অনেকে বর্তমান গণতন্ত্র বৈধ করতে কুরআনের ঐ ঘটনার ভুল ব্যাখা করেন। ইউসুফ (আ) তাগুতের অধীন পদ নিয়েছিল তাই গণতন্ত্র রাজনীতি ও তাগুতের চাকরি জায়েজ। কিন্তু ওরা এতটা জাহেলিয়াতে রয়েছে যে নিজেদের দল পূজায় হালাল হারামের হুশ হারিয়ে ফেলেছে।
প্রথম কথা- নবী, রসুলগন সরাসরি আল্লাহর তরফ হতে নির্বাচিত। কোন মানুষ তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচনের অধিকার রাখে না। বরং তার আনুগত্য মুসলিম হওয়ার প্রমাণ।
আপনাদের গণতন্ত্রে তাগুতের আনুগত্যের পক্ষে কোন ওহী এসেছে কি!?
আর নবী, রসুলগণ সরাসরি আল্লাহর ওহীর মাধ্যমে পরিচালিত হন, ভুল সিদ্ধান্ত হলে ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ সংশোধন করে দেন। তার অর্থমন্ত্রী পদ লাভ করা আল্লাহর তরফ হতে সিদ্ধান্ত ছিল উম্মাহর কল্যাণে। আর মিশরের শাসক তাকে শতভাগ অধিকার দিয়েছেন- শরীয়া অনুযায়ী ফায়সালা করতে।
বর্তমানে তাগুতী রাজনীতি, গণতন্ত্র কি আপনাকে অনুমোদন দিবে শতভাগ শরীয়া প্রয়োগ করতে? নাকি তাদের আইনের অধীন শাসনকার্য করতে হবে? নাকি আপনার ইসলামী আইন তাদের কুফরী আইন দ্বারা বাতিল হয়ে যাবে!
আর মিশরের শাসক আজীবন মুশরিক ছিল বা ঈমান আনেনি কই পেলেন? বরং কিছু তাফসীর ও ইতিহাস হতে জানা যায় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে ইউসুফ (আ) প্রকৃত শাসক হয়। এই ব্যাপারে ইহুদিরাও একমত। আবার কেউ বলে রাজার মেয়ের সাথে তার বিয়ে হয় ফলে ক্ষমতা তিনি পান। আল্লাহই উত্তম জানেন।
কারণ একজন নবী, রসুলের প্রথম কাজ ইসলামের পথে দাওয়াহ দেওয়া – যিনি জেলখানায় থেকে কয়েদীদের দাওয়াহ দিতে ভুলেননি আর মুক্ত হয়ে শাসককে দাওয়াহ দিবেন না এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?
সুরা নাহলে বর্নিত-
“নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসুল প্রেরণ করেছি, তারা যেন শুধু আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুতকে বর্জন করে।” (আয়াত-৩৬)।
অথচ তার পূর্বপুরুষ ইব্রাহিম (আ) যিনি জালেম শাসক নমরুদের বিরোধিতা করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হোন। আর মিশরের শাসক তার প্রতি বিশ্বাস ছিল যদি পদ তুলে দেন। আর শরীয়া পূর্নাঙ্গ হয়েছে – আমাদের জন্য রসুলের (সা:) জীবনীতে রয়েছে উত্তম আদর্শ।
এভাবে কুরআনকে ভুল ব্যাখা করলে বহু ফিতনা সৃষ্টি হবে- আদমের (আ:) সময় ভাই বোনের বিবাহ জায়েজ ছিল। তাহলে এখন এটাকে জায়েজ ভাবলে ঈমান থাকবে? আদম (আ:) কে মালাইকা সিজদাহ দিয়েছিল অথচ রসুলকে (সা:) এরূপ দেওয়া হয়নি এজন্য কি রসুলের (সা:) চেয়ে আদমকে (আ:) শ্রেষ্ঠ বলবেন? আগে কুরবান কবুল হলে আকাশ হতে আগুন এসে পুড়িয়ে ফেলতো। রসুল (সা:) ও সাহাবীদের সময় হয়নি। তার মানে কি তাদের কুরবানী কবুল হয়নি? নাউজুবিল্লাহ!
রসুলের (সা:) সুন্নাহতে কোরাইশদের খলিফাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে – আর জনগনের নিকট নেতৃত্ব চাওয়া নিষেধ করা হয়েছে।
ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ বিষয় (খিলাফত ও শাসন ক্ষমতা) সর্বদাই কুরাইশদের হাতে থাকবে, যতদিন তাদের দু’জন লোকও বেঁচে থাকবে।
সহীহুল বুখারী, পৰ্ব ৬১: মর্যাদা ও গুণাবলী, অধ্যায় ২, হাঃ ৩৫০১; মুসলিম, পর্ব ৩৩: ইমারাত বা নেতৃত্ব, অধ্যায় ১, হাঃ ১৮২০
অনেকে সুলাইমান (আ:) এর নেতৃত্ব, ক্ষমতা চেয়েছেন উদাহরন দেন- অথচ সুলাইমান (আ:) আল্লাহর নিকট নেতৃত্ব, ক্ষমতা চান মানুষের নিকট নয়। আল্লাহ তাকে যোগ্যতা দেন ও দোআ কবুল করে। আর ঈসা (আ:) যদি পরবর্তী শাসক হন তিনি আল্লাহর পক্ষ হতে সরাসরি মনোনিত। যে বিষয়- নেতৃত্ব (নবী, রসুল) আল্লাহর পক্ষ হতে সরাসরি মনোনিত সেই বিষয়ে বান্দার দায়িত্ব আনুগত্য করা; নেতা নির্বাচন নিয়ে কোন ভোট বা বিরোধীতা চলে না।
আপনারা আল্লাহর নিকট চান। তার তুচ্ছ বান্দা ও মুশরিকদের কাছে ভোট ভিক্ষার জন্যে তাদের শির্কে অংশগ্রহণ ও সমর্থন হতে দূরে থাকুন।
আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে ’আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ! তুমি নেতৃত্ব চেয়ো না। কেননা, চাওয়ার পর যদি নেতৃত্ব পাও তবে এর দিকে তোমাকে সোপর্দ করে দেয়া হবে। আর যদি না চেয়ে তা পাও তবে তোমাকে এর জন্য সাহায্য করা হবে।
সহীহুল বুখারী, পৰ্ব ৮৩; অঙ্গীকার ও নয়র, অধ্যায় ১, হাঃ ৬৬২২; মুসলিম, পর্ব : ইমারাত বা নেতৃত্ব, অধ্যায় ৩, হাঃ ১৬৫২
