চারপাশে ফেতনা, কাফের-মুশিরকের হুংকার, মুনাফেকের ছলনায় মুমিন যেন পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় পরিচয়। কবে আসবে বিজয় এই ভাবনায় শয়তান নিত্য ওয়াসওয়াসা দেয়! কিন্তু মনে রাখবেন- আপনার অসহায়ত্বের কারণ যদি হয় ইসলাম ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তাহলে আপনার চেয়ে শক্তিশালী কোন কাফের, মুশরিক, মুনাফেক হতে পারে না। আপনার প্রতিটি কষ্টের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট আরও বেশি প্রিয় হচ্ছেন, যার জন্য আল্লাহ আপনার জান্নাতকে সমৃদ্ধ করবেন।
আর অন্যদিকে কাফের-মুশরিক, মুনাফেকরা প্রতিনিয়ত মুমিনকে কষ্ট ও উপহাস করে নিজেদের জাহান্নামের শাস্তিকে বৃদ্ধি করছে। যদি তওবা না করে ফিরে না আসে তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি।
মুমিনের প্রকৃত বিজয় হল দ্বীনের ওপর অটল থাকা।
আমরা অনেকে বিজয় বুঝি না এজন্য শয়তান আমাদের হতাশ করতে সুযোগ পায়। মক্কার কষ্টকর জীবনে – জুলুম নির্যাতন সহ্য করে দ্বীনের পথে অটল থাকা ছিল বিজয়। প্রথমদিকের সাহাবীদের যে মর্যাদা ছিল মক্কা বিজয়ের পর ঈমান আনা সাহাবিদের মর্যাদা সমান ছিল না।
বেলাল (রা:), খাব্বাব (রা:) এর আর্তনাদ বৃথা যায়নি বরং মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। সুমাইয়া (রা:), ইয়াসির (রা:) এর দ্বীনের পথে অটল থেকে শাহাদাত বরণ দিয়েছে তাদের জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা ।
আল্লাহর রাহে ধনসম্পদ, প্রিয়ভূমি, পরিবার ত্যাগ দিয়ে হিজরত ও হিজরতকারীদের আশ্রয় দেওয়া সাহাবীরা পরবর্তীতে হয়ে উঠেন উত্তম শহীদ, গাজী, খলিফা। ইসলামে যেমন বদর, মক্কা, রুম, পারস্য বিজয়ের মত সফলতা রয়েছে তেমনি উহুদ, হুনায়েনের মত শিক্ষনীয় ঘটনা রয়েছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে মুমিন বিজয়ী। উহুদের বিপর্যয় মুহূর্তে যখন রসুল (সা:) নিহত হওয়ার গুজব ছড়ায় তখনও সাহাবীরা লড়ে যান।
পরবর্তীতে কুরআনের নির্দেশ দেখুন-
আর মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র; তার আগে বহু রাসূল গত হয়েছেন। কাজেই যদি তিনি মারা যান বা নিহত হন তবে কি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে? আর কেউ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলে সে কখনো আল্লাহর ক্ষতি করবে না; আর আল্লাহ্ শীঘ্রই কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কৃত করবেন। (সুরা আল ইমরান-১৪৪)
উহুদের বিপর্যয়ের কারণসমূহের মধ্যে একটি কারণ ছিল যে, কাফেররা রটিয়ে দিয়েছিল যে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে হত্যা করে দেওয়া হয়েছে। মুসলিমদের কাছে এ খবর পৌঁছলে, তাঁদের অনেকের মনোবল দমে যায় এবং তাঁরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে দাঁড়ান।
ফলে এই আয়াত অবতীর্ণ করে বলা হয় যে, কাফেরদের হাতে নবী করীম (সাঃ)-এর হত্যা হওয়া এবং তাঁর উপর মৃত্যু আসা কোন নতুন কথা নয়। পূর্বের সকল নবীকেই নিহত হতে হয়েছে এবং মৃত্যু তাঁদেরকে গ্রাস করেছে।
কাজেই নবী করীম (সাঃ)ও যদি মৃত্যুর হাতে ধরা পড়েন, তাহলে তোমরা কি দ্বীন থেকে বিমুখ হয়ে যাবে? কিন্তু মনে রেখো! যে দ্বীন থেকে ফিরে যাবে, সে নিজেরই ক্ষতি করবে, এতে আল্লাহর কোন কিছু এসে যাবে না। রসুলের (সা:) ওফাতের পর আবু বকর (রা:) এই আয়াত পড়েন।
আর আমরা শুধু কি নেতার অপেক্ষায় বসে থাকবো নাকি নিজেরা নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী দ্বীনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবো? দ্বীন পূর্নাঙ্গ হয়ে গেছে, রসুলের (সা:) ওফাত পাবার পর সাহাবীরা হতাশ না হয়ে ইসলামের কার্যক্রম চালিয়ে যান।
উহুদের শহীদ হামজা (রা:) পেয়েছেন জান্নাতের শহীদদের সর্দার হওয়ার মর্যাদা এবং তালহা (রা:) পেয়েছেন জীবন্ত শহীদের স্বীকৃতি। মুমিনদের বিজয় শুধু ভূখন্ড বা ক্ষমতা দখল নয়। তাহলে সুমাইয়া (রা), হামজা (রা:), হুসাইন (রা:) বিজয়ী নয় বরং ইয়াজিদ, মারওয়ান, হাজ্জাজরা বিজয়ী নাউজুবিল্লাহ!?
প্রকৃত বিজয় হলো দ্বীনের অটল থেকে লড়াই করে যাওয়া। আর ক্ষমতা পেলে রাষ্ট্রে রাজতন্ত্র, কুফরী শাসন নয় খেলাফাহ প্রতিষ্ঠা করা।
রোজ কেয়ামতে যাদের ছায়া দেওয়া হবে তার মধ্যে ন্যায়পরায়ন শাসক অন্যতম। (মুসলিম শরীফ-১৭১২)
রসুল, নবী, বুজুর্গ, সাহাবীরা ছিল ন্যায়পরায়ন শাসক যারা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী শাসন করতেন। তাই মুমিনের উচিত হতাশ না হয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্বীনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা।