আমরা কি ফেতনা ছড়াই (শিয়া মতবাদ)!

দ্বীনের পথে সবসময় দুঃখ-কষ্ট, ভয়ভীতি জড়ানো থাকে।হতাশ হওয়ার কিছু নেই আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। আমাদের পুরস্কার জান্নাতের তুলনায় এসব কষ্ট অতি নগন্য। দ্বীন ইসলাম প্রকাশ করলে- মানুষ অপবাদ, গালি দিবে সেটা স্বাভাবিক যার জন্য আল্লাহ মহাপুরস্কার রেখেছেন।

তবু কিছু কথার উত্তর দিতে হয় এজন্য জালেমরা ইচ্ছেকৃত মিথ্যা অপবাদ দেয় ও সত্য দ্বীন শেখা হতে মানুষকে বিরত রাখতে চাইছে। আহলে বায়াতের মর্যাদার কথা বললে শিয়া, আবার শিয়াদের বিরুদ্ধে বললে খারেজী উপাধি দিচ্ছে। অনেকে নিজেদের সহীহ আকীদার দাবি করেন আর সালাফদের নিয়মনীতি অনুসরণ করার দাবি রাখেন। অথচ ঠিকই নির্দিষ্ট আলেমের ফাতওয়া মেনে চলেন। সাহাবীদের মতপার্থক্য দেখা দিলে কুরআন, সুন্নাহ বা হাদীস অনুযায়ী সমাধান করতেন। অথচ সালাফদের মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে আপনারা কুরআন, সুন্নাহ না মেনে মনমতো ফাতওয়া মানেন। তাহলে হকপন্থী হলেন কিভাবে, না নফসপন্হী বা নফসের অনুসারী হলেন?

আর আপনাদের সালাফের পরিধি কতটুকু? আহলে বায়াত রক্ত দিয়ে হক্ব জানিয়ে গেছেন তারা কি সালাফ নয়? তাদের আদর্শ, সুন্নাহ, হাদীসের বিপরীত ফাতওয়া এনে আমরা সহীহ আকীদার অনুসারী বলাটা অবান্তর।

কতজন আলেমের বই বা হাদীস পড়েছেন? বরং পছন্দনীয় বক্তার লেকচার শুনে ভাবছেন আপনারা সব জেনে গেছেন। তাহলে ভাববো আপনারা অন্ধ অনুসারী। পার্থক্য একটাই, কেউ ভন্ড পীরের আর কেউ শায়েখের।

অনেক সালাফ বা আলেমের নাম জানেন ও বলেন অথচ আহলে বায়াত হক্বের দলিল তা জানেন না। আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ), ঈমাম যায়েদ (রহ), মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (রহ)-এর আত্মত্যাগ জানেন না! নাম জানেন না। কোন সালাফ আছে তাদের চেয়ে দ্বীন বেশি বুঝতো বা মেনেছে? সাহাবীদের পর তারাই শ্রেষ্ঠ যাদের হাতে বায়াত দিয়ে ইমাম আবু হানিফা (রহ), ঈমাম মালেক (রহ) জুলুমের শিকার হয়েছেন।

তাহলে স্বীকার করে নেন আপনারা ততটুকু জানেন যতটুকু আপনাদের শায়েখরা বলে- অথচ তাদের মতে শ্রেষ্ঠ তাফসীর ইবনে কাসীর আর তার লেখা সীরাত গ্রন্থ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া। হক্ব জানতে চাইলে জেনে নিন ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ তম খন্ডে আহলে বায়াতের হক্বে অটল থাকার কাহিনী, আত্মত্যাগের ঘটনা যা ঈসা (আ.) আসা পর্যন্ত চলবে।

না এগুলো আজ আমরা লিখেছি বরং শত শত বছর ধরে হক্বপন্থী আলেমরা লিখেছেন। আর আপনাদের শায়েখরা কাটসাট করে জানায় আর বহু হক্ব লুকিয়ে রাখে। আপনার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ঈমানকে কেন নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে তুলে দিচ্ছেন? নিজেরা গবেষণা করুন। অথচ আপনারা দুনিয়ার আসহাব বিশ্বাস করে অন্যের হাতে তুলে দেন না! তাহলে যাদের মিম্বার হতে এই সকল হাদীস বর্ননা হয় না, আর আপনারা ভাবছেন তারা দ্বীনের সবচেয়ে বড় সেবক। কারা সত্যি বলছে কারা মিথ্যা বলছে যাচাই করুন অযথা গালি, বিরুপ মন্তব্য না করে। প্রকৃত জাহেল সেই নয় যে জানে না, বরং সেই যাকে দাওয়াহ দিলে যাচাই বাচাই না করে পছন্দের অনুসরণ করে।

ফেতনার সাগরে বেচে থাকতে হলে নিজেকে সাতার কাটা, নৌকা চালানো শিখাতে হবে, কতদিন অন্যদের নৌকার ভরসায় থাকবেন? ওরা আপনাদের ডুবাবে! নিজেও ডুববে।

আর কেউ আহলে বায়াত দাবি করলে তাকে কুরআন, সুন্নাহর বিপরীত গিয়ে সমর্থন করি না। তেমনি কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবী, আহলে বায়াতের আমলের বিপরীত যত শায়েখের ফাতওয়া আছে তা বাতিল মনে করি।

আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তোমরা অন্ধকার রাতের টুকরোসমূহের মত (যা একটার পর একটা আসতে থাকে এমন) ফিতনাসমূহ আসার পূর্বে নেকীর কাজ দ্রুত করে ফেল। মানুষ সে সময়ে সকালে মুমিন থাকবে এবং সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে অথবা সন্ধ্যায় মুমিন থাকবে এবং সকালে কাফের হয়ে যাবে। নিজের দ্বীনকে দুনিয়ার সম্পদের বিনিময়ে বিক্রয় করবে। [মুসলিম ১১৮, তিরমিযি ২১৯৫, আহমদ ৭৯৭০, ৮৬৩১, ৮৮২৯]

বহু আলেম, মুসলিমকে দেখবেন কাল যেটাকে কুফর, শিরক বলতো মামলা, হামলার ভয়ে বা লোভে সেটাকে ইসলাম প্রচার করছে অথবা এসব কুফরী আকীদার লোকদের সাথে জোট করছে।

আমরা কি শিয়া মতবাদ ছড়াই?

আমাদের কালেমা ও আযান রসুল (সা), সাহাবীদের আদর্শ অনুযায়ী। আর অধিকাংশ শিয়াদের কালেমা, আযানে আলী (রা) ওলীউল্ল্যাহ নাম উল্লেখ রয়েছে। শিয়ারা ঈমামতে বিশ্বাসী আর আমরা খেলাফতে। শিয়াদের মাহাদী (হাফি) এর জন্ম হয়েছে বহু আগে আর আমরা জানি না তার জন্ম হয়েছে কিনা? তবে আশা রাখি এই – তিনি আসবেন মক্কায় তার হাতে খলিফার বায়াত হবে।

আমরা আবু বকর, উমর, উসমান (রা) সহ সকল নেককার সাহাবী ও উম্মুল মুমিনদের ভালোবাসি ও আমাদের আদর্শ মানি। এমনকি আবু বকর (রা), উমর (রা), উসমান (রা) কে আলী (রা:) এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ মানী! যা আলী (রা) নিজেও ভাবতেন।

শিয়ারা কি তা মানে?

অনেক শিয়ারা ঈমামতে বিশ্বাসী সুতরাং ঈমামের কথাকে গুরুত্বপূর্ণ দলিলের মত মানে। আর আমরা কুরআন-সুন্নাহ, খেলাফাহ রাশেদীনের সুন্নাহকে মেনে চলি। অধিকাংশ আলেমরা খেলাফাহ রাশেদীন শুধু চার সাহাবীকে (রা) ঘোষণা করে অথচ হাসানও (রা:) খেলাফাহ রাশেদীনের অন্তর্ভুক্ত। এখন কি তাদের নাসেবী বলবেন?

আহমাদ ইবন মানী’ (রহঃ) ….. সাফীনা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের খিলাফত হবে ত্রিশ বছর। এরপর হবে বাদশাহী। (সহীহ, সহিহাহ ৪৫৯)

আর হাসান (রা:) এর ৬ মাস পর্যন্ত ত্রিশ বছর হয়।

আমাদের দলিল কুরআন, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজিসহ সকল সহীহ হাদীসগ্রন্থ। এসব ঈমামগণ কি শিয়া ছিলেন! শিয়ারা এসব গ্রন্থের হাদীসগুলোকে সহীহ বলে মানে। শিয়ারা কারবালা নিয়ে বাড়াবাড়ি করে অথচ আমরা কারবালার আদর্শ প্রচার করি – যা ছিল বিদআতী রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে উম্মতকে জাগানোর সংগ্রাম। এভাবে বহু কিছু উল্লেখ করা যায়। প্রত্যেকের নিয়ত আল্লাহ জানে সেই অনুযায়ী শাস্তি ও পুরষ্কার হবে।

এতই যদি নিশ্চিত থাকেন আমরা ফেতনা ছড়াচ্ছি – তাহলে দুআ করুন যারা ইসলামের নামে মিথ্যা ছড়ায় তাদের হেদায়েত দিক অথবা ধ্বংস করুন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ উত্তম বিচারক, তিনিই ফায়সালা করবেন। সকল প্রকার অপবাদকারীর ফেতনা হতে ইসলাম ও মুসলিমকে হেফাজত করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *