রসুলুল্লাহ’ (সাঃ) বলেছেন-
“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি পুরোপুরি অনুসরণ করবে, প্রতি বিঘতে বিঘতে এবং প্রতি গজে গজে। এমনকি তারা যদি ষাণ্ডার গর্তেও প্রবেশ করে থাকে, তবে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে।
আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি ইয়াহূদী ও নাসারাদের কথা বলেছেন? জবাবে তিনি বললেন: তবে আর কার কথা বলছি”? (বুখারী, মুসলিম)।
ইহুদী, নাসারাদের অনেক বিশ্বাস ও কর্মকান্ড আমাদের মধ্যে আজ বিদ্যমান। দ্বীনের কিতাব ও রসুলের (সা:) সুন্নাহ ছেড়ে আমরাও আজ বিভিন্ন মিডিয়ার বক্তব্য, মিথ্যা ঘটনা, কল্পকাহিনি হতে দ্বীন শিখতে চাইছি বা এসব জানাকে যতটা প্রাধান্য দিচ্ছি ততটা গুরুত্ব কুরআন, সুন্নাহকে দিচ্ছি না।
একশ্রেণির ইহুদি, নাসারাদের বিশ্বাস ও মতবাদ হল ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ অনেকটা নিজের হাতে, ভবিষ্যতের অনেককিছুর চাবিকাঠি তাদের হাতে রয়েছে। আর অনুরুপ একটা মতবাদ মুসলিম সমাজে কাদেরিয়া মতবাদ হিসেবে প্রবেশ করে।
কাদেরিয়ারা মানুষের ইচ্ছেশক্তি, কর্মক্ষমতা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে আল্লাহর শক্তি/পরিকল্পনাকে অবহেলা করে। এইক্ষেত্রে কুরআন, সুন্নাহের বহু বক্তব্য তারা ভুল ব্যাখা করে।
যেমন – খ্রিস্টান ও ইহুদিরা দীর্ঘদিন পরস্পর শত্রু ছিল। কিন্তু একশ্রেণির খ্রিস্টানদের বিশ্বাস হল- ইহুদিরা যখন সারাবিশ্ব হতে জেরুজালেম/শামে জড়ো হবে তখন ওদের মাসীহ এসে ওদের ধ্বংস করবে ও বিশ্বক্ষমতা নিবে। তাই এই আকীদার লোকগুলো ইহুদিদের জেরুজালেমসহ শামে প্রবেশ ও ভূমি দখলে সহয়তা করে যাচ্ছে।
যা ভাগ্য বা ভবিষ্যতে নিজেদের হাতের চেষ্টার মতন।
অপরদিকে একশ্রেণির ইহুদিদের বিশ্বাস তারা জেরুজালেম দখল করলে থার্ড টেম্পল প্রতিষ্ঠা করলে ওদের মাসীহ এসে ক্ষমতা নিবে, বিশ্বপরিচালনা করবে।
তাই তারা blood moon/রক্তিম পূর্ণচন্দ্র বা লাল গরু জবাইয়ের মাধ্যমে সেই কাজগুলো এগিয়ে আনার চেষ্টা বা আকীদা পোষন করে।
অন্য ইহুদিরা যদিও এই বিশ্বাস মানে না- তাদের যুক্তি হল মাসীহ আসবে, সময় হলে জেরুজালেমে ক্ষমতা নিবে, সারাবিশ্বের ইহুদিরা তার নেতৃত্ব মানবে।
আর ইসরায়েলী ইহুদিদের ক্ষেত্রে ওদের বক্তব্য হল- এটা প্রকৃত ইহুদি রাষ্ট্র নয়- ওরা বলছে ইসরায়েল যদি ইহুদি রাষ্ট্র হয় তাহলে এই রাষ্ট্রে কেন খ্রিস্টান, ড্রুজ ও কিছু সংখ্যক মুসলিম বসবাস করে অথচ সকল ফেরকার ইহুদিদের ওরা আশ্রয় দেয় না। অপরদিকে ওরা কেন জাতীয়তাবাদী পতাকা বহন করে, ডেভিডের (দাউদ আ:) ধর্মীয় পতাকা কেন ব্যবহার করে না!
আর জেরুজালেম, আকসা দখল করলে যদি মাসীহ এসে যায় তাহলে জেরুজালেম, আকসার নিয়ন্ত্রণ অনেকটা ওদের হাতে তাহলে মাসীহ আসে না কেন!? ইসরায়েলী ইহুদিদের পতন হবে ঈসার (আ:) আগেই, খলিফা মাহাদী জেরুজালেম হতে শাসন করবে। এরপর ইস্পাহানের ইহুদিরা দাজ্জালের নেতৃত্বে জেরুজালেম প্রবেশ করলে, আল্লাহ ঈসার (আ:) মাধ্যমে তাদের ধ্বংস করবেন।
অপরদিকে খ্রিস্টানদের একটা গ্রুপ তাদের বক্তব্য ও লেখায় প্রচার করে চলছে- antichrist জেরুজালেম হতে বিশ্বপরিচালনা করবে, ফেতনা ছড়াবে। তিনি বাইবেল বাদ দিয়ে অন্য কিতাব দ্বারা শাসন করবে।
কেউ আবার সরাসরি মুসলিমদের খলিফা মাহাদীকে (হাফি) antichrist মানে দাজ্জাল বলে মত প্রকাশ করছেন। তিনি জেরুজালেম হতে কুরআন দ্বারা শাসন করবেন বাইবেল দ্বারা নয়। তার সঙ্গীরা প্রকাশ পেয়েছে যারা উগ্রবাদী, রক্তপাত করে চলছে।
যেহেতু ইহুদি, খ্রিস্টান ধর্মমতে দাজ্জাল কানা হবার কথা উল্লেখ নেই, তারা দাজ্জাল, মাসীহ, antichrist কে কানা মানে না, সেহেতু মাহাদী (হাফি) আসলে তাকে দাজ্জাল বা antichrist প্রচার করে বলবে বাইবেল বা আমাদের ভবিষ্যৎ বানী সত্যি হয়েছে।
অথচ হাদীসে এসেছে – ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মাঝে দাজ্জালের আলোচনা করে বললেন, আল্লাহ তা’আলা কানা নন। শোন! দাজ্জালের ডান (চোখ) কানা হবে। তার চোখ যেন আঙ্গুরের ন্যায় ফোলা হবে। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭০৯৫]
আর এসব বিশ্বাস বা বক্তব্য জেনে বা না জেনে মুসলিম অনেক আলেম, ইউটিউবার প্রচার করে চলেছে। থার্ড টেম্পল হবে, দাজ্জাল জেরুজালেম হতে বিশ্ব শাসন করবে, তার চোখ কানা নয় বরং অন্তরচক্ষু দিয়ে বুঝতে হবে। আচ্ছা সাহাবীদের কি অন্তরচক্ষু ছিল না? তারা দাজ্জালকে কেন কানা ভেবেছিল?
১ম কথা জেরুজালেম, বায়তুল আকসা মুসলিমদের দখলে থাকবে, থার্ড টেম্পল হবে না বরং সেখান হতে মাহাদী (আ:) শাসন করবে। পরবর্তীতে জেরুজালেমের বাবে লূদে দাজ্জালকে প্রকৃত মাসীহ ঈসা (আ) হত্যা করবেন।
দাজ্জাল আকসায় প্রবেশই করতে পারবে না। এসব নিয়ে বহু আলোচনা করা যায়- মূল কথা হল আমাদের বিশ্বাস ও কর্তব্য কি হওয়া প্রয়োজন!?
কাফেরদের ষড়যন্ত্র হতে আমাদের সর্তক হতে হবে- কুরআন, সুন্নাহর বিপরীত যেকোন ভবিষ্যৎবানী আমরা বিশ্বাস করবো না।
কয়েকবছর আগে the arrival নামে সিরিজ জনপ্রিয় ছিল যেখানে বুঝানো হতো বিশ্বশাসন ক্ষমতা শয়তানের অনুসারির দখলে তারা সব নিয়ন্ত্রণ করে। তারা বাচ্চা বলি, জেনাসহ বহু কার্য করে। অনুরূপ কিছু সিরিজ ইহুদি, খ্রিস্টানরা দেখাতো। তারা সবাই প্রমান করতে চাইতো মাসীহ/মাহাদী আসার সময় অতি নিকটবর্তী।
আরবসহ বহু জায়গায় এই মতবাদ ছড়ালে হঠাৎ
১৯৭৯ সালের চরমপন্থীরা সৌদি আরবের মক্কা শহরে অবস্থিত মুসলমানদের পবিত্র স্থান মসজিদ আল-হারাম দখল করে, যা ছিল মূলত সউদ রাজ পরিবাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। বিদ্রোহীরা ঘোষণা করে যে, ‘ইমাম মাহাদি’ (ইসলামের মুক্তিদাতা) তাদের অন্যতম নেতা মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ কাহতানীর বেশে চলে এসেছেন এবং সকল মুসলমানদের আহ্বান জানানো হয় তাকে মেনে চলার জন্য।
বহু বড় বড় আলেম প্রথমে ফেতনায় পড়েছিল সত্যিমিথ্যা যাচাই করতে। পরবর্তীতে যখন দেখলো হাদীসে বর্নিত সুফিয়ানী, বনু কাল্ববের বাহিনী মদীনা আক্রমণ করলো না বায়দায় ধসে পড়লো না। তখন বুঝলো সে মিথ্যা মাহাদী দাবিদার।
ঠিক একই প্রক্রিয়া এখন চলছে- সবকিছু যেন শয়তানের অনুসারীরা দখল করে চলছে। মাহাদী হাফি বা মাসীহ, দাজ্জাল আসার সময় অতি নিকটবর্তী। ওদের হতে মুক্ত করতে মুসলিমদের বাহিনী প্রস্তুতি প্রয়োজন, অবশ্যই মুসলিম মুজাহিদরা হকের পথে সবসময় লড়াইরত রয়েছে এবং থাকবে। আল্লাহ সকলকে তাদের দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দিক। কিন্তু বর্তমান মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান অধ্যুষিত সকলদেশে রাষ্ট্র হতে ধর্মগ্রন্থ ভিন্ন হয়ে গেছে।
আলেম, পোপ, রাবীই তাদের সেই ক্ষমতা নেই যে তাদের মতে রাষ্ট্র চলবে তাই তাদের অনেকে এসব প্রচারণা করছে নিজ স্বার্থে – যেন আবার তাদের হাতে ক্ষমতা আসে, সকল রাষ্ট্রনেতারা শয়তানের অনুসারি (অবশ্যই তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শয়তানের অনুসারি), তাদের হতে মুক্ত করতে হবে।
একই জিনিস মুসলিমদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়- তারা এমন অনেককে রাষ্ট্রনেতা বা বীর মেনে নিচ্ছে তারা নূন্যতম সুন্নত (সালাত, দাড়ি) অনুসরণ করছে না, হয়তো জনগনের সমর্থনের জন্য মসজিদ – মাদ্রাসায় দান করছে, ২-১ টি ইসলামী আইন করছে অপরদিকে প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠায় চেষ্টারত মুসলিমদের বিরোধিতা করছে!
একটা বড় ফেতনা হল- শেষ জমানার হাদীসে আছে – সুফিয়ানী যিনি উমাইয়া বংশ হতে আসবে যার সেনারা হবে বনু কাল্ব যারা বর্তমান সিরিয়ায় ক্ষমতায়।
যারা মুসলিমদের কাছে, প্রথমে জনপ্রিয় মহান নেতা হয়ে উঠবেন বহুস্হান দখল করে মুজাহিদদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষন করবেন। (মুসলিম শরীফ – কেয়ামতের আলামত, আল ফিতান)। বনু কাল্বরা মূলত নুসাইরিয়া শিয়া, এমনকি অন্য শিয়ারা তাদের কাফের মানতো অথচ বহু আলেম, ইউটিউবার ইচ্ছেকৃত বা ভুলে ওদেরকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছে, যা ভবিষ্যতে বড় ফেতনার কারন হবে।
তাদের আকীদার বইগুলো পড়ুন দয়া করে কুরআন, সুন্নাহ দিয়ে মিলান।
অথচ বিশ্বক্ষমতা আল্লাহর, তিনি কাফেরদের সাময়িক ছাড় দেন। কাফেররা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুগ যুগ ধরে গোপন ষড়যন্ত্র করবেই তা blood moon হোক বা গরু জবাই করে হোক কিন্তু আল্লাহ ওদের বিরুদ্ধে মহাপরিকল্পনা রেখেছেন – মুসলিমদের বিজয় দিবেন।
আমাদের উদ্দেশ্য দ্বীন দিয়ে জনপ্রিয় হওয়া নয় বরং দ্বীনের কারনে নবী, রসুল, সাহাবীদের নির্যাতিত হতে হয়েছে, আমাদের উপর হচ্ছে। দ্বীন হতে আয় করা আমাদের লক্ষ্য নয় বরং এর প্রতিদান আল্লাহর নিকট চাই। বরং একটাই আহবান যত বিদ্যাই অর্জন করুন বা আলেমের বক্তব্য শুনেন, কুরআন সুন্নাহর আলোকে মেলান। তাহলে আমাদের কষ্ট সার্থক হবে আর আমাদের ভুল হলে ধরিয়ে দিন। দোয়া করুন যেন মুক্তভাবে হক্বের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে পারি।