Red Heifer পর্ব-২ (চন্দ্র ও সূর্যগ্রহন)

ইসরায়েলীরা যখন ১০ তম লাল গরু জবাই করবে ও সূর্য-চন্দ্র গ্রহন হবে, এটা তাদের মাসীহ আসার সংকেত এবং তখন থার্ড টেম্পল প্রতিষ্ঠা পাবে। ওরা মনে করে সোলেমান (আঃ) এর মত করে ওদের মাসীহ জেরুজালেম হতে শাসন করবে। মূলত তাই আগামী ৮ এপ্রিল বিরল সূর্যগ্রহণ নিয়ে তারা অতি উৎসাহী। সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝখানে অবস্থান নেবে চাঁদ। উত্তর আমেরিকা, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাতে পারে।

এসব অঞ্চলের সূর্য পুরোপুরি ঢেকে দিতে পারে চাঁদ। এ কারণে গ্রহণের সময় (সকাল ১১টা থেকে অঞ্চল ভেদে বিকাল ৫টা পর্যন্ত) উষা বা সন্ধ্যার আলো-আঁধারি নেমে আসতে পারে।

যদি তাদের দাবি এটা toarh (তালমূদের) নিদর্শন, প্রকৃত কথা হল তারা প্রকৃত তাওরাত নয় বরং এর বিকৃতরুপ মেনে চলছে। অপরিদকে কিছু মুসলিমদের মাঝে এই প্রচারণা হচ্ছে – এটা মাহাদী (হাফিঃ) আসার সংকেত।

আসলে এগুলো কতটুকু বাস্তব!

১ম কথা ইসলামের শত্রুরা প্রস্তুতি নিবে, বহুরকম ষড়যন্ত্র করবে এবং আমাদেরও প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন। কিন্তু আমরা যদি সেই পথ হতে সরে যাই আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের হাতে বিজয় দিবেন। জেরুজালেম, আকসাসহ পবিত্রভূমি রক্ষা করবেন।

আল্লাহ বলেন- –

হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ ধর্ম হতে ফিরে গেলে আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনয়ন করবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন ও যারা তাঁকে ভালবাসবে, তারা হবে বিশ্বাসীদের প্রতি কোমল ও অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দায় ভয় করবে না, এ আল্লাহর অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন। বস্তুতঃ আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময়।( সুরা মায়েদাহ -৫৪)

ইনশাআল্লাহ জেরুজালেমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পাবে, আর আকসা ভেঙে থার্ড টেম্পল করতে পারবে না এমনকি দাজ্জালও সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না।

হযরত জুনাদা ইবনে আব উমাইয়া থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এক সাহাবী থেকে শুনেছেন যে, তিনি বলেছেন রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে খুতবা দেয়ার জন্য দাড়ালেন এবং বললেন, নিশ্চই দাজ্জাল প্রত্যেক পানি পানের স্থানে বা ঘাটে যাবে তবে চারটি মসজিদ ব্যতীত। আর উক্ত মসজিদগুলো হল মসজিদুল হারাম, মদীনার মসজিদ, তূরে সাইনা এর মসজিদ, এবং মসজিদে আকসা। (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৫৭৮)

এছাড়া মুসলিম শরীফে কেয়ামতের আলামত অধ্যায়ে কিছু হাদীস প্রমান করে বায়তুল আকসার ক্ষমতা মুসলিমদের নিকট থাকবে এবং দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। আর মাহাদী (হাফিঃ) আসার আগে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহনের হাদিসকে অধিকাংশরা যঈফ বা জাল বলছেন।

দারাকুতনিতে মুহাম্মাদ বিন আলী থেকে একটি হাদিস তারা বর্ণনা করেন। এ হাদিসটি জাল (দারাকুতনি ১৮১৬; আল-মাওসূআতু ফি আহাদিসিল মাহদি আয-যাঈফাহ ওয়াল মাওযুআহ ১৬৯ পৃষ্ঠা)।

এছাড়া রয়েছে – ইমাম রব্বানি মুজাদ্দেদী আলফেসানী (রহঃ)-এর ‘মাকতুবাতে রাব্বানী’ (রাব্বানির প্রত্রাবলী)-র ৩৮০ নম্বর পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, “যে বছর রমজান মাসের প্রথমদিকে সূর্যগ্রহণ ঘটবে এবং রমজান মাসের ১৪ তারিখে চন্দ্রগ্রহণ ঘটবে, সেই বছরই ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে।”

=> ইমাম কুরতুবী (রঃ) রচিত কিতাব ‘মুখতাছার তাজকিয়াহ্’ গ্রন্থের ৪৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাইয়্যেদেনা ইমাম মাহদী (হাফি:)-এর আগমনের পূর্বে দুটি গ্রহণ রমজান মাসেই ঘটবে।

=> নুয়ায়েম ইবনে হাম্মাদ (রঃ) রচিত ‘কিতাবুল ফিতান’ গ্রন্থে সতর্কতামূলক বাণী উল্লেখ করা হয়েছে,

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা যখন রমজান মাসে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করবে, তখন এক বছরের খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ করে রাখবে।

হাদীসগুলো যদিও গ্রহন এর ব্যাপারে বলা হয়েছে – শুধু রমাদ্বানের শেষে চন্দ্রগ্রহন নয় বরং রমাদ্বানের শুরুতে সূর্যগ্রহন হবে যা বর্তমানের সাথে মিলে না। আর এগুলো ঘটবে ফোরাত নদীতে স্বর্ন উঠার পর।

অপরদিকে এর বিপরীতে অনেক আলেমরা রসুলল্লাহ (সা:) এর পুত্র ইব্রাহিম (রহ:) মৃত্যুর পর সূর্য, চন্দ্রগ্রহনের হাদীসগুলো আনেন।

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … মুগীরা ইবন শু’বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় যে দিন (তাঁর পুত্র) ইব্রাহীম (রাঃ) ইন্তেকাল করেন, সেদিন সূর্য গ্রহণ হয়েছিল। লোকেরা তখন বলতে লাগলো, ইব্রাহীম (রাঃ) এর মৃত্যুর কারণেই সুর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কারো মৃত্যু অথবা জন্মের কারণে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তোমরা যখন তা দেখবে, তখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং আল্লাহর নিকট দু’আ করবে। (বুখারী পরিচ্ছেদঃ সুর্যগ্রহণের সময় সালাত)

অপর হাদীসে এসেছে – আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় একবার সূর্যগ্রহণ হল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। তিনি দীর্ঘ সময় কিয়াম করেন, এরপর দীর্ঘক্ষণ রুকু’ করেন। এরপর পুনরায় (সালাতে) তিনি উঠে দাঁড়ান এবং দীর্ঘ কিয়াম করেন। অবশ্য তা প্রথম কিয়াম চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি রুকু’ করেন এবং এ রুকু’ দীর্ঘ করেন। তবে তা প্রথম রুকু চাইতে অল্পস্থায়ী ছিল। এরপর তিনি সিজদা করেন এবং সিজদাও দীর্ঘক্ষণ করেন। এরপর তিনি প্রথম রাকা’আতে যা করেছিলেন তার অনুরূপ দ্বিতীয় রাকাআতে করেন এবং যখন সূর্য প্রকাশিত হয় তখন সালাত শেষ করেন।

এরপর তিনি লোকজনের উদ্দেশ্যে খুৎবা দান করেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করেন। এরপর তিনি বলেনঃ সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমুহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন তোমরা আল্লাহর নিকট দু’আ করবে। তাঁর মহত্ব ঘোষণা করবে এবং সালাত আদায় করবে ও সাদাকা প্রদান করবে। এরপর তিনি আরো বললেনঃ হে উম্মতে মুহাম্মদী! আল্লাহর কসম, আল্লাহর কোন বান্দা যিনা করলে কিংবা কোন নারী যিনা করলে, আল্লাহর চাইতে বেশী অপছন্দকারী কেউ নেই। হে উম্মাতে মুহাম্মদী! আল্লাহর কসম, আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তা হলে তোমরা অবশ্যই কম হাঁসতে ও বেশি কাঁদতে। (বুখারী)

তাই সকল পরিস্থিতিতে আমাদের রসুলের (সা:) সুন্নাহ অনুসরন করা উচিত। এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি, ছাড়াছাড়ি না করে স্বালাতুল কুসূফ অল-খুসূফ পড়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *