এদেশে থেকে ইসরায়েলসহ মুসলিমদের শত্রুদের বিরোধিতা করা সহজ, জনপ্রিয়তাও মিলে। কিন্তু দেশীয় তাগুত, জালেম, চাদাবাজের বিরোধিতা করা কঠিন ও জুলুমের শিকার হতে হয়, সাহসেরও প্রয়োজন হয়। সমাজের জুলুমের বিরোধীতায় খুব কম লোককে পাশে পাওয়া যায়।
বহুদূরে মুসলিম বোনের নির্যাতন, ধর্ষনের প্রতিরোধ করার ইচ্ছে থাকলেও সাধ্য আমাদের নেই। কিন্তু যখন আমাদের অতি পাশে প্রতিবেশী বোনটা ধর্ষিত হয়, এমনকি কোলের শিশু ধর্ষিত হচ্ছে, আমাদের সেই প্রতিবাদী ও জেহাদী চেতনা কোথায় হারিয়ে যায়!? আমরা সংখ্যায় অজস্র, ভূখন্ড, ভাষা নিজেদের তবুও ধর্ষিতদের প্রাপ্য বিচার দিতে পেরেছি কি!?
অনেকে রোহিঙ্গাদের বের করে দিতে চান বা আশ্রয় দিতে চান না এই অজুহাতে ওরা খারাপ। ওদের কারণে দেশে অভাব সৃষ্টি হবে। অথচ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাপ শির্ক।আর সবচেয়ে বড় অপরাধী নফসের শির্ককারী মুনাফিক। তাদের কি এদেশ হতে বের করে দিতে পারবেন – যারা ইসলামের নামে গণতন্ত্রের রাজনীতি করে হাজার কোটি চাদা তুলে, ব্যয় করে হারাম গণতন্ত্রের পিছনে।
মূর্তি পাহারার পিছে কোটি টাকা খরচ করে, কুফরী সংবিধান ও আইন রক্ষা তাদের নৈতিক দায়িত্ব মনে করে। এর পিছনে মুসলিমদের ট্যাক্সের টাকাও রয়েছে। অথচ অসহায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান করে। শুধুমাত্র হারাম গনতন্ত্র আর ভন্ড বক্তাদের ওয়াজ, বিলাসী জীবনযাপনের পিছনে যে খরচ হয় তা দিয়ে রোহিঙ্গাদের খাদ্য, আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যায়।
গাজাবাসী মরছে সেজন্য সৌদী, জর্ডান, মিশর, আরবদেশগুলোর সমালোচনা করি। বক্তারা তাদের পশ্চিমার দালাল বলে হাজার হাজার টাকা আয় করে – অথচ তার চেয়ে জঘন্য আচরণ আমরা রোহিঙ্গাদের সাথে করে চলছি অধিকাংশ আলেমই চুপ। কারণ ইসরাঈলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিল জনপ্রিয় হওয়া যায়- ইসরাইল জানেই ওরা কিছু করতে পারবে না তাই আঘাত করবে না। কিন্তু রেহিঙ্গাদের পক্ষ নিয়ে নিজ প্রশাসনের সমালোচনা করলে জেল, জুলুম আসতে পারে অথবা জনপ্রিয়তা কমে যেতে পারে।
আর রোহিঙ্গাদের মধ্যে কেউ অপরাধ করলে তাদের ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করে ওদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কিন্তু এটা যদি ভাবেন – ওদের আশ্রয় দিলে রিজিকের অভাব হবে। নাউজুবিল্লাহ, রিযিকদাতা আল্লাহকে আপনারা কৃপন ভাবেন। তাহলে জেনে রাখুন- বন্যা, পাহাড় ধ্বস, ভূমিকম্প দিয়ে তিনি রিযিকের ক্ষতির আযাব দিতে পারেন।
আবু হুরাইরা (রা:) বর্ণনা করেছেন যে নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের পার্থিব দুর্ভোগ দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দুর্ভোগগুলোর কোনো একটি দূর করে দেবেন। আর যে কোনো ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তির (দায়) সহজ করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার (দায়) সহজ করবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইকে সহযোগিতা করতে থাকে, আল্লাহও তার সাহায্য করতে থাকেন।
যে ব্যক্তি এমন পথে চলে, যাতে সে বিদ্যা অর্জন করে, তার জন্য আল্লাহ জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।
আর যখন কোনো একটি দল আল্লাহর ঘরে একত্র হয়ে আল্লাহর কিতাব পড়ে এবং আপসে তা অধ্যয়ন করে, তখন তাদের ওপর প্রশান্তি ঝরে পড়ে, তাদের (আল্লাহর) রহমত আচ্ছাদিত করে, মালাইকা তাদের বেষ্টন করে এবং আল্লাহ তাঁর কাছের মালাইকার সঙ্গে তাদের নিয়ে আলোচনা করেন। আর যাকে তার আমল বিপরীত পথগামী করেছে (অর্থাৎ নেকির কাজ করেনি), তার বংশ তাকে অগ্রগামী করতে পারবে না। (মুসলিম)
মদীনাবাসী রসুল (সা:) ও মুহাজিরদের আশ্রয় দিয়ে বরকত পেয়েছিলেন দুনিয়া ও আখিরাতে।
আর মাতৃর কিছুদিন আগে – পাকিস্তানের পাকতুস্থানসহ বহু জায়গায় আফগানিস্তানের অসহায় আশ্রয়হীন শরানার্থীদের বিরুদ্ধে বিরূপ আচরন করেছিল, তাদের নাগরিকত্ব ও বিভিন্ন অধিকার হতে বিরত রেখেছিল এজন্য যে তাদের কারণে দেশের রিজিক কমে অভাব সৃষ্টি হচ্ছে।
এখন বন্যা, ভূমিধ্বসে পাকতুস্থানের অনেক পাক নাগরিক আশ্রয়হীন, রিজিকের উপর আঘাত এসেছে। সিরিয়া, ফিলিস্তিন, ইয়েমেনসহ বহুদেশে নিষ্পাপ শিশুদের ক্ষুধা, কষ্ট দেখে অনেক কিছু করতে মন চায়- অথচ সারা দেশে ফুটপাত জুড়ে ক্ষুধার্ত অসহায়, আশ্রয়হারা শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ছড়িয়ে আছে আমরা চাইলে অনেক কিছু করতে পারি। আসলে আমরা কি কার্যকর কিছু করছি! প্রতিবেশীর হক কতটা আদায় করছি?
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জিবরীল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর হকের ব্যাপারে এত বেশি তাকিদ করেছেন যে, আমার কাছে মনে হয়েছে প্রতিবেশীকে মিরাছের অংশিদার বানিয়ে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী ৬০১৪; সহীহ মুসলিম ২৫২৪)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৮৫)
বহুদূরের পবিত্রভূমির ওয়াজ করে অনেকে জেহাদের ফজিলত জানাচ্ছে, আবার আড়ালে অনেকে নিজেকে জনপ্রিয় করছে। অথচ দ্বীন ইসলাম ও মুমিনের মূল্য যেকোন ভূমির চেয়ে বেশি, তাহলে অতি নিকটবর্তী মায়ানমারের জন্য আমাদের জেহাদের ওয়াজ ও প্রস্তুতি কই ছিল বা কই গেল!? আর বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মুমিন রসুলের (সা:) চরিত্র নিয়ে যারা উপহাস, অবমাননা করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আসলে কার্যকর কিছু কি করতে পেরেছি!?
এখানে সংখ্যায়, জনবলে দুর্বল ও বহুদূর ভূখণ্ডের অজুহাত রোজ কেয়ামতে কাজে আসবে কি!?
প্রকৃত সমস্যা হল জাতীয়তাবাদ!
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘শিগগির মানুষ তোমাদের আক্রমণ করার জন্য একে অপরকে আহ্বান করতে থাকবে, যেভাবে মানুষ তাদের সঙ্গে খাবার খাওয়ার জন্য একে অপরকে আহ্বান করে।’ জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! তখন কি আমরা সংখ্যায় কম থাকবো।’ তিনি বললেন, ‘না, বরং তোমরা সংখ্যায় হবে অগণিত। কিন্তু তোমরা সমুদ্রের ফেনার মতো হবে, যাকে সহজেই সমুদ্রের স্রোত বয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা তোমাদের শত্রুর অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দেবেন এবং তোমাদের অন্তরে আল-ওয়াহান ঢুকিয়ে দেওয়া হবে।’ জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আল-ওয়াহান কি?’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল-ওয়াহান হলো- দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৭৫৩৯)
আমাদের ইসলাম ও মুসলিমের প্রতি আবেগ, ভালোবাসা আছে সত্যি কিন্তু দুনিয়ার ভালোবাসা ও মায়ার কাছে বার বার তা হার মেনে যায়। একদিকে আমাদের আলোচনা, প্রচারনা চলে বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত ভূমি, অসহায় রক্তাক্ত মুসলিম শিশুর। অন্যদিকে দুনিয়ার মায়ায় ক্রিকেট, ফুটবলের বিজয় উল্লাস আমাদের দুঃখ ও দায়িত্ব ভুলিয়ে দেয়।