হেযবুত তাওহীদ ফেতনা

বহুদিন ধরে লক্ষ্য করলাম পেইজে কিছু লেখলে নির্দিষ্ট কিছুলোক বাজে কমেন্ট করে। জ্ঞানী ভাব দেখায় অথচ কুরআন, সুন্নাহের নূন্যতম জ্ঞান নেই। তাদের প্রোপাইলে ঢুকে অবাক হয়ে গেলাম কেউ শয়তান রাজনীতিবিদদের অনুসারী, পীরপূজারী, শিয়া এমনকি হেযবুত তাওহীদের অনুসারী রয়েছে অনেকে। তাই আমাদের বিরুদ্ধে যারা বলে তাদের আকীদা আগে জানুন। অবাক লাগে বাংলাদেশের মত একটা দেশে হিযবুত তাওহীদের মত ফেতনাবাজরা প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালায় অথচ এটা নাকি আলেমদের ভূমি। হিযবুত তাওহীদ ১৯৯৫ সালে হোমিও ডাক্তার খ্যাত বায়াজীদ খান পন্নী নামক জনৈক ব্যক্তির দ্বারা টাঙ্গাইল করটিয়ায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এটি নামধারী একটি ইসলামিক দল হলেও মূলত এটি ইসলাম ধ্বংস করার গোপন ষড়যন্ত্র। সম্রাট আকবর যেমন সব ধর্ম মিলিয়ে দ্বীনে এলাহী নামক একটি ধর্মের গোড়াপত্তন করেছিল ঠিক তেমনি বায়েজিদ খান পন্নীও সম্রাট আকবর প্রতিষ্ঠিত দ্বীনে এলাহী নামক ধর্মের মতই হেযবুত তওহীদ নামক এ নতুন ধর্মটি আবিষ্কার করেন। খুব অল্প সময়ে উদ্ভট সব মতবাদ দিয়ে বেশ কিছু ভক্ত যুগিয়ে ফেলেন পন্নী সাহেব। ইসলামের মৌলিক বিধানাবলীর নতুন সব অপব্যাখ্যা করে পুরো দ্বীনটাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে রাখার দুষ্কর্ম তিনি আমরণ চেষ্টা করে যান। অবশেষে ১৬ ই জানুয়ারী ২০১২ ইং সনে তার মৃত্যু হয়।কিন্তু এতদিনে তার ভ্রান্ত দলের কর্মী হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার ধর্মের কিছু ভ্রান্ত আকিদা নিচে উল্লেখ করা হলঃ

(১) আল্লাহ প্রভুত্বের আসনে নেই। তারা বলে হঠাৎ করেই মুসলিম জাতীর আকিদা বিকৃত হয়ে গেছে। বর্তমান ইসলামকে বিকৃত প্রমাণে হাদিসের অপব্যাখা করে। যেমনঃ মহানবী ভবিষ্যদ্বাণী কোরেছেন –আমার উম্মাহর আয়ূ ৬০/৭০ বছর (হাদিস –আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে তিরমিযি ও ইবনে মাযাহ, মেশকাত)”। তারপর তিনি এই হাদিসের অর্থ ব্যাখ্যা করেন এভাবে: “অর্থাৎ তাঁর উম্মাহ পৃথিবীতে থাকবে ৬০/৭০ বছর, তারপর যেটা হবে সেটা নামে মাত্র উম্মতে মোহাম্মদী, সেটা প্রকৃত পক্ষে উম্মতে মোহাম্মদী নয়। (এসলামের প্রকৃত রূপরেখা-৪৯)।

(২) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে হবে যুক্তির ভিত্তিতে, অথচ ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ আর মুসলিম হল আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী। যে সকল যুক্তি, মতবাদ বাদ দিয়ে শুধু আল্লাহর নিয়মনীতির কাছে একনিষ্ঠ আত্মসমর্পণ করবে সেই মুসলিম। আরও বলেন নাস্তিকদের বিশ্বাসের স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা একজন ধার্মিকের কর্তব্য। নাস্তিকরা ইসলাম, রসুল ও আল্লাহকে নিয়ে কটুক্তি করে তাদের মতপ্রকাশের অধিকার দেওয়া হল ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্হ করা।

(৩) তারা আন্তঃধর্মীয় ঐক্যে বিশ্বাসী। অথচ কুরআন বলে- ইসলাম একমাত্র মনোনিত দ্বীন। রাসূল ﷺ কে আন্তঃধর্মীয় ঐক্যের মত কুফরি মতবাদের আহ্বায়ক প্রমাণে কুরআনের আয়াতের অপব্যবহার। হেযবুত তাওহীদের বক্তব্যঃ আল্লাহর শেষ রাসূল মুহাম্মদকে (স.) সকল জাতির উদ্দেশ্যে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন,”গ্রন্থের অধিকারী সকল সম্প্রদায়, একটি বিষয়ের দিকে এসো যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে এক তা হলো- আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারও ইবাদত করব না, তাঁর সাথে কোন অংশীদার সাব্যস্ত করব না, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে প্রভু বলে মানব না (সূরা ইমরান-৬৪)”। [সবার ঊর্ধ্বে মানবতা-১০]।

(৪) তাদের দাবী হলো “হেযবুত তওহীদ’ই হলো আল্লাহর পাঠানো আসল দ্বীনুল হক। তাদের এমামুযযামান খ্যাত বায়াজীদ খান পন্নীকে নাকি আল্লাহ পাক মো’জেজার মাধ্যমে বলেছেন যে,”হেযবুত তওহীদ” এ দলটি দিয়ে পুরো বিশ্বে সহীহ ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে। যারা হেযবুত তওহীদ করবে তাদের জন্য নিশ্চিত জান্নাত। এমনকি যদি কেউ হেযবুত তওহীদে থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে দুই শহিদের মর্যাদা পাবে। আর যারা পন্নী সাহেবের মোজেজা বিশ্বাস করবে না তারা মোনাফেক। তাদের কোনো মুক্তি নাই। তারা জাহান্নামী।”[লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।] অথচ মোজেজা শুধু নবীদের জন্য নির্দিষ্ট আর বুজুর্গদের কেরামতি। পন্নী সাহেবের তথাকথিত মু’জিজা বিশ্বাস না করা মুনাফেকি। পন্নীর বক্তব্যকে আল্লাহ ﷻ কুরআনের মত সত্যায়ন করেছেন নাউজুবিল্লাহ।

(৫) বর্তমান আমরা যে ধর্মটিকে ইসলাম হিসেবে দেখছি, যেটাকে ধর্মপ্রাণ মানুষ অতি যত্ন সহকারে পালন করার চেষ্টা করছেন, যে ইসলামটাকে সর্বত্র স্কুল, কলেজ মাদ্রাসায় ও পীরের খানকায় শেখানো হচ্ছে সেটা প্রকৃত ইসলাম নয়”।(সূত্রঃ এসলাম শুধু নাম থাকবে- পৃঃ ৯)। যাত্রাদলের বন্দুকের সঙ্গে আসল বন্দুকের যতটা পার্থক্য প্রকৃত ইসলামের সঙ্গে বর্তমান ইসলামের ততটাই পার্থক্য। এ দু’টির চলার পথ সম্পূর্ণ বিপরীত”। (সূত্রঃ এসলাম শুধু নাম থাকবে- পৃঃ ৯)। ৬০/৭০ হিজরীর পর থেকে ১৩০০ হিজরির পর পুরো ইসলাম ধর্মটি বিকৃত হয়ে গিয়েছে এবং সমস্ত মুসলমান কাফের এবং মুশরিক হয়ে গিয়েছে। সুতরাং প্রচলিত এসলামটি আসল এসলাম নয় বরং আল্লাহর প্রেরিত ইসলামের বিপরিত এটা।অথচ হাদীসে আছে- কেয়ামত পর্যন্ত একটি দল হক্ব পথে লড়াই করবে আর প্রতি শতকে একজন মুজাদ্দিদ আসবে।(মুসলিম, আবুদাউদ)।

(৬) বর্তমানে তারা ছাড়া পুরো মানবজাতি কাফের ও মুশরিক।অথচ হাদীসে- শামবাসী, ইয়েমেনবাসীর জন্য দোয়া করা হয়েছে সেখানে তো তাদের ভক্ত নেই। মু’মিন হতে হলে বায়েজিদ খান পন্নীর আনুগত্য আবশ্যক। তারমানে যখন বায়েজীদ খান পন্নী আসেননি বিশ্বে কোন মুমিন ছিল না। তাদের আরো দাবি চলমান ইসলাম বিকৃত, এটা হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্মের মত -এটা আসল ইসলাম নয়।

(৭) সশস্ত্র জিহাদে রত নয় এমন কেউ উম্মতে মুহাম্মদী নয়!। অথচ ওরা নিজেরা জেহাদ করে না প্রকৃত মুজাহিদদের জঙ্গি বলে। জিহাদ না থাকলে সালাতের কোন দাম নেই!। অথচ যখন জেহাদ ফরজ হয়নি তখন সাহাবীদের সালাত হয় নি!? আর অন্ধ, পঙ্গু, অসুস্হদের উপর জেহাদ ফরজ নয় তার মানে তাদের সালাত কবুল হবে না। তারা আরো বলে জিহাদকারীর সম্মান নবীদেরও উপরে নাউজুবিল্লাহ। নবীরা যা পারেন নি তা করতে মনোনিত বায়জীদ খান পন্নী। অথচ আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হল নবীগণ। তারা আরো বলে থাকে, হিন্দু দেবতা শ্রীকৃষ্ণ নবী ছিল। বিশ্বনবী ﷺ কে ‘রহমাতুল্লিল আ’লামীন’ বলা যাবে না।

(৮) কবিরা গুণাহের হিসাব দেওয়া লাগবে না অথচ আল্লাহ ক্ষমা না করলে প্রতিটি জিনিসের হিসাব দিতে হবে। নাচ, গান, ভাস্কর্য নির্মাণ, বাদ্যযন্ত্র, চিত্রাঙ্কন ইত্যাদি হালাল যা কুরআনের সম্পূর্ণ বিপরীত। সালাত মৌলিক ইবাদাত নয়, সালাত হচ্ছে কুচকাওয়াজ, জিহাদের প্রশিক্ষণ। প্রচলিত প্রসিদ্ধ সালাতের থেকে তাদের সালাত সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের মতে রুকু সিজদা জোরে ঘন ঘন দিতে হয়, ইত্যাদি। রমজানে সিয়াম না রাখলে গুনাহ নেই! অথচ সিয়াম ফরজ। হজ্ব ইবাদত নয় বরং তা হচ্ছে মুসলিমদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্স!! অথচ হজ্ব ও সিয়াম ফরজ ইবাদতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও পাঁচ স্তম্ভের অন্তর্ভুক্ত। তাদের যুক্তি নারীদের আপাদমস্তক পর্দায় আবৃত করা মানবাধিকার লংঘন এবং নির্যাতনমূলক।

(৯) টুপি, দাড়ী, পাগড়ি, জুব্বা এগুলোর সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জোর দাবী তুলেছেন তারা। অথচ বিধর্মীদের মত দাড়ীতে ষ্টাইল করা রুচিসম্মত কাজ মনে করে থাকেন। হজরত ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ (সা.) মোচ খাটো করার এবং দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ দিতেন (সহিহ মুসলিম ১/১২৯, ২৫৯)। হজরত হাসান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ১০টি স্বভাব এমন ছিল, যেগুলো অবলম্বন করে কওমে লুত ধ্বংস হয়ে গেছে। তার মধ্যে একটি দাড়ি কর্তন করা ও গোঁফ লম্বা করা (দুররে মনসুর ৫/৬৪)।

(১০) দাজ্জাল কোনো মানুষ নয়, পাশ্চাত্য বস্তুবাদী ইহুদি খ্রিস্টান যান্ত্রিক সভ্যতাই হচ্ছে দাজ্জাল। তাহলে রসুল (সাঃ) ও সাহাবীরা ইবনে সাইয়েদকে দাজ্জাল ভাবলেন কেন? পরবর্তীতে তামিম আদদারী দাজ্জালকে বন্দী অবস্থায় দেখেন। তাদের বিশ্বাস খ্রিস্টানদের অপকর্মের জন্য ঈসা (আঃ) এর দায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

(১১) কুরআনের আয়াতের তাফসীরগত মতপার্থক্য ও ফিকহী মতপার্থক্য কুফরী, শিরক ও বিদআত। তাই গোটা মুসলিম উম্মাহ কাফের ও মুশরিক। আকীদা ঠিক থাকলে মাসায়ালগত দ্বন্দ্বের কারণে কেউ কাফের হয় না। তাই যতই উন্নয়নের প্রচারনা করুক ইসলামের ক্ষতি করাই ওদের উদ্দেশ্য।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *