকানা পেয়ে গেলেন।(তাফসীরে ইবনে কাসীর, সুরা শুআরা- ৫২)। সামান্য জ্ঞানের বিনিময়ে তিনি পেলেন বিশাল মর্যাদা। সাহাবীরা আমলের বদলে রসুল (সাঃ) এর জান্নাতের সঙ্গী হতে চাইতেন। অথচ এখন অনেক বক্তারা সামান্য টাকা ও খ্যাতির জন্য সত্য গোপন করছে, টাকার ওয়াজে তাদের পাওয়া যায় কিন্তু জুমা বা মসজিদে তাদের সেরকম ওয়াজ শুনা যায়না। রাসুল (সা) ও সাহাবীরা ওয়াজ/খুতবা মসজিদে দিয়েছিলেন বেশি নাকি ওয়াজের মাঠে? যাকাত, সদকা করে সাহাবীরা কবুল করার দোয়া করতেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি চাইতেন আর এখন অনেকে নিজের খ্যাতির জন্য লোক দেখানো যাকাত, দান করে।আমাদের সামান্য জ্ঞান বা সম্পদ দানের বিনিময়ে রাসুল (সা:) ও সাহাবীদের সাথে জান্নাত চাওয়া উচিত। কারণ আমাদের আমল ছোট হতে পারে, আল্লাহর রহমত অনেক বড়। আসলে আমরা ছোটবেলা হতে পিতা-মাতা বা আত্মীয়স্বজনের কাছে সাধ্যাতীত কিছু চাই অথচ আল্লাহর কাছে মহামূল্যবান জান্নাত রয়েছে তার কাছে শুধু অতি তুচ্ছ জিনিস চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *