আমাদের দেশে এমনকিছু ডাকনাম রাখা বা ডাকা হয় যা অযৌক্তিক বা শরীয়াতের দৃষ্টিকোন হতে পছন্দনীয় নয়।
১. নবী- পাড়ার এক বড় ভাইয়ের নাম ছিল নূর নবী। প্রায় সবাই নবী/নবী ভাই বলে ডাকতো। অথচ নবী কারো নাম হতে পারে না বরং এটা আল্লাহর মনোনিত বার্তাবাহকদের উপাধি। যতদিন পর্যন্ত নবীদের কাছে ওহী আসার সূচনা হয়নি ততদিন তাদের নবী ডাকা হতো না। মানুষ নবীদের ব্যক্তি নাম ডাকতে পারে যেমন – দাউদ, ইব্রাহিম, মুসা, ঈসা কিন্তু নবী নয় কারণ এটা আল্লাহর তরফ হতে নবী-রসুলদের বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ উপাধি।
২. পুতুল- প্রায় অনেকের এই নাম রয়েছে। আমাদের সমাজে এমন উদাহরণ দেওয়া হয় – মেয়েটা পুতুলের মত সুন্দর নাউজুবিল্লাহ। অথচ মানুষ, প্রানীর পুতুল হারাম যা শয়তানের প্রতারনা। অথচ মানুষকে আল্লাহ সবচেয়ে সুন্দর কাঠামো দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। (সুরা তীন-৪)। তাই আল্লাহর প্রাণবান শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হয়ে প্রাণহীন জড়বস্তুর নাম রাখাটা কতটা যৌক্তিক?
৩. পরী- পরী বলতে কি বোঝায় সেটাই অদ্ভুত!! অনেকের মতে জিনদের স্ত্রীলিংঙ্গ পরী। অথচ মানুষ সুন্দর ও সেরা সৃষ্টি। তাহলে মানুষ হয়ে জিনদের নাম কেন রাখা? নবীদের স্ত্রী, মা, মেয়ে, বোন সবই ছিল নারী বা মানুষ হতে। ওদের হতে শ্রেষ্ঠ কে আছে। বরং এমন জানা যায় দ্বীনদার নারী জিনদের নাম- মারিয়াম, আছিয়া, খাদেজা, ফাতেমা রাখে ও এসব নারীদের আদর্শ মেনে চলে। আল্লাহ বলেন-
‘আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা যারিয়াত: আয়াত ৫৬)।
৪. মন্দ নামে ডাকা- অনেককে এমন ডাকনামে ডাকা হয় যা মন্দ যা শরীয়াতে হারাম। অনেকের এমন নাম রাখা হয় যা মন্দ বা অকল্যাণকর, অর্থহীন। যেমন- পচা, ছিয়া, দানা মিয়াসহ কিছু নাম। এসব নামের ক্ষেত্রে রহস্য থাকে – অনেকের ক্ষেত্রে জানা যায়ঃ-
জন্মের পর অসুস্থ থাকে। হয়তো পূর্বে এরকম অসুস্থতায় তাদের ভাই-বোন মারা গেছে, তাই মা-বাবা ভয়ে খোনারের কাছে ছুটে যায়। খোনার অনেকে শয়তান জিনের অনুসারী। ফলে পরামর্শ দিয়ে নিকৃষ্ট নাম রাখতে বলে। মানুষ সরল বিশ্বাসেই রাখে আর আল্লাহর ইচ্ছেই সন্তান সুস্থ হয়। কিন্তু মানুষের বিশ্বাস চলে যায় এই নামের কারণে বেচে গেল। তাই নাম পাল্টায় না। এসব নাম রাখার বুদ্ধি দেওয়ার কারণ আল্লাহ অপছন্দ করেন মন্দ নাম রাখা বা ডাকা আর শয়তান চায় আল্লাহ যা অপছন্দ করে মানুষ তাই করুক।। আল্লাহ বলেন,
-أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَىٰ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ ۖ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ ۚ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
“মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ হতে তওবা না করে তারাই জালেম।” (সুরা হুজুরাত-১১)।