মুশরিকদের সাথে আমাদের আচরণ

কোন একটা ঘটনা ঘটলেই আমরা নিজেদের জনপ্রিয় করতে যে যার মত কুরআন হাদীস ব্যাখা করি। আমাদের কুরআন-সুন্নাহে মুশরিকদের সাথে আচরণ সুস্পষ্ট বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন- “হে মুমিনগন তোমাদের আপনজন ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরুপে গ্রহন করো না।” (সুরা আল ইমরান)। মুশরিকদের সাধারণত চারভাগে শ্রেনীভাগ করা যায়।

১. জালেম শত্রু মুশরিক কাফের- আবু লাহাব, আবু জাহেল, ফেরাউন, নমরুদের মত ইসলামের সাথে যারা যুদ্ধরত বা মুসলিমদের উপর নির্যাতনরত তারা, যারা রসুল, ইসলামকে গালি ও অবমানননা করে, ওরাই ইসলামের বড় শত্রু। স্বয়ং আল্লাহ তাদের সাথে যুদ্ধরত। আল্লাহ তাদের অভিশপ্ত, নিকৃষ্ট পাপী বলেছেন ও তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছেন। আল্লাহ নিজে তাদের অভিশাপ দেন- “ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুহাত” (সুরা লাহাব)। ওদের সাথে জেহাদ ফরজ হয়ে যায়।

২. জিম্মি কাফের- যারা কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্রে জিজিয়া (কর) দিয়ে থাকেন। তারা তাদের ধর্মপালন করবে, তাদের নিরাপত্তা দেওয়া ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তাদের অবস্হা খারাপ হলে দান সদকা করা যায়। দুঃখজনক হলো বিশ্বে কোথাও এরকম ১০০ ভাগ ইসলামী রাষ্ট্র নেই। এমন সময় ছিল মুশরিকরা খুশি হতো উমর (রাঃ) এর সেনাদল ও তারিক বিন যিয়াদের বাহিনী আসছে তাদের জালেম শাসক হতে মুক্ত করতে। ফলে তারা মুসলিমদের সাহায্য করতো। ওদের ইসলামের পথে উত্তমভাবে আহ্বান জানাতে হবে। ইনশাআল্লাহ হয়তো ভবিষ্যতে হারস বিন হাররাস, মনসুর ইয়ামেনী, শোয়েব বিন সালেহ, মাহাদীর বাহিনী জেরুজালেম হতে আসবে যারা উত্তর কোরিয়া, চীনের জালেমদের দাসত্ব হতে মানুষকে মুক্ত করবে।

৩. চুক্তিবদ্ধ কাফের/ মুশরিক- যাদের সাথে ইসলামী রাষ্ট্র চুক্তিবদ্ধ, তারা পরস্পর যুদ্ধ করবে না। পরস্পর বাণিজ্যসহ বহু উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারে। মুসলিমরা চুক্তির মেয়াদপূর্ন করতে হবে। মেয়াদ শেষ হলে যদি চুক্তি ভাঙ্গতে চায় সুস্পষ্ট ঘোষণা করতে হবে। আর কাফেররা বাড়াবাড়ি করলে চুক্তি ভেঙ্গে যায়। যেমনটা হবে রুমের সাথে মালহামায়। ওদের ইসলাম জানানোর দায়িত্ব মুসলিমদের।

৪. সাধারন কাফের/ মুশরিক- ওরা মুসলিমের সাথে সরাসরি শত্রুতা করে না, বরং কিছুক্ষেত্রে মুসলিমদের সাহায্য করে, ওরা সবচেয়ে বেশি হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়। যেমন- রসুল (সাঃ) ও সাহাবীদের যখন গৃহবন্দী করা হয়েছিলো অনেকে খাদ্য দিয়ে সহায়তা করেছিলো। ওদের সাথে উত্তম দাওয়াত দিতে হবে।সুতরাং কুরআন-সুন্নাহের সঠিক জ্ঞান অর্জন না করে যে যার মত ইসলামের ব্যাখা করবেন না। আবু জাহেলের জন্য আয়াত আবু তালেবের জন্য ফিট করা মূর্খতা। মোদীর মত ইসলামের শত্রু আর সাধারণ নিরীহ মুশরিকদের ব্যাপারে একই আচরণ হতে পারে না। ইসলামকে অজুহাত বানিয়ে তাদের টাকা আত্মসাৎ করা নিষেধ। হিজরতের সময়ও রসুল (সাঃ) তার নিকট রাখা আমানত পৌছানার জন্য আলী (রাঃ) কে রেখে যান। আর দ্বিমুখী নীতিও বর্জন করুন, কোন মুসলিমের কাফেরের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন দেখলে তাকে মুনাফেক ফাতেয়া দিবেন আবার যাদের নির্দেশে মুসলিমদের গুলি করা হয় বা যারা গুলি করে তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখবেন, তাদের প্রশংসা করবেন, তাদের মুসলিম ভাবেন, তখন ফাতেয়া কেন বদলে যায়!!! কাফেরের রক্ত তাহলে কি মুসলিমের চেয়ে দামী হয়ে গেল। ইসলামে এমনকিছু নেই যে আমাদের লজ্জিত হতে হবে, তাই কুরআন-সুন্নাহের অপব্যাখা না করে সুস্পষ্ট ইসলাম জানান। আমাদের ভরসা কুরআনের মালিক চিরঞ্জীব, সর্বশক্তিমান এক আল্লাহর উপর, কোন মানববিধানের রচনাকারীর উপর নয় যে মরলে পচে যায়, জীবিত থাকতেই যাকে ক্ষমতা হারাতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *