শামের ফেতনার সূচনা!!

রসুল (সাঃ) বলেছেন শামের ফেতনার সূচনা হবে শিশুর খেলাকে কেন্দ্র করে (আল ফিতান)। বাস্তবেও তাই ঘটেছিল। ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে তিউনিসিয়ার এক গভর্নর অফিসের সামনে অসহায় ফেরিওয়ালা নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। জীবনযুদ্ধে মোহাম্মদ বুআজিজি নামের লোকটি এক পরাজিত সৈনিক। তিনি কোনোভাবেই পরিবারের ভরণপোষণ করতে সক্ষম হচ্ছিলেন না। তার দুঃখ এবং সংসার-সংগ্রাম দুঃখী অনেক তিউনিসিয়ানের জীবনগাথার মতোই। তিউনিসিয়ার মন্দ অর্থনীতি, বেকারত্ব ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অতিষ্ঠ মানুষের কাছে বুআজিজি নতুন বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তা ছিল সংগ্রাম ও বিদ্রোহের বার্তা। তিউনিসিয়া থেকে সে বার্তা আরব বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বুআজিজি সংগ্রামের প্রতীকে পরিণত হন। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনাবলির জের ধরে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদিন বেন আলীর ২৩ বছরের শাসন শেষ হয় গণবিক্ষোভের কারণে। এরপর এই আন্দোলন মিশর, ইয়েমেনসহ বহু দেশের মানুষকে সাহসী করে ফলে মিশরের দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। টিভিতে এই বিপ্লব দেখছিল মুয়াবিয়া সাইনেস নামক ১৪ বছর বয়সী এক সিরিয়ান তরুন যে দারার এক স্কুলের ছাত্র ছিল। এই দেখে সে দেওয়ালে বাশারের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগায়। কিছু তরুনকে গ্রেফতার করা হয়। আস্তে আস্তে হত্যাকান্ড, পুলিশের গুলিবর্ষণে উত্তাল হয় সিরিয়ার দারা শহর, ক্রমানয়ে তা পুরোদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাশার ও তার প্রশাসন নির্দেশ দেয় গুলি চালাতে কিন্তু সেনাবাহিনীর কিছুলোক বিদ্রোহ করে এবং আস্তে আস্তে বাশার ও তার বাহিনীর নির্যাতন ও তাদের আকীদা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সারাবিশ্বে মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ হয় ঈসমাইলী নুসাইরিয়া শিয়াদের বিরুদ্ধে। শিয়াদের বহুপ্রকারভেদ আছে ১. রাফেজী ২. যাইদীয়া ৩. ইসমাইলিয়া (আলাভী, নুসাইরিয়া)। তার মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল নুসাইরিয়া যা সিরিয়া ও লেবাননে আছে। সকল আলেমদের ইজমা তারা কাফের। শিয়াদের মূল বই- উসুলুল কাফী।

১. ওরা কুরআনকে বিকৃত মানে

২. চার সাহাবী ছাড়া সকলকে কাফের মানে

৩. আবুবকর, উমর, হাফসা, আয়েশা (রাঃ) দের অভিশাপ দেন

৪. ওরা বিশ্বাস করে ওদের ঈমামগণ সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাশীল। তবে সবচেয়ে খারাপ হল সিরিয়া ও লেবাননের শিয়ারা ওরা আলভী বা নুসাইরিয়া। বাশার ও তার সহযোগী শিয়াদের বসবাস সিরিয়ার লাটাকিয়ায়। সিরিয়ার ক্ষমতা ও প্রশাসনের বেশিরভাগই ওদের। ওদের মূল বই হাফতুশ শরীফ- যেখানে আলীকে (রাঃ) আল্লাহর মানবরূপ মানা হয়। তাদের বই “আল-হাফতুশ শরিফ” থেকে একটি উদাহরণ পেশ করছি, যা থেকে তাদের পথভ্রষ্টতার ধারণা হবে: “হুসাইন যখন ইরাকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল, তখন আল্লাহ তার শরীরে অন্তরীণ হলেন। তিনি যেখানে অবতরণ করেছেন, জিবরীল সেখানে তার নিকট এসেছে ও কথা বলেছে। যখন যুদ্ধের দিন উপস্থিত হল, বিরোধী সৈন্য তাকে ঘিরে ধরল, ঘোড়াগুলো সারিবদ্ধ দাঁড়াল ও যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল, তখন আমাদের মাওলা হুসাইন জিবরীলকে ডেকে বলেন: হে ভাই! আমি কে? তিনি বললেন: আপনি আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরজাগ্রত, জীবন-মৃত্যুর মালিক। আপনি আসমানকে নির্দেশ করেন, ফলে সে আপনার আনুগত্য করে। আপনার নির্দেশে জমিন স্থির দাঁড়ায়, পাহাড় আপনার ডাকে সাড়া দেয়, সমুদ্রসমূহ আপনার আনুগত্যে দ্রুত ছুটে আসে। আপনি সে সত্তা, যার নিকট ষড়যন্ত্রকারীর ষড়যন্ত্র ও অনিষ্টকারীর অনিষ্ট পৌঁছুতে পারে না”। “আল-হাফতুশ শরিফের” গ্রন্থকার অন্যত্র বলেন: জিবরীল উমাইয়্যাদের সেনাপ্রধান সাদ ইবনে ওমরকে লক্ষ্য করে বলেন: “তুমি ধ্বংস হও, তুমি দু’জাহানের রব, পূর্বাপর সকল মাখলুকের রব, আসমান-জমিন ও তার মধ্যবর্তী সবকিছুর স্রষ্টাকে হত্যা করছ? ওমর ইবনে সাদ এ ঘোষণা শোনে ভয়ে কম্পিত হয়”। এ জাতীয় আরো অনেক বেহুদা আলোচনা রয়েছে, যা তাদের বোকামি ও নির্বুদ্ধিতার প্রমাণ। “আল-হাফতুশ শরিফের” লেখক ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে গাল-মন্দ করে বলেন: “তিনি হুসাইনের যুগে পুনর্জন্ম বিধান মতে ভেড়ার আকৃতিতে ছিলেন, আল্লাহ ফিদিয়া হিসেবে হুসাইনকে তা প্রদান করেন। তিনি ওমরকে জবাই করেন, যার নাম ছিল “দালামাহ” বা “আদলামা”। তিনি মুফাদ্দাল থেকে বর্ণনা করেন, সাদেক তাকে বলেছেন: “হে মুফাদ্দাল, যে ভেড়াটি হুসাইনকে ফিদিয়া হিসেবে দেয়া হয়েছিল, তার নাম আদলাম, কুরাইশদের আদলাম। ওমর তখন বৃদ্ধাবস্থায় ভেড়ার আকৃতিতে ছিল”। অতঃপর তিনি বলেন: তার শিং দু’টি কাবার সাথে ঝুলন্ত রয়েছে।”

যখন শামে জেহাদ শুরু হয় তখন পশ্চিমারা নিজ স্বার্থে বিদ্রোহীদের সাহায্য করে আর ইরান, রাশিয়া বাশারের পক্ষ নেয়। কিন্তু মুজাহিদরা যখন বিজয় অর্জন করে আকসা মুক্ত করার আশ্বাস দেয় তখন ইসরায়েল ওদের বিরোধিতা করে। আর ইসরায়েলকে বাচাতে পশ্চিমাসহ বহু আরবদেশ বিদ্রোহীদের উপর হামলা চালায়। একসময়ের মুজাহিদরা সব জঙ্গি হয়ে গেল। অথচ বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট আকীদার অধিকারী বাশার ও তার সহচরদের বিরুদ্ধে কিছুই করলো না।

এবার আসি, কেন শামের ঘটনা শেষ জমানায় গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম ও আল ফিতান অনুযায়ী – শেষ জমানায় বিশ্বের সবচেয়ে জালেম শাসক হবে উমাইয়া বংশ হতে যারা শামের ক্ষমতায় থাকবে, যাদের সহচর হবে অধিকাংশ বনু কাল্ব গোত্রের এবং তারা মাহাদীর বিরুদ্ধে প্রথম বাহিনী পাঠাবে আর মাহাদী প্রথম সুফিয়ানীকে পরাজিত করবে। বাশারসহ তার সেনারা বনু কাল্ব গোত্রের যদিও মূল ক্ষমতা ও জালেম হল তার ভাই মাহের আল আসাদ সেনাপ্রধান। অবাক ব্যাপার হল বাশার শিয়া হলেও তার স্ত্রী আসমা সুন্নী। হাদীসমতে- ২য় সুফিয়ানীর আগমন হবে হঠাৎ, সবচেয়ে নিকৃষ্ট হবে সে যার মা/মামার বংশ হবে বনু কাল্ব। মাহের আল আসাদের আগে যে সেনাপ্রধান ছিল তার বোন বুশরার স্বামী আসিফ শওকত। বোমা হামলায় তার মৃত্যুর পর বুশরা সন্তানসহ আত্মগোপনে চলে যান। হয়তো বুশরার সন্তান হতে কেউ সুফিয়ানী হতে পারে আল্লাহ ভালো জানে। মাএ ২ বছর আগে ইরান ও নুসাইরিয়া শিয়ারা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহঃ) ও তার স্ত্রী ফাতেমার (রহঃ) কবর খুড়ে লাশ গুম করে। এতে সিরিয়ার ক্ষমতাসীন শিয়ারা আনন্দ উৎসব করে, এর পূর্বে ইরান ও রাশিয়া চেষ্টা করে কবর খননের। অথচ উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহঃ) শিয়া, সুন্নী সকল আলেমের মতে তিনি প্রথম মুজতাহিদ। তিনি ক্ষমতা নেওয়ার পর বহুবছর ধরে আলী (রাঃ) কে লানত দেওয়াকে নিষিদ্ধ করেন। চার খলিফার পর তিনি এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ খলিফা হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া সিরিয়ার যুদ্ধে বাশারকে সাহায্যের নাম দিয়ে আল কুদসে হিজবুল্লাহ ও ইরাকের মিলিশিয়ারা লাখো মুসলিম হত্যা করে। অথচ সিরিয়ায় কুর্দী বাহিনী Sdf, pkk, ypg এর সাথে ওরা অবস্থান করে, একটা বুলেটও মারে নি। বরং pkk নেতা আবদুল্লাহ আকলানের সাথে সিরিয়ার বাশারের ভালো সম্পর্ক, সে দীর্ঘদিন সিরিয়ায় ছিল। বরং তুর্কীর বিরুদ্ধে pkk যুদ্ধ করে। ইরানের বিরোধিতা করলে মানুষভাবে সৌদীপন্হী আবার সৌদীর বিরুদ্ধে বললে পীরপূজারী আসলে আমাদের মুসলিম মূল পরিচয় ইসলামপন্হী। নিচে কমেন্টে নুসাইরিয়া আকীদার বইয়ের লিংক ও ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহঃ) কবরের ভিডিও দেওয়া হলো। ডা. আরিফির লেকচার যাকে এই লেকচারের পর সৌদি গ্রেফতার করে রাজনীতিক বক্তব্য না দেওয়ার শর্তে মুক্তি দেয়। আর কি বলবো হয়তো প্রাণভয়ে তিনি বিভ্রান্তিকর কিছু বক্তব্য দেন জেল হতে মুক্ত হয়ে।

6 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *