আমরা আসলে কি কোন দলের দালাল?

পূর্বের ক্ষমতাসীনদের বিরোধিতা করলে পাকিস্তানের দালাল, উগ্রবাদী, দেশদ্রোহী, স্বাধীনতা বিরোধী উপাধি মিলত। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বিরোধিতা করলে নাস্তিক, খারেজী, নব স্বাধীনতার শত্রু উপাধি মিলে। এত বছর কই ছিলাম আমরা! কোন প্রতিবাদ করেনি। আহ!” আপনারা কি ইসলাম বুঝেছেন আসলে।

আপনাদের দেখা উচিত বক্তব্য কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী না তার বিপরীত। তা না দেখে উল্টো অপবাদ দিয়ে দ্বীনের পথে বাধা সৃষ্টি করেন।

ধরুন আজ একজন হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়ে দ্বীন প্রচার শুরু করলো। আপনারা কুরআন সুন্নাহর দলিল থাকা স্বত্বেও তা মানবেন না বরং অপবাদ দিবেন অতীতে সে জালেম ছিল।

এই ইসলাম কি রসুল (সা:), সাহাবীরা শিখিয়েছেন। বরং রসুল (সা:), সাহাবীরা কেউ ইসলামে ফিরলে তার জন্য দোয়া করতেন যদিও সে রসুল (সা:), সাহাবীদের বিরুদ্ধে অতীতে যুদ্ধ করেছিলেন।

কেউ যদি সারা জীবন শিরক, কুফর ও পাপে লিপ্ত থাকে পরিশেষে তওবা করে আল্লাহ তাকে ক্ষমা ও দয়া করেন। এমনকিছু দান করেন যা বান্দার কল্পনার বাহিরে। উদাহরণ –

১. খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ): যার নেতৃত্বে উহুদ যুদ্ধে মুসলিমসহ ও রসুল (সাঃ) ক্ষতির সম্মুখীন হন। হামজা (রাঃ), মুসাইব বিন উমায়ের (রাঃ) শাহাদাত বরণ করেন, রসুলের (সাঃ) দাত শাহাদাত ও রক্তাক্ত হন। অথচ তিনি যখন মুসলিম হলেন আল্লাহ ও রসুল (সাঃ) তাকে ক্ষমা করে দিলেন। তাকে মুসলিমদের বিজয়ের সেনাপতি বানানো হল ও তার উপাধি হল সাইফুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর তরবারি।

২. ওয়াহশি ইবনে হারব: যিনি হামজা (রাঃ) এর হত্যাকারী। যার সহায়তায় হিন্দা হামজা (রাঃ) এর কলিজা ভক্ষনের চেষ্টা করেন। মক্কা বিজয়ের পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। রসুল (সাঃ) তার নিকট চাচা হত্যার মর্মান্তিক বর্ণনা শুনে বলেন- ইসলাম গ্রহণের কারণে তোমাকে ক্ষমা করা হয়েছে কিন্তু মানা করেন তিনি যেন কখনও রসুলের (সাঃ) সম্মুখে না আসে। কারণ তাকে দেখলে হামজা (রাঃ) এর মর্মান্তিক ঘটনা মনে পড়বে। রসুল (সাঃ) এর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি রসুলের (সাঃ) মুখামুখি হন নি। তার মৃত্যুর পর ভন্ড নবী মুসায়ালামাকে হত্যা করার সৌভাগ্য অর্জন করেন।

৩. ইকরিমা ইবনে আবু জাহেল: তার বাবা ছিল ইসলামের বড় শত্রু। তিনি রসুল (সাঃ) এর বিরোধিতা করে যান ও যুদ্ধ করেন। তিনি বীরযোদ্ধা ও খালিদ (রাঃ) এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। মক্কা বিজয়ের পর যাদের ক্ষমা করা হয়নি তিনি তাদের একজন। তিনি পালিয়ে ইয়েমেন চলে যান। ঘটনাক্রমে তিনি হেদায়তপ্রাপ্ত হন ও ক্ষমা পান। ইকরিমা (রাঃ) বলেছিলেন- আল্লাহর শপথ রসুলুল্লাহ, আমি শপথ করছি- যা কিছু আমি আল্লাহর পথে শত্রুতায় ব্যয় করেছি, তার দ্বিগুন ব্যয় করবো আল্লাহর পথে। ইসলামের বিরুদ্ধে যত যুদ্ধ করেছি তার দ্বিগুন করবো ইসলামের পক্ষে। রোমান সাম্রাজ্য তৎকালীন সবচেয়ে বড় পরাশক্তির সাথে মুসলিমরা মুখোমুখি হয় ইয়ারমুকের যুদ্ধে। দেড় লাখ রোমান সেনার মেকাবিলায় মাত্র তেত্রিশ হাজার মুসলিম। ইকরিমা (রাঃ) সিদ্ধান্ত নিলেন সুরক্ষিত রোমান বাহিনীর ভেতরে প্রবেশ করবেন। খালিদ (রা) বাধা দিয়ে বললেন- তোমার মৃত্যু হবে মুসলমিদের জন্য বড় আঘাত।

ইকরিমা (রাঃ) বলেছিলেন- কাফের অবস্থায় আমি রসুল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে অনেক যুদ্ধ করেছি। আর এখন আমি মুসলিম রোমানদের দেখে পালিয়ে যাবো তা হতে পারে না। ইকরিমা (রাঃ) লোকদের আহ্বান করলেন- কে কে আছো, আমার সাথে মৃত্যুর জন্য বায়াত করবে। মোট ৪০০ মুজাহিদ তাকবির ধ্বনি দিয়ে রোমান বাহিনীর ভেতর ঢুকে গেল এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়তে থাকলো এবং তার আক্রমনে যে ক্ষতি হয়েছিল রোমানরা তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ইকরিমা (রাঃ) শহীদ হন।

এটা ইসলামের সৌন্দর্য্য। তাই পাপ করে নিরাশ না হয়ে আল্লাহর পথে ফিরে আসেন নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে আছে উত্তম প্রতিদান। পাপের পথে যতটা শ্রম, ত্যাগ, অর্থ ব্যয়, দৃঢ়তা ছিল ইসলামের পথে তার চেয়ে বেশি ত্যাগ, ব্যয়, দৃঢ়তা দেখিয়ে আল্লাহর প্রিয় হয়ে উঠেন।

আর কারো অন্তরের ব্যাপারে আল্লাহ জানেন, তিনি সঠিক হিসাব নিবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তার দ্বারা কুফরী প্রকাশ পায়নি তার কথা মানতে হবে।

উসামাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আল-হুরূকাত (নামক স্থানে) অভিযানে প্রেরণ করলেন। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে শত্রুরা পালিয়ে গেলো।

’আমরা তাদের এক ব্যক্তিকে ধরে ফেলতে যখন ঘেরাও করলাম, তখন সে ’’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ পাঠ করলো। এ সত্ত্বেও ’আমরা তাকে আঘাত করে হত্যা করলাম। পরে ঘটনাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালাম। তিনি বললেনঃ কিয়ামতের দিন ’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তোমার বিরুদ্ধে বাদী হলে কে তোমার জন্য সুপারিশ করবে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো তরবারির ভয়ে কালেমা পাঠ করেছে। তিনি বললেনঃ সে তরবারির ভয়েই কালেমা পাঠ করেছে, তা কি তুমি তার অন্তর ফেড়ে দেখেছো? কিয়ামতের দিন ’’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ এর সামনে কে তোমাকে নাজাত দিবে (বর্ণনাকারী বলেন,) তিনি বারবার এ কথা বলতে থাকলেন। এমন কি আমার মনে হচ্ছিল, আমি যদি এ দিনটির পূর্বে মুসলিম না হতাম! (সহীহ)

সাহাবীরা (রাঃ) কি খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা:) এর বর্নিত হাদীস আমল করেনি, তার নেতৃত্ব কি মেনে নেননি যেহেতু অতীতে তিনি ভুলপথে ছিলেন?!

সুতরাং কারো ভুল হলে দলিলভিত্তিক আলোচনা করুন, সত্য বললে মেনে নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *