ভালোবাসা দিবস পর্ব-১

ওরা আমাদের ভালোবাসা শেখাতে আসে। অথচ ভালোবাসার স্রষ্টা মহান আল্লাহ আমাদের রব আর ভালোবাসার সংবিধান আল-কুরআন আমাদের পাঠ্যসূচি।

ইতিহাস খুড়ে দেখ- যে জাতি জাহেলী যুগে উটের পানি পান করা নিয়ে দিনের পর দিন যুদ্ধ করতো তারাই ইসলামের রত্ন স্পর্শে এসে নিজে পানি পান না করে পাশের সঙ্গীর মুখে তুলে দিয়ে শহীদ হলো।

যে জাতি কন্যাশিশুকে পুতে রাখতো, যাদের অনেকে উলঙ্গ হজ্জ করতো তারাই নারীর হিজাব রক্ষার্থে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল। নারী পেয়েছিল মা, বোন, কন্যার মর্যাদা যার নজির বিশ্ব ইতিহাসে আর ছিলো না।

তোমরা ভালোবাসার নামে আজ যা পালন করছো তা যৌণতার উৎসব ছাড়া কিছুই নয় আর আমাদের ভালোবাসার ইতিহাস খুলে দেখ আস্হা, ভরসা, বিশ্বাস, সবর, আত্মত্যাগ ও জান্নাতের সঙ্গী হওয়ার আকুল প্রার্থনায় ভরা।

আমাদের (মুমিন) মা খাদেজা (রাঃ) আল্লাহ ও তার প্রিয় রসুলকে (সাঃ) ভালোবেসে সুখ, সম্পদ ত্যাগ দিয়ে দারিদ্র্যতার জান্নাতী ঐশ্বর্য্য জীবনে জড়িয়েছিলেন। আর বিশ্বের ইতিহাসে কোন স্বামী এমন আছে কি, যে রসুলের (সাঃ) মত স্ত্রীকে ভালোবাসতে পারে। মৃত্যুর বহু পরেও তার স্মরণে চোখে অশ্রু প্রবাহিত হতো ও দোয়া করতেন।

তিনি রসুলের (সাঃ) দুনিয়ার ও জান্নাতের অজীবনের সঙ্গীনী। আর তাদের তথাকথিত আবেগী ভালোবাসা সহজে বদলে যায় যারা দুনিয়ার ক্ষনিক সুখ শেষে বিচ্ছেদ বা জাহান্নামের পথে চলে। স্মরন কর- পিতা ইয়াকুব (আঃ) এর কথা- পুত্র শোকে কান্না করতে করতে অন্ধ হয়েছিলেন তবুও আল্লাহর প্রতি কি অগাধ বিশ্বাসে বলেছিলেন – ‘হে আমার ছেলেরা, তোমরা যাও এবং ইউসুফ ও তার ভাইয়ের খোঁজ খবর নাও। আর তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, কেননা কাফির কওম ছাড়া কেউই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় না’।(সুরা ইউসুফ -৮৭)।

তোমাদের ভালোবাসা নির্দিষ্ট দিন, দিবসের উপর নির্ভর করে কারণ তার সৃষ্টি শিরকী দেব-দেবীর কিচ্ছা কাহিনী হতে বা কোন প্রেমের প্রসারকারী কোন ব্যক্তির নামে আর আমাদের ভালোবাসার স্রষ্টা আল্লাহ আমরা তার নিয়মে প্রতিদিনই প্রতিবেলা ভালোবাসা পালন করি। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর যারা ঈমানদার আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা অনেক বেশি।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৫)

সুবাহের আলো ফুটার সাথে সাথে আমরা প্রিয় রবের ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিই সালাত ও সিজদাহ্ দিয়ে। রাতের আধারে যখন ঘুমের আয়েশ জাগে তখন প্রিয় রব ভালোবেসে ডাকেন- “যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার নিকট কিছু প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব। যে আমার নিকট মাফ চাইবে আমি তাকে মাফ করে দেব।” (বুখারী, মুসলিম)। তখন বহুদিনের বুভুক্ষু হৃদয় নিয়ে তাহাজ্জুদে দাড়িয়ে মুমিনের দুচোখে অনুতপ্তের বারিধারা বহে, সে ধারায় হৃদয় পবিত্র ও প্রশান্ত হয়। তাই রবের সাক্ষাৎ কামনায় রাত্রি কাটিয়ে দেয়। আর তোমরা অবৈধ প্রেম চ্যাটিং, অশ্লীল নাচ-গানে রাত্রি কাটিয়ে ভালোবাসা পালন করো।

যখন মুনাফেকদের বিশ্বাসঘাতকতা ও চারপাশে শত্রুদের হুংকার অন্তরে ভীতি জাগায় দ্বীনে অটল থাকতে পারবো কিনা!? তখন আকাশপানে রবকে খুজি – আর দেখি তিনি সুমহান যিনি সুবিশাল অসমানকে সুদৃঢ় রেখেছেন ইনশাআল্লাহ আমার মত তুচ্ছ বান্দাকেও রাখবেন।

দারিদ্র্যতা, সুস্হতা, স্বজন ও বন্ধুরা যখন পরিত্যাগ করে তখন শয়তান অন্তরে হতাশার জন্ম দিতে চায় তখন পবিত্র কুরআনে রবের রহমত ও ভালোবাসার আয়াতে সবদূর হয়ে যায় –

৩) “আপনার পালনকর্তা আপনাকে ত্যাগ করেনি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি।

৪) আপনার জন্যে পরকাল ইহকাল অপেক্ষা শ্রেয়।

৫) আপনার পালনকর্তা সত্বরই আপনাকে দান করবেন, অতঃপর আপনি সন্তুষ্ট হবেন।

৭) তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন।

৮) তিনি আপনাকে পেয়েছেন নিঃস্ব, অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন।” (সুরা দ্বোহা)।

কাজের ব্যস্ততা, সমালোচনা, অসুস্থতা দ্বীনের বহু বাধায় শরীর যখন ক্লান্তির প্রায় শেষ ধাপে পৌছায় ভাবি এবার অবসর নিবো। তখনই রব ও তার প্রিয় বান্দাদের প্রতি ভালোবাসা জেগে উঠে। আমাদের কত প্রিয় ভাই-বোন না বুঝে শিরক, কুফরে লিপ্ত হয়ে জাহান্নামের পথে চলছে তখন বহু গালি হাসিমুখে সহে পোস্ট করি।

আসলে যে যাকে বিধানদাতা মানে সে তার নিয়মনীতি মানে। আর আমাদের ভালোবাসার বিধানদাতা আল্লাহ আমরা তার নীতিতে প্রতিনিয়ত ভালোবেসে যাই। আর যারা কাফেরদের ভালোবাসার বিধান মেনে চলে আল্লাহর বদলে তাদের (কাফেরদের) বিধানদাতা মানলো।

আল্লাহ বলেন-

হে মু’মিনগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না, তারা পরষ্পর পরষ্পরের বন্ধু৷ তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন হবে৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ যালিম সমপ্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না৷” (সূরা মা’য়িদা ৫: ৫১)

আমাদের ভালোবাসা আত্মত্যাগ, সবর ও জান্নাতের চিরস্থায়ী সঙ্গী হওয়ার বাসনা জাগায় আর ওদের ভালোবাসা যৌণতা, আত্মভোগের কাহিনী যা দুনিয়াতে দীর্ঘস্হায়ী হয় না কি করে জান্নাতের সঙ্গী হবে!?

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *