আল্লাহ গাফুরুর রহীম অর্থাৎ আল্লাহ ক্ষমা করেন এবং দয়া করেন। কেউ যদি সারা জীবন শিরক, কুফর ও পাপে লিপ্ত থাকে পরিশেষে তওবা করে আল্লাহ তাকে ক্ষমা ও দয়া করেন। এমনকিছু দান করেন যা বান্দার কল্পনার বাহিরে। উদাহরণ –
১. খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ): যার নেতৃত্বে উহুদ যুদ্ধে মুসলিমসহ ও রসুল (সাঃ) ক্ষতির সম্মুখীন হন। হামজা (রাঃ), মুসাইব বিন উমায়ের (রাঃ) শাহাদাত বরণ করেন, রসুলের (সাঃ) দাত শাহাদাত ও রক্তাক্ত হন। অথচ তিনি যখন মুসলিম হলেন আল্লাহ ও রসুল (সাঃ) তাকে ক্ষমা করে দিলেন। তাকে মুসলিমদের বিজয়ের সেনাপতি বানানো হল ও তার উপাধি হল সাইফুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর তরবারি।
২. ওয়াহশি ইবনে হারব: যিনি হামজা (রাঃ) এর হত্যাকারী। যার সহায়তায় হিন্দা হামজা (রাঃ) এর কলিজা ভক্ষনের চেষ্টা করেন। মক্কা বিজয়ের পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। রসুল (সাঃ) তার নিকট চাচা হত্যার মর্মান্তিক বর্ণনা শুনে বলেন- ইসলাম গ্রহণের কারণে তোমাকে ক্ষমা করা হয়েছে কিন্তু মানা করেন তিনি যেন কখনও রসুলের (সাঃ) সম্মুখে না আসে।কারণ তাকে দেখলে হামজা (রাঃ) এর মর্মান্তিক ঘটনা মনে পড়বে। রসুল (সাঃ) এর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি রসুলের (সাঃ) মুখামুখি হন নি। তার মৃত্যুর পর ভন্ডনবী মুসায়ালামাকে হত্যা করার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
৩. ইকরিমা ইবনে আবু জাহেল: তার বাবা ছিল ইসলামের বড় শত্রু। তিনি রসুল (সাঃ) এর বিরোধিতা করে যান ও যুদ্ধ করেন। তিনি বীরযোদ্ধা ও খালিদ (রাঃ) এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। মক্কা বিজয়ের পর যাদের ক্ষমা করা হয়নি তিনি তাদের একজন। তিনি পালিয়ে ইয়েমেন চলে যান। ঘটনাক্রমে তিনি হেদায়তপ্রাপ্ত হন ও ক্ষমা পান। ইকরিমা (রাঃ) বলেছিলেন- আল্লাহর শপথ রসুলুল্লাহ, আমি শপথ করছি- যা কিছু আমি আল্লাহর পথে শত্রুতায় ব্যয় করেছি, তার দ্বিগুন ব্যয় করবো আল্লাহর পথে। ইসলামের বিরুদ্ধে যত যুদ্ধ করেছি তার দ্বিগুন করবো ইসলামের পক্ষে। রোমান সাম্রাজ্য তৎকালীন সবচেয়ে বড় পরাশক্তির সাথে মুসলিমরা মুখোমুখি হয় ইয়ারমুকের যুদ্ধে। দেড় লাখ রোমান সেনার মেকাবিলায় মাত্র তেত্রিশ হাজার মুসলিম। ইকরিমা (রাঃ) সিদ্ধান্ত নিলেন সুরক্ষিত রোমান বাহিনীর ভেতরে প্রবেশ করবেন। খালিদ (রা) বাধা দিয়ে বললেন- তোমার মৃত্যু হবে মুসলমিদের জন্য বড় আঘাত। ইকরিমা (রাঃ) বলেছিলেন- কাফের অবস্থায় আমি রসুল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে অনেক যুদ্ধ করেছি। আর এখন আমি মুসলিম রোমানদের দেখে পালিয়ে যাবো তা হতে পারে না। ইকরিমা (রাঃ) লোকদের আহ্বান করলেন- কে কে আছো, আমার সাথে মৃত্যুর জন্য বায়াত করবে। মোট ৪০০ মুজাহিদ তাকবির ধ্বনি দিয়ে রোমান বাহিনীর ভেতর ঢুকে গেল এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়তে থাকলো এবং তার আক্রমনে যে ক্ষতি হয়েছিল রোমানরা তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ইকরিমা (রাঃ) শহীদ হন।
এটা ইসলামের সৌন্দর্য্য। তাই পাপ করে নিরাশ না হয়ে আল্লাহর পথে ফিরে আসেন নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে আছে উত্তম প্রতিদান। পাপের পথে যতটা শ্রম, ত্যাগ, অর্থ ব্যয়, দৃঢ়তা ছিল ইসলামের পথে তারচেয়ে বেশি ত্যাগ, ব্যয়, দৃঢ়তা দেখিয়ে আল্লাহর প্রিয় হয়ে উঠেন।