বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে ধর্মশাস্ত্র প্রকাশ্যে পুড়ানো হয়েছে বা হচ্ছে তাহলো হিন্দুশাস্ত্র মনুসংহিতা (Manusmriti)। তা কোন মুসলিম নয় বরং নিম্ন হিন্দু পরিবারের জন্মগ্রহন করা সদস্যগনই করেছিল বা করছে।
মনুসংহিতায় জাত, বর্ণ ও রাজ্য পরিচালনার নিয়মনীতি আছে। যা ভারতীয় সাংবিধানিক আইনে বাতিল করা হয়।
যুগ যুগ ধরে জাত, বর্ণের নামে দলিতদের জুলুম ও তাদের নারীদের বিভিন্নভাবে ভোগ, অপদস্ত করা হয়েছে বা হচ্ছে।
ভীমরাও রামজি আম্বেদকর (১৪ এপ্রিল ১৮৯১ – ৬ ডিসেম্বর ১৯৫৬) ছিলেন একজন ভারতীয় আইনবিদ, অর্থনীতিবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং রাজনৈতিক নেতা যিনি গণপরিষদের বিতর্ক থেকে ভারতের সংবিধানের খসড়া কমিটির প্রধান ছিলেন, প্রথম মন্ত্রিসভায় আইন ও বিচার মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করার পর দলিত আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হন।
তিনি পশ্চিম ভারতের একটি দলিত মহার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার উচ্চ বর্ণের স্কুল পড়ুয়াদের দ্বারা অপমানিত হয়েছিলেন। দলিতদের তখন অস্পৃশ্য ধরা হতো। তার বাবা ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিসার।
বরোদার (বর্তমানে ভাদোদরা) গাইকওয়ার (শাসক) দ্বারা একটি বৃত্তি প্রদান করা হয়। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অধ্যয়ন করেন। গাইকওয়ারের অনুরোধে তিনি বরোদা পাবলিক সার্ভিসে প্রবেশ করেন। কিন্তু আবার তার উচ্চ-বর্ণের সহকর্মীদের দ্বারা দুর্ব্যবহারের শিকার হয়ে তিনি আইনী অনুশীলন এবং শিক্ষকতার দিকে মনোনিবেশ করেন। তিনি শীঘ্রই দলিতদের মধ্যে তার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন, তাদের পক্ষে বেশ কয়েকটি জার্নাল প্রতিষ্ঠা করেন এবং সরকারের আইন পরিষদে তাদের জন্য বিশেষ প্রতিনিধিত্ব অর্জনে সফল হন। তার বদৌলতে ভারতের সংবিধানে দলিত, নারীদের কিছু অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়।
২৫ ডিসেম্বর, ১৯২৭-এ, ডাঃ আম্বেদকর ‘মনুস্মৃতি’ নামক বিতর্কিত পাঠ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য উপকূলীয় মহারাষ্ট্রের মাহাদে জনসাধারণকে জড়ো করেছিলেন। দলিতদের বিরুদ্ধে অন্যায় প্রচারের জন্য এটি তার বর্ণবাদী প্রচারের জন্য কুখ্যাত ছিল। মনুস্মৃতি তাদের কাছ থেকে মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়, এই বলে যে তাদের একমাত্র কর্তব্য হল উচ্চ বর্ণের সেবা করা ‘কোনও অভিযোগ ছাড়া।
অনুষ্ঠানের আগে, আম্বেদকর এই দিনের তাৎপর্য সম্পর্কে জনগণকে ভাষণ দেন। ভারতে নারীবাদ উদ্ধৃত করে, “আসুন আমরা প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলির কর্তৃত্বকে ধ্বংস করি যা অসমতার জন্ম দেয়। ধর্ম এবং দাসত্ব সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।” মনুস্মৃতির আদর্শ তার সহযোগী বাপুসাহেব সহস্ত্রবুদ্ধের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল, যিনি এটি পোড়ানোর জন্য দায়ী ছিলেন। তিনি বলেন, “আমি মনুস্মৃতির মতবাদের নিন্দা করি। এটি ধর্মের নয় বরং অসমতা, নিষ্ঠুরতা ও অবিচারের প্রতীক। তার নেতৃত্বে মনুস্মৃতি পুড়ানো হয়েছিল। জানেন ভারতের সরকা–র, অধিকাংশ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে ও তার মূর্তি পর্যন্ত আছে। এমনকি ১৯৯০ সালে তাকে ভারতরত্ন, ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার, মরণোত্তর আম্বেদকরকে প্রদান করা হয়। অথচ বার বার ক্ষমতার জন্য ওদের মিডিয়া, চলচ্চিত্র মুসলিম–দের সমালোচনা করে। মিথ্যা কাহিনি, ইতিহাস তৈরি করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়।
এর পিছনে একটি বিশেষ কারণ হল- হাজারও দলিতরা ইসলাম বুঝছে, জানছে, গ্রহন করছে। বুঝলো- ইসলামে জাত, বর্ণের উপর ভিত্তি করে উঁচুনিচু নির্ধারন হয় না। হয় তাকওয়ার ভিত্তিতে ও কেবল ইসলামে রয়েছে নারীদের উপযুক্ত সম্মান।
তারা যখন বুঝলো ইসলামই তাদের মুক্তির পথ আর ভারতের সংবিধানে সকলকে তার ধর্ম মানার অধিকার আছে, বাধা দেওয়া নিষেধ। তাই হাজার দলিত মুসলিম হচ্ছে। তাদের ইসলাম গ্রহনে বাধা দিতে এরা প্রচার করছে নওমুসলিম মানে উগ্র-বাদী, দেশের শান্তি ও ওদের ধর্মের পথে প্রধান বাধা।
যখন ইসলাম ও মুসলিমদের নামে অপবাদ দেওয়া হয়- তখন চুপ থাকলে কেন জানি মনে হয় আমাদের অন্তরে কাপুরুষতা বা মুনাফেকিতা রয়েছে। আল্লাহর ভয়ের চেয়ে দুনিয়ার ভয় বড় হয়ে যাচ্ছে।
সুস্পষ্ট বলি- খন্দকের খননের সময় বিশ্ব কাফের জোট একত্রিত হয়েছিল ইসলাম ও মুসলিমদের নিঃশেষ করতে। ক্ষুধার্ত রসুল (সা:) পেটে পাথর বেধে বলেছিলেন – মুসলিমরা একসময় তখনকার সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য রুম ও পারস্য বিজয় করবে আর মুনাফেকরা উপহাস করেছিল কিন্তু মুসলিমরা রুম ও পারস্য বিজয় করেছে। ঠিক একই পরিস্থিতি আজও বিদ্যমান- রসুল(সা:) নেই কিন্তু তার আহলে বায়াত, অনুসারী আজও আছে এবং তিনি হাদীসে আমাদের বিশ্ববিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ তা হবেই, হয়তো সেই বিজয় দেখবো না। কিন্তু সেই বিজয়ের পথটা অন্যদের জানিয়ে যাই – আর সর্বোচ্চ বিজয় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাক্ষাৎ আশা রাখি।