আমরা কেন বেঁচে থাকি

আদম (আ:), নূহ (আ:), ইব্রাহীম (আ:), মুসা(আ:) দীর্ঘ হায়াত পেয়েছিলেন। তারা তাদের জীবনকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করেন। আজও দ্বীন ইসলামে অবদানের কারণে দুরূদে মুসলিমরা ইব্রাহিম (আ:) ও তার বংশধরের জন্য দোয়া করে।নবী ও রাসুলগণ দীর্ঘ হায়াত পেয়ে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও প্রচারে কাজে লাগিয়েছেন। রসুলদের স্বাধীনতা দেওয়া হয়, তারা কি পৃথিবীতে থাকতে চাইবেন না চলে যেতে চান? কিন্তু রসুলরা চলে যাওয়াকে (মৃত্যু) প্রাধান্য দিয়েছেন। (বুখারিঃ ৬৫০৯)। কোন রসুল নেক আমলের জন্যও বাঁচতে চাননি। অথচ আমাদের কেবল দীর্ঘহায়াত প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা। কারণ- “দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা আর কাফেরের জন্য জান্নাত।” (বুখারী ৪৭৯)। একটা ভালো জেলখানাতেও মানুষ প্রিয়জনের সান্নিধ্য হতে দূরে থাকে। আর মুমিন/নবী/রাসুলের কাছে সবচেয়ে প্রিয় হল আল্লাহর সাক্ষাত, জীবিত অবস্হায় যার সাক্ষাত সম্ভব নয়। হযরত আবু হুরাইয়া (রা) হতে বর্ণিত- “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন- ‘যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, তার কসম দিয়ে বলছি, মুমিন ব্যক্তিদের মন আমাকে পিছনে ফেলে যুদ্ধে যেতে চায় না এবং আমি তাদের জন্য বাহন পাই না, এরকম যদি না হতো, আমি কোন দল আল্লাহর পথে যুদ্ধে পাঠিয়ে পিছনে বসে থাকতাম না। যার কুদরতি হাতে আমার প্রাণ, তার কসম দিয়ে বলছি আমি আল্লাহর পথে শহীদ হতে ভালোবাসি। আবার আমাকে জীবিত করে, তারপর আমি আল্লাহর পথে শহীদ হতে ভালোবাসি। আবার আমাকে জীবিত করে, তারপর আমি আল্লাহর পথে শহীদ হতে ভালোবাসি।” (বুখারী, মুসলিম)। প্রধান তিন সাহাবী উমর(রা:), উসমান(রা:), আলী(রা:) ছিলেন শহীদ। পক্ষান্তরে অভিশপ্ত শয়তান দীর্ঘ হায়াত কামনা করেছিল মানুষকে পাপের পথে আহ্বান করতে ও নিজের পাপবৃদ্ধি করতে (সুরা ছোয়াদঃ ৭৮-৮২)। তার এই হায়াত বৃদ্ধি জাহান্নামের শাস্তি বৃদ্ধির কারণ হবে। নবী ও রাসুলরা জীবনে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য মৃত্যুকে সাদরে মেনে নিয়েছিল আর শয়তান নিজের অহংকার, ধোকা-প্রতারনা, পাপের রাজত্ব কায়েম করতে দুনিয়াতে দীর্ঘজীবী হতে চেয়েছিল। আমাদের চরিত্রটা একটু মিলিয়ে দেখি, ছাত্র/ছাত্রীরা রাত্রে এই আশা নিয়ে ঘুমায় কাল কলেজ-স্কুলে, চ্যাটে, আড্ডায়, হাসি-গান বা প্রেমে সময় কাটাবে। কয়জন স্বপ্ন দেখে যে সকালে উঠে ফজরের সালাত পড়বে ও সারাদিন দ্বীনের পথে চলবে। ব্যবসায়ী আশা করে আগামীকাল আরও বেশি লাভ করবে তাইতো হালাল-হারাম যাচাই করে না। হালাল ব্যবসায়ীর অভাব, আর ধোকা-প্রতারণা ভরা ব্যবসা। অনেক আলেমের লক্ষ্য হল মিথ্যে ওয়াজ শুনিয়ে জনপ্রিয়তা ও অর্থ অর্জন করা। কারো সকাল-সন্ধ্যা কাটে গান, খেলা, ছবি, গীবত, গালিগালাজে ভরপুর বাজে আড্ডায়। আমাদের জীবন যেন রাসুল ও সাহাবীদের চেয়ে দামী, যারা আল্লাহর রাস্তায় মরতে চেয়েছিলেন। আর আমরা শয়তানের মত পাপের রাজত্ব ও দুনিয়া ভোগের আশায় বাচতে চাই। এ সময়ের কথাই রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- “শীর্ঘ্রই মানুষ তোমাদেরকে আক্রমন করার জন্য আহ্বান করতে থাকবে, যেভাবে মানুষ খাবার খাওয়ার জন্য একে অপরকে আহ্বান করে। জিজ্ঞেস করা হল: তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হবো? তিনি বললেন- না বরং তোমরা সংখ্যায় অগণিত হবে। কিন্তু তোমরা সমুদ্রের ফেনার মত হবে যাকে সহজে সমুদ্রের স্রোত (অন্য হাদীসে- খড়কুটোর মত) ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ তোমাদের শত্রুর অন্তর হতে তোমাদের ভয় দূর করে দিবেন এবং তোমাদের অন্তরে আল-ওয়াহান ঢুকিয়ে দিবেন। জিজ্ঞেস করা হল- আল-ওয়াহান কি? তিনি বললেন- দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে (আল্লাহর রাস্তায়) অপছন্দ করা।” (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ, হাদীসের মান-সহীহ)। কিছু আলেমের অভিমত- সবাই মিলে খেতে বসলে পাত্রের খাদ্য দ্রুত শেষ হয়ে যায় তেমনি কাফেররা একে অপরকে আহ্বান করবে মুসলিমদের সমূলে ধ্বংস করার জন্য। আজ তার প্রমাণ মিলে সারাবিশ্বে মুসলিমদের ওপর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষন চলছে আর অসহায় নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ কাউকে ছাড়ছে না। অথচ আমাদের সংখ্যা অসংখ্য, অনেক শক্তিশালী মুসলিম অধূষ্যিত দেশ থাকাস্বত্বেও ছোট মায়ানমারও আমাদের ভয় পায় না কারণ আমরা দুনিয়াকে ভালোবাসি এর জন্য বাচতে শিখেছি আর আল্লাহকে ভালোবেসে তার জন্য শহীদ হতে ভুলে গিয়েছি””””!!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *