তাতারী পরিকল্পনা ও বর্তমান পরিস্থিতি

বিশ্বের উন্নত দেশ তখন ইরাক, বাগদাদ। সম্পদ, বিদ্যা, বিজ্ঞান ঐতিহ্যের খনি। চেঙ্গিস খানের স্বপ্ন হলো আব্বাসীদের সাম্রাজ্য বিজয় করবেন। কিন্তু মঙ্গোলিয়া, চীন দিয়ে ইরাক যেতে হলে মাআরউন্নাহর ও ককেশাস যেতে হবে। তখন আব্বাসীরা বিলীসিতায় উদাসীন, আর আশেপাশের মুসলিমরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে সংঘর্ষে লিপ্ত। পরিকল্পনামাফিক চেঙ্গিস খান বর্তমান তুর্কমেনিস্তান খাওয়ারেযম সাম্রাজ্যের রাজা। খাওয়ারেযম শাহের সাথে বানিজ্য চুক্তি করেন, চেঙ্গিস খানের লোকেরা ব্যবসার নামে সেখানে ঢুকতো গুপ্তচুরি করত। হঠাৎ কিছু মোগল ব্যবসায়ী মারা গেল, অভিযোগ উঠলো মুসলিমদের উপর। ইতিহাসে ওদের মৃত্যুর অনেক কারণ পাওয়া যায়। কেউ বলে চেঙ্গিস খানের বাহিনী মাআরউন্নাহের মুসলিমদের হত্যা করে তারপর প্রতিশোধ হিসেবে মুসলিমরা তা করে, কেউ বলে গুপ্তচারির কারণে, কারো মত চেঙ্গিস খানের লোকেরা মুসলিমদের উপর দোষ চাপাতে নিজের লোকদের হত্যা করে। এই অজুহাতে চেঙ্গিস খান, খাওয়ারেযম শাহকে বলে খুনীদের নিজ হাতে তুলে দিতে। উত্তরে শাহ বলেন- আমরা মুসলিম জাতি, কুরআন ছাড়া অন্য আইন দ্বারা বিচার করি না, আমাদের লোকরা অপরাধী হলে কুরআন অনুযায়ী বিচার হবে। চেঙ্গিস খান এটাই চেয়েছিলেন, সে খাওয়ারেযম আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। অল্প কিছু সংখ্যক মুসলিমরা প্রতিরোধ করে খাওয়ারেযম শাহের পক্ষ হতে, বাকী ভূখন্ডের মুসলিমরা পরস্পর দ্বন্দ্বের কারণে চুপ থাকে। এমনকি চেঙ্গিস খান মুসলিমদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয় যারা যুদ্ধ করবে না তারা নিরাপদ, তাই অনেক কাপুরুষ মুসলিমরা নিজের দুর্গ খুলে দেয়। পরে তাতারীরা এসে সবাইকে হত্যা করে, নারী, শিশুকে ধর্ষন করে। এরপরের ইতিহাস অনেকের জানা। তাতারীরা আব্বাসীদের সাম্রাজ্য দখল করে মুনাফেকদের সাহায্যে, আর মুসলিমরা ছিল বিলীসিতায় মত্ত, জেহাদবিমুখ। এরপর তাতারীদের হাতে কোন ধর্মের লোকই নিরাপদ ছিলো না। এক সময় মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ হয়, বারাকে খান মুসলিম হয় তাতারীদের প্রতিরোধ করা হয়। প্রায় একই ঘটনা ঘটে বসনিয়ায়। দীর্ঘ বছর মুসলিম ও ক্যাথলিক খ্রিস্টান ওখানে বসবাস করত। ক্যাথলিকরা হামলা করে দায়ভার মুসলিদের দিয়েছিলো, মুসলিমরা পাল্টা আঘাত করলে ওরা সার্বিয়ানদের সাহায্য চায়। মুসলিমরা হতবাক হয়ে গেল দীর্ঘদিন যাদের তারা বন্ধু ভেবেছে, চলাফেরা, আড্ডা, খেলাধুলা করেছে তারাই তাদের তুলে দিচ্ছে জালেম সেনাদের হাতে। তারা বিভিন্ন টর্চার শিবির খুলে ধর্ষন, নির্যাতন, খুন করলো। বিশ্ব ইতিহাসে এতটা নৃশংস ঘটনা আর ঘটেনি। এরপর মুসলিমরা খালি হাতে সংগ্রামে নামে, অস্ত্র কেড়ে নিয়ে বিজয় আনে। একটু মিলিয়ে দেখুন- বর্তমান পরিস্থিতির সাথে কতটুকু মিলে। মুসলিমরা যখন গুলিবিদ্ধ হল কেউ পাকিস্তান, সৌদি, তুরস্কের কাছে বিচার দাবি করে নি। কিন্তু কারা আজ ভারতের সাহায্য চাইছে অথচ দেশপ্রেমের বুলি আউড়ায়। আমাদের দেশের ব্যাপার আমরাই সমাধান করা উচিত নয় কি!!! অনেক মুনাফেক প্রচার করছে- মূর্তির গায়ে কুরআন রাখায় কুরআনের অবমাননা হয় নি তাহলে মূর্তি ভাঙ্গায় মন্দিরের অবমাননাও হয়নি, এগুলো এমনিতেই ওরা ভেঙ্গে ফেলতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *