প্রায় ফেনী হয়ে স্টারলাইনে ঢাকা আসতাম। এমনি একদিন ঢাকায় ফিরছিলাম বাস ছাড়ার পর চালক কিছুক্ষণ সুরা ইয়াসিনের তেলাওয়াত চালালো খুব ভালো লাগল। এর কিছুপরে সে শিরক, কুফরে ভরা হিন্দিগান চালানো শুরু করল। আমি মানা করলে কিছুটা তর্ক করে সাউন্ড কমিয়ে দিল। তারপর সে গানের তালে গাড়ির গতিও বাড়লো তাই নারায়ণগঞ্জ আসার পর হাইওয়ে পুলিশ জরিমানা করল। এতে সে গান বন্ধ করে কিছুক্ষণ ঠিকমতো গাড়ি চালালো। এরপর গান ও গাড়ির গতি আগেরই মত নিয়ন্ত্রণ ছাড়া চলল। জানি ঢাকা পৌছে বাসটা ধুয়ে পরিষ্কার করে তারা আবার পরবর্তী গন্তব্যে রওনা দিবে। বাস জার্নির সাথে আমাদের জীবন সফরের অদ্ভুত একটা মিল পেলাম। বাসের চালক তার নিরাপদ যাত্রার জন্য আল্লাহর কালাম ও দোয়া দিয়ে শুরু করল। এরপর মাঝপথে যেন আল্লাহকে আর প্রয়োজন নেই সে কুফর, শিরকের গানে আনন্দে লিপ্ত। ঠিক তেমনি আমাদের জীবনযাত্রার (জন্মের সময়) শুরুতে আমাদের পরিচালক/অভিভাবক আমাদের কানে আযানের ধ্বনি ও আকীকার মাধ্যমে আমাদের নিরাপদ জীবন প্রার্থণা করে। এরপর আমাদের ভর্তি করানো হয় কুফর-শিরকে ভরা শিক্ষাকেন্দ্রে। বাসের চালক সুরা ইয়াসিনের মর্ম অনুধাবন করল না, তেমনি আমরাও আযানের ধ্বনি শুনি শুধু এর মর্ম বুঝি না। কেন জন্মের পর শিশুর কানে সর্বপ্রথম ধ্বনি হয় আল্লাহু আকবর (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ)? এটা হল জীবনের মূল শিক্ষা। মানুষ সকল ব্যক্তি/মতবাদ বাদ দিয়ে এক আল্লাহর দ্বীন গ্রহন করবে, একমাত্র তার শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিয়ে সকল কিছুর দাসত্ব ত্যাগ দিয়ে তার দাসত্ব বরন করবে। এরপর এক আল্লাহর ও তার রাসুলের আনুগত্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সেটা কি শুধু শোনার জন্য না আজীবন পালনের জন্য? তারপর সালাত ও কল্যাণের প্রতি আহ্বান করা হয়। আমাদের শৈশবে অনেককে হয়তো সালাত, কুরআন শেখানো হয় এরপর বাসের চালকের মত আমাদের পরিচালকরা কুরআন হতে দূরে সরিয়ে শুধুমাত্র দুনিয়াকেন্দ্রিক শিক্ষায় আমাদের গড়ে তোলে। তাই অনেকে আমরা ইসলামের নিয়ন্ত্রিত পথ ছেড়ে পাপের সীমাংলঙ্গনের পথে ছুটে চলি আর তাই দূর্ঘটনার শিকার হই। এরপর হয়তো কিছুসময় পাপের গতি কমিয়ে বিনয়ী হয়ে আল্লাহকে স্মরন করি তারপর বিপদমুক্ত হলে আবার পাপের পথে ছুটে চলি। তারপর জীবনের পথ শেষ হয় বাসের মত আমাদের গোসল দিয়ে পরবর্তী যাত্রা শুরু হয় তখনও আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়া হয় (জানজা ও বিভিন্নভাবে)। কিন্তু তা কতটা কাজে আসবে যদি সারাজীবন পাপের গতি কমিয়ে দ্বীনের পথে না চলি? এ জীবন একটা ছোট যাত্রামাত্র, যার গন্তব্য জান্নাত অথবা পথভুলে পাপের পথে চললে জাহান্নাম। আমাদের জীবনের সূচনা আল্লাহর মহত্ব, আল্লাহর একত্ববাদ ও রাসুলের আনুগত্য ধ্বনি (আযান), সালাত ও কল্যানের আহ্বান দিয়ে শুরু হলেও মাঝপথে তার প্রয়োজন আমরা ভুলে যাই। আমাদের অভিভাবকরাও স্মরণ করিয়ে দেয় না, পাপের পথে চলি।