আমাদের পবিত্র ভূমি শামে সবসময় হক্ব-বাতিলের যুদ্ধ চলবে আর হক্ব বিজয়ী হবে। অনেকে ইহুদিদের গ্রেটার ইসরায়েলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে বলে হাদীসে ভুল ব্যাখা দেন। বরং শেষ জমানার হাদীস আমাদের আশা জাগায় ইসলামের বিজয়ের।
মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বাইতুল মাকদিসে বসতি স্থাপন ইয়াসরিবের বিপর্যয়ের কারণ হবে এবং ইয়াসরিবের বিপর্যয় সংঘাতের (মালহামা) কারণ হবে। যুদ্ধের ফলে কুস্তুনতুনিয়া বিজিত হবে এবং কুস্তুনতুনিয়া বিজয় দাজ্জালের আবির্ভাবের আলামত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন তার ঊরুতে বা কাঁধে নিজের হাত দ্বারা মৃদু আঘাত করে বলেন, এটা নিশ্চিত সত্য, যেমন তুমি এখানে উপস্থিত, যেমন তুমি এখানে বসা আছো। অর্থাৎ তিনি মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে লক্ষ করে বলেন। (আবুদাউদ -৪২৯৪, আহমদ)
হাদীস হতে বুঝা যায় বায়তুল মাকদীসে যখন বসতি হবে তখন মদীনা বা ইয়াসরিবের বিপর্যয়ের কারণ হবে। এখানে ইয়াসরিব ধ্বংস নয় বরং বিপর্যয়ের কারণ বলা হয়েছে। মালহামা হবে ও এর ফলশ্রুতিতে ইস্তাম্বুল বিজয় হবে এবং এরপর দাজ্জাল বের হবে।
এখন হাদীসগুলো নিয়ে অনেকে ব্যাখা করে জেরুজালেমে ইহুদিদের বসতি হবে আবার অনেকে বলে সুলতান ফাতেহ মাহমুদের সময় ইস্তাম্বুল বিজয় হয়েছে।
কিন্তু মুহাদ্দিসগণের আলোচনা হতে যেটা সঠিক মনে হয়েছে – এখানে হাদীসে ইহুদিদের বসতির কথা উল্লেখ নেই বরং বহু হাদীস দ্বারা এটা বুঝা যায় জেরুজালেমে খেলাফত প্রতিষ্ঠা হবে তখন সেখানে মুসলিমদের বসতি হবে। এরপর রুমের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধবিরতি সন্ধি হবে তা ভঙ্গ করে ওরা যুদ্ধ করতে আসবে। তখন মুসলিমরা মদীনা হতে মুসলিম বাহিনী নিয়ে ওদের মোকাবিলায় দাবিক বা আমাকে আসবে তাই মদীনা খালি হবে। (মুসলিম শরীফ- কেয়ামতের ফেতনা অধ্যায়, আবু দাউদ)।
আবদুল্লাহ ইবনু হাওয়ালাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) গনীমতের সম্পদ লাভ করার জন্য আমাদেরকে পদাতিক বাহিনী হিসেবে এক অভিযানে পাঠালেন।
আমরা এমন অবস্থায় ফিরে আসলাম যে, আমরা গনীমতের কিছুই লাভ করতে পারিনি। তিনি আমাদের চেহারায় ক্লান্তি ও দুর্বলতার ছাপ দেখতে পেয়ে আমাদের মাঝে (বক্তৃতার উদ্দেশ্যে) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহ! তাদের দায়িত্ব এভাবে আমার ওপর অর্পণ করো না যে, আমি তাদের পক্ষ হতে তা বহন করতে দুর্বল হয়ে পড়ি।
(হে আল্লাহ!) তাদের ওপর এমন কাজের দায়িত্ব অর্পণ করো না যা সমাধা করতে তারা অক্ষম হয়ে পড়ে। (হে আল্লাহ!) তাদেরকে অন্য লোকের ওপরও অর্পণ করো না। কেননা তারা নিজেদের প্রয়োজনকে তাদের প্রয়োজনের উপর গুরুত্ব দেবে।
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি (সা.) আমার মাথার উপর স্বীয় হাত রেখে বললেন, হে ইবনু হাওয়ালাহ্! যখন তুমি দেখবে খিলাফাত (মদীনাহ্ হতে স্থানান্তরিত হয়ে) পবিত্র ভূমিতে (বায়তুল মাকদিস) পৌছে গেছে, তখন তুমি বুঝে নিবে যে, ভূমিকম্প, দুঃখ-দুর্দশা, বড় বড় নিদর্শনসমূহ ও ফিতনা-ফাসাদ খুবই কাছে এসে গেছে এবং আমার এই হাত তোমার মাথা থেকে যত নিকটে, কিয়ামত সেদিন এটা অপেক্ষাও অতি কাছাকাছি হবে। (সহীহ: আবু দাউদ ২৫৩৫)।
হাসসান ইবনু আতিয়্যাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, মাকহুল ও ইবনু আবূ যাকারিয়া খালিদ ইবনু মা’দান-এর নিকট যেতে রওয়ানা হলে আমিও তাদের সঙ্গে গেলাম। তারা জুবায়র ইবনু নুফাইরের সূত্রে আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করলেন সন্ধি সম্পর্কে। তিনি বলেন, জুবায়র (রহঃ) বললেন, আপনি আমাদের সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী যু-মিখবার (রাঃ)-এর নিকট চলুন। সুতরাং আমরা তার নিকট উপস্থিত হলে জুবায়র তাকে সন্ধি সম্পর্কে প্রশ্ন করেন।
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ অচিরেই তোমরা রোমানদের সঙ্গে সন্ধি করবে। অতঃপর তোমরা ও তারা একত্র হয়ে তোমাদের পশ্চাৎবর্তী একদল শত্রুর মোকাবিলা করবে। তোমরা তাতে বিজয়ী হবে, গানীমাত অর্জন করবে এবং নিরাপদে ফিরে আসবে। শেষে তোমরা টিলাযুক্ত একটি মাঠে যাত্রাবিরতি করবে। অতঃপর খৃষ্টানদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি ক্রুশ উপরে উত্তোলন করে বলবে, ক্রুশ বিজয়ী হয়েছে। এতে মুসলিমদের মধ্যকার এক ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে তাকে হত্যা করবে। তখন রোমানরা চুক্তি ভঙ্গ করবে এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিবে। (আবু দাউদ)
অপর হাদীসে রয়েছে –
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ….. আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না রোমীয় (সিরিয়ার অন্তর্গত) সেনাবাহিনী আমাক অথবা দাবিক নহরের কাছে অবতীর্ণ হবে। তখন তাদের মুকাবিলায় মদীনাহ হতে এ দুনিয়ার সর্বোত্তম মানুষের এক দল সৈন্য বের হবে। তারপর উভয় দল সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হবার পর রোমীয়গণ বলবে, তোমরা ঐ সমস্ত লোকেদের থেকে পৃথক হয়ে যাও, যারা আমাদের লোকেদেরকে বন্দী করেছে। আমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করব। তখন মুসলিমগণ বলবে, আল্লাহর শপথ আমরা আমাদের ভাইদের থেকে কক্ষনো সম্পর্কচ্ছেদ করব না। পরিশেষে তাদের পরস্পর যুদ্ধ হবে। এ যুদ্ধে মুসলিমদের এক তৃতীয়াংশ সৈন্য পলায়নপর হবে। আল্লাহ তা’আলা কক্ষনো তাদের তওবা্ গ্রহণ করবেন না। সৈন্যদের এক তৃতীয়াংশ নিহত হবে এবং তারা হবে আল্লাহর কাছে শহীদানের মাঝে সর্বোত্তম শহীদ। আর সৈন্যদের অপর তৃতীয়াংশ বিজয়ী হবে। জীবনে আর কক্ষনো তারা ফিতনায় আক্রান্ত হবে না। তারাই কুম্ভনতিনিয়া বিজয় করবে।
তারা নিজেদের তলোয়ার যাইতুন বৃক্ষে লটকিয়ে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ ভাগ করতে থাকবে। এমতাবস্থায় তাদের মধ্যে শাইতান (শয়তান) উচ্চঃস্বরে বলতে থাকবে, দাজ্জাল তোমাদের পেছনে তোমাদের পরিবার-পরিজনের মধ্যে চলে এসেছে। এ কথা শুনে মুসলিমরা সেখান থেকে বের হবে। অথচ এ ছিল মিথ্যা সংবাদ। তারা যখন সিরিয়া পৌছবে তখন দাজ্জালের আগমন ঘটবে। যখন মুসলিম বাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে এবং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হতে শুরু করা মাত্র সালাতের সময় হবে। অতঃপর ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন এবং সালাতে তাদের ইমামাত করবেন। আল্লাহর শত্রু তাকে দেখামাত্রই বিচলিত হয়ে যাবে যেমন লবণ পানিতে মিশে যায়। যদি ঈসা (আঃ) তাকে এমনিই ছেড়ে দেন তবে সেও নিজে নিজেই বিগলিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। অবশ্য আল্লাহ তা’আলা ঈসা (আঃ) এর হাতে তাকে হত্যা করবেন এবং তার রক্ত ঈসা (আঃ) এর বর্শাতে তিনি তাদেরকে দেখিয়ে দিবেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭০১৪, ইসলামিক সেন্টার ৭০৭১)
যেরূপ বদর, উহুদের সময় হয়েছিল। আর মুনাফেকরা অজুহাত দেখিয়ে উহুদে অংশগ্রহণ হতে বিরত থাকে। সাহাবীরা মদীনায় থাকার মর্যাদা জানা স্বত্বেও জেহাদের জন্য বের হয়েছিলেন। আর যারা জিহাদে অংশগ্রহণ না করে মদীনায় থেকে যাবে তাদের অনেকে হবে মুনাফেক। এজন্য অন্য হাদীসে ইয়াসরিব বলা হয়েছে যারা পরবর্তীতে দাজ্জালের সঙ্গী হবে।
আর দাজ্জাল মক্কা, মদীনা, আকসায় প্রবেশ করতে পারবে না বরং ঈসা (আ) আসবে আকসায় সালাত পড়বেন মুসলিমদের নেতা, খলিফার নেতৃত্বে। তিনি লূদে দাজ্জালকে হত্যা করবেন।
আমাদের অধিকাংশ আলেমরা ইসরায়েলকে মুসলিমদের বড় শত্রু হিসেবে প্রচার করলেও শেষ জমানায় মুসলিমদের জন্য অন্যতম বড় শত্রু বনু উমাইয়া বংশধর, শামের ক্ষমতা যার হাতে থাকবে তার হাদীসগুলো উল্লেখ করে না।
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন-
তিনি (সা.) বলেছেন: (শেষ যামানায়) একজন খলীফার মৃত্যুর সময় লোকেদের মধ্যে দ্বিতীয় খলীফাহ নিয়োগের ব্যাপারে মতবিরোধ দেখা দেবে। তখন মদীনাহ্ থেকে এক ব্যক্তি বের হয়ে মক্কার দিকে ছুটে পলায়ন করবে। এ সময় মক্কাবাসীরা তার নিকট এসে তাকে বলপূর্বক ঘর হতে বের করে আনবে।
কিন্তু সে তা পছন্দ করবে না। অতঃপর হাজারে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে লোকেরা তার কাছে বায়’আত গ্রহণ করবে। এরপর সিরিয়া থেকে একটি সৈন্যবাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য পাঠানো হবে। কিন্তু মক্কাহ্ ও মদীনার মাঝামাঝি ’বায়দা’ নামক স্থানে তাদেরকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হবে। (মুসলিম, আবুদাউদ)
কিছু হাদীসে শামের বাহিনী যা মাহাদীর (হাফি:) বিরুদ্ধে প্রেরন করা হবে তা বনু কাল্বের বলা হয়েছে। (আবুদাউদ, আল ফিতান)। আর তাদের শাসক সুফিয়ানী নামে অনেক মুসলিমদের নিকট জনপ্রিয় হবে।
বর্তমান সিরিয়ার বাশার আল আসাদ বনু কাল্বের। তাই ইসলামের অন্যান্য শত্রুদের মত বনু কাল্বসহ সুফিয়ানীর ফেতনা জানানো উচিত যেন মুসলিমরা সঠিক নির্দেশনা পায়।