আজ সর্বত্র পাপের ছড়াছড়ি, এত ওয়াজ, মাহফিল, দাওয়াতের কার্যকম চলছে তবুও পাপ কমছে না বরং বাড়ছে। কারণ প্রকৃত ইসলাম আজ অপরিচিত হয়ে গেছে, মানুষ আজ নিজের খেয়াল-খুশি মত ইসলামকে মানছে আর তারা ইসলাম জানতে চায় শুধু নিজের পছন্দনীয় বক্তাদের ওয়াজ হতে। রাসুলের (সা:) সীরাত, কুরআনের তাফসীর বেশিরভাগ মুসলিমের আজ অজানা। তাই তো একজন মুসলিম হয়তো বিশ বছর ধরে নামাজ পড়ছে ঠিকই কিন্তু তাগুত কি সে জানে না অথচ তাগুত বর্জন না করে কেউ মুসলিম হতে পারে না।আল্লাহপাক বলেন- “আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যে এ মর্মে রাসুল পাঠিয়েছে যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর তাগুতকে বর্জন কর।”(সুরা নাহল-৩৬)। অপর আয়াতে এসেছে- “অতঃপর, যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর উপর ঈমান আনে, সে দৃঢ়তার রজ্জু ধরল যা কখনও ছিন্ন হবার নয়।”(সুরা বাকারাহ-২৫৬)। আজ মুসলিমরা নামাজ পড়ছে, হজ্ব, রোযা রাখছে ঠিকই রাষ্ট্র নেতৃত্বে তাগুতকে মানছে যা শিরক। আবার সুদ, জুয়া, জাতীয়তাবাদী কুফরে মগ্ন। এই জমানার কথাই রাসুল (সা:) সতর্ক করে গেছেন। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা:) হতে বর্নিত- “এমন এক জমানা আসবে, মানুষ মসজিদে সমবেত হয়ে নামাজ পড়বে তাদের মধ্যে একজন মুমিনও পাওয়া যাবে না।” (মুস্তাদারকে হাকেম)। অনেকেই সুরালোভাবে কুরআন তেলাওয়াত শিখছে ঠিকই তবে এর বিনিময় দুনিয়াতেই চাইছে, কুরআন তেলাওয়াতের প্রতিযোগিতা নামক বাণিজ্যও চলছে। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেন- “অচিরেই একদল লোকের আবির্ভাব হবে যারা কুরআন পড়ে মানুষের কাছে বিনিময় আশা করবে।” আজ অনেক নারীই বোরকা পরছে ঠিকই আবার প্রকাশ্যে অশ্লীল মেলামেশা, প্রেম করে চলছে। অথচ প্রকৃত পোষাক হল তাকওয়ার (আল্লাহ ভীতি, ন্যায়পরায়ণতা) (সুরা আরাফ)। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেন- “কেয়ামত সংঘঠিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি হবে লুকা বিন লুকা (তাবারানী)। আরবীতে দুঃশ্চরিত্রা, খারাপ, মূর্খ মহিলাদের ক্ষেত্রে লুকা শব্দ ব্যবহার করা হয়। শেষ জমানায় দুঃশ্চরিত্র ব্যক্তিই খ্যাতি, সমৃদ্ধি, মর্যাদাবান ও সুখী হবে। আজ সারাবিশ্বের মডেল, তারকাদের দিকে খেয়াল করলে দেখবেন, যে যত অশ্লীল সে তত পরিচিত, ধনী, সম্মানিত ও সুখী। পক্ষান্তরে শেষ জমানায় মুমিনের ঈমান রক্ষা করা হাতে কয়লা রাখার চেয়ে কঠিন হবে (তিরমিযি)। তবে পাপীদের সুখ দুনিয়ায়, আখেরাতে রয়েছে জাহান্নাম আর মুমিনের দুনিয়া কারাগার ও জান্নাতে হবে তাদের স্হায়ী বসতি। এমন এক জমানা আসবে যখন মুমিন পালিয়ে বাড়বে যেমনটা মুনাফিক পালিয়ে বেড়াত সাহাবীদের যুগে। আজ সর্বত্র পাপের ছড়াছড়ি মুমিন জেনা করতে চায় না তবে তার চোখের সামনে বেপর্দা নারী ঘুরছে, সে গান-বাদ্যযন্ত্র শুনতে চায় না তার ঘরের স্বজনরা ও বাহিরে উচ্চস্বরে গানের ধ্বনি তার কানে আসছে, সে হালাল রিযিক চাইছে কিন্তু সর্বত্র মিথ্যা, প্রতারণা, সুদ, ঘুষ দ্বারা আবৃত। মুমিন আজ আত্মীয়-সহায়হীন ভীষণ একাকী অনুভব করে। তবে রাসুল (সা:) শেষ জমানার মুমিনদের জন্য সুসংবাদ দিয়েছেন। রাসুল (সা:) বলেন- “ইসলামের শুরু হয়েছে যখন তা ছিল গারীব (অপরিচিত, অচেনা) অবস্হায়। ইসলাম আবার গারীব অবস্হায় ফিরে যাবে, সুসংবাদ হচ্ছে গুরাবাদের জন্য।(কিতাবুল ঈমান, মুসলিম)। বলা হল, গুরাবা কারা? রাসুল (সা:) বলেন- যারা অপরিচিত/বান্ধবহীন অবস্হায়, যখন লোকেরা ইসলামের মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে সে সময় তাদের সংশোধন করবে। (মুসনাদে আহমদ ৩৭৭৫, ৮৮১২, মুসলিম, ইবনে মাজাহ)। অর্থাৎ প্রকৃত ইসলাম যখন অপরিচিত হয়ে যাবে গুরাবারা (অসহায়, অপরিচিতরা) তা সংশোধন করে মানুষকে আলোর পথ দেখাবে। আজ মুসলিম সমাজে বিভিন্ন বিদআত, গোমরাহী সুন্নাত হিসেবে চলছে কেউ যদি এর বিরোধিতা করে সত্যের পথে আহ্বান করে তাহলে বলা হচ্ছে যুগ যুগ হতে আমরা বাপ-দাদা ও আলেমদের এটা করতে দেখছি ওরা আমাদের সুন্নাত হতে দূরে রাখতে চায় ওরা কাফের, ইহুদিদের এজেন্ট, খারেজী—। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেন- “তোমাদের কি হবে যখন এমন ফিতনা তোমাদের ঘিরে ধরবে- এমনকি ফিতনার মাঝেই তোমাদের বড়রা বৃদ্ধ হবে, ছোটরা বড় হবে এবং লোকেরা এই ফিতনাকে (বিপর্যয়) মনে করবে সুন্নাহ। যখন ফিতনাগুলোকে পরিবর্তন করা হবে তখন বলা হবে সুন্নাহকে পরিবর্তন করা হলো। (সুনানে আবু দারমী)।
আর আল্লাহ পাক বলেন- “যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং রাসুলের দিকে এস, তখন তারা বলে, আমাদের জন্য এই যথেষ্ট, যার উপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের দেখেছি। যদি তাদের বাপ-দাদা কোন জ্ঞান না রাখে এবং হেদায়েত প্রাপ্ত না হয় তবে কি তারা তাই করবে।” (সুরা মায়েদাহ-১০৪)।