মানুষ স্বপ্ন দেখবে এটা স্বাভাবিক। মুমিনের স্বপ্ন সত্য ও কেয়ামতের পূর্বে তা সত্য হবে।
জনৈক মিসরীয় ব্যাক্তি থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবুদ দারদা (রাঃ) কে আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ “দুনিয়াবী জীবনে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ” (সূরাঃ ইউনুস-৬৪) প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করার পর হতে আজ পর্যন্ত তুমি ও অপর এক ব্যক্তি ব্যতীত আর কেউ আমাকে প্রশ্ন করেনি। আমি এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেনঃ এই আয়াত নাযিলের পর হতে আজ পর্যন্ত আমাকে তুমি ব্যতীত আর কোন ব্যক্তি এ বিষয়ে প্রশ্ন করেনি। আর তা (বুশরা) হল সত্য স্বপ্ন যা মুসলিম ব্যক্তি দেখে বা তাঁকে দেখানো হয়।
সহীহ, সহীহাহ্ (১৭৮৬, মুসলিম শরীফ)
জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২২৭৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রিসালাত ও নাবূওয়াতের ধারাবাহিকতা অবশ্যই সমাপ্ত হয়ে গেছে। অতএব, আমার পরে আর কোন রাসূলও প্রেরিত হবে না এবং নাবীও আসবে না। বর্ণনাকারী বলেন, বিষয়টি জনগণের নিকট কঠিন মনে হলো। তারপর তিনি বললেনঃ তবে মুবাশশিরাত অব্যাহত থাকবে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মুবাশশিরাত কি? তিনি বললেন, মুসলমানের স্বপ্ন। আর তা নবূওয়াতের অংশসমূহের একটি অংশ।
সনদ সহীহ।
জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২২৭২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD
তার মানে মুমিনের স্বপ্ন গুরুত্বপূর্ণ। তার মধ্যে রসুলল্লাহ’(সাঃ) স্বপ্নে দেখা আরও বেশি মর্যাদার।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে আমাকেই দেখল। কেননা বিতাড়িত শয়তান আমার রূপ ধরতে পারে না। আর যে ব্যক্তি আমার ওপর মিথ্যাচার করল, সে তার দোজখের আসন গ্রহণ করল। ’ –সহিহ বোখারি : ১১০
অন্য আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আমাকে স্বপ্নে দেখল, শিগগিরই সে আমাকে জাগরণে দেখবে অথবা সে যেন আমাকে জাগরণেই দেখল। আর শয়তান আমার রূপ ধরতে পারে না।’ –সহিহ মুসলিম : ২২৬৬
ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায় যে, অনেক সাহাবি, তাবেঈ ও বুজুর্গরা নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখেছেন। ইসলামের বিধান হলো, নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখা বাস্তবে দেখার মতো। কেননা, শয়তান কখনও নবীজির আকৃতি ধারণ করতে পারে না। কোন ব্যক্তিই রসুলকে (সাঃ) স্বপ্নে দেখছে দাবি করলেই বিনা দলিলে তার সকল নির্দেশ মানতে হবে এমনটা নয়!! কারণ অনেক সাহাবী স্বপ্নে দেখেছেন তার জন্য বাকী সাহাবীরা বিনা দলিলে তাকে অনুসরণ করেছেন তা নয় বরং কুরআন, সুন্নাহর ভিত্তিতে পরস্পর আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। কেউ রসুলকে (সাঃ) স্বপ্নে দেখলো তা প্রচার করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল – রসুল (সাঃ) যে দ্বীনকে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করেছেন সেভাবে অনুসরণ করা। কিন্তু বর্তমানে বহুলোকই কুরআন সুন্নাহর বিপরীত চলে অথচ রসুলুল্লাহকে (সাঃ) স্বপ্নে দেখার দাবি করে।
স্বপ্নে নতুন কোন বিধান নাযিল হবে না যেমনঃ নতুন দুরুদ, সালাত। কারণ দ্বীন পূর্নাঙ্গ করা হয়েছে বরং স্বপ্নে রসুলের (সাঃ) সুন্নাতের উপর চলার নির্দেশ আসতে পারে – যেমন স্বপ্নে কাউকে তাহাজ্জুদ, নফল সিয়াম রাখার নির্দেশ আসতে পারে।
সাহাবী, তাবেয়ীরা কেউ রসুলকে (সাঃ) স্বপ্নে দেখেছেন দাবি করলে তাকে স্বপ্নে রসুল (সাঃ) এর চেহারা কেমন ছিল তা জানতে চাইতেন। যদি রসুল (সাঃ)-এর প্রকৃত চেহারার সাথে মিলতো তাহলে তার বক্তব্যকে সত্য হিসেবে ধরতো।
কিন্তু বর্তমানে বহু ভন্ড বুজুর্গ, পীর দাবিদার রসুলের (সাঃ) আকৃতি কেমন ছিল জানা নেই তবুও রসুলল্লাহকে (সাঃ) স্বপ্নে দেখার দাবি করে।
রাসূল (সা) এর গাঠনিক বর্ণনা
মুহাম্মদ ইব্ন সা’দ ওয়াকিদীর বরাত দিয়ে হযরত আলী থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (আলী) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) আমাকে ইয়ামানে পাঠালেন।
একদিন আমি (সেখানে) লোকদের সম্বোধন করে কথা বলছিলাম। আর তখন জনৈক ইয়াহুদী পুরোহিত দাঁড়িয়ে তার হাতের ধর্মগ্রন্থে নজর রাখছিল। এরপর সে যখন আমাকে দেখল তখন বলল, আমাদেরকে আবুল কাসিম (সা)-এর দেহাবয়বের বর্ণনা দিন।
তখন আলী (রা) বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বেঁটে নন, অতি দীর্ঘায়তনও নন, তাঁর চুল অতি কোঁকড়ানোও নয়, আবার অতি সোজাও নয়। তিনি আধা-কোঁকড়ানো ও কাল চুলের অধিকারী, তাঁর মাথা বিশাল, গাত্র বর্ণ লাল আভা মিশ্রিত, পরিপুষ্ট অঙ্গসন্ধি, হস্তদ্বয় ও পদযুগলের তালু মাংসল ও কোমল, বুক থেকে নাভি পর্যন্ত প্রলম্বিত কেশরেখার অধিকারী, তাঁর চোখের পাতায় ঘন পালক, ভ্রূযুগল সংযুক্তপ্রায়, কপাল প্রশস্ত ও মসৃণ, উভয় কাঁধের মাঝে প্রশস্ত দূরত্ব।
যখন তিনি হাঁটেন তখন পা তুলে তুলে হাঁটতেন যেন নিচের নিকে নেমে যাচ্ছেন। তাঁর পূর্বেও আমি তাঁর মত কাউকে দেখিনি তাঁর পরেও না।
আলী (রা) বলেন, এরপর আমি চুপ হলে ইয়াহুদী পুরোহিত আমাকে বলল, আর কি? আলী বলেন, (তখন আমি বললাম) “এখন আমার এতটুকুই স্মরণ হচ্ছে।” তখন ইয়াহুদী পুরোহিতটি বলল, তাঁর দু’চোখে লাল আভা রয়েছে, তিনি সুন্দর দাড়ি, সুন্দর মুখ এবং পূর্ণ কর্ণদ্বয়ের অধিকারী, পূর্ণদেহে সামনে তাকান এবং পূর্ণদেহে পিছনে তাকান (অর্থাৎ আড় চোখে তাকান না)।
তখন আলী (রা) বললেন, আল্লাহর কসম, এগুলিও তাঁর বৈশিষ্ট্য। ইয়াহুদী পুরোহিত বলল, আর কি জানেন ?
আলী বললেন, তা কি? পুরোহিতটি বলল, তাঁর মাঝে রয়েছে সম্মুখে ঝোঁক। আলী বললেন, এটাই তো আমি আপনাকে বললাম, যেন তিনি ঢালু ভূমি থেকে নামেন।
পুরোহিতটি বলল, আমার পূর্ব পুরুষদের গ্রন্থসমূহে আমি এই বিবরণ পাই।
এছাড়া আমরা আরো পাই যে, তিনি আল্লাহর হারামে সম্মানিত স্থানে, নিরাপত্তাস্থলে ও তাঁর পবিত্র ঘরের স্থানে প্রেরিত হবেন। তারপর তিনি এমন হারামে (ভূখণ্ডে) হিজরত করবেন, যাকে তিনি নিজে ‘হারাম’ (সম্মানিত) ঘোষণা করবেন এবং তার জন্যও আল্লাহ্ ঘোষিত হারামের ন্যায় মর্যাদা সূচিত হবে।
আমরা আরো পাই যে, তাঁর সাহায্যকারী আনসারগণ হবেন খর্জুর বীথির অধিকারী উমর ইব্ন আমিরের বংশধর একগোত্র। আর তাদের পূর্বে সেখানকার বাসিন্দা হল ইয়াহূদীরা।
আলী বললেন, তিনিই তিনি এবং তিনি আল্লাহর রাসূল।
তখন সেই ইয়াহুদী পুরোহিতটি বলল, এখন আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি নবী এবং সমগ্র মানবজাতির কাছে প্রেরিত আল্লাহর রাসূল। এ সাক্ষ্য ও বিশ্বাস নিয়েই বেঁচে থাকব এবং মৃত্যুবরণ করব এবং এ বিশ্বাস নিয়েই ইনশাআল্লাহ্ পুনরুত্থিত হব।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর থেকে সেই ইয়াহুদী পুরোহিত হযরত আলীর কাছে আসতেন এবং তিনি তাঁকে কুরআন শিক্ষা দিতেন এবং ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধান অবহিত করতেন। এরপর হযরত আলী এবং ঐ পুরোহিত সেখান থেকে চলে আসলেন এবং লোকটি হযরত আবূ বকর (রা)-এর খিলাফতকালে মৃত্যুবরণ করলেন। আর এ সময়ে তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি ঈমান রাখতেন এবং তিনি যে আল্লাহর রাসূল একথা স্বীকার করতেন।
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া – খন্ড ৬- পৃ -৩৪)
জনৈক ইয়াহুদীর মত ঈমান এনে কুরআন, সুন্নাহ মেনে চলাই একমাত্র মুক্তির পথ!!