কি অদ্ভুত!! ভালোবসার স্রষ্টা আল্লাহ আমাদের রব অথচ আজ মুসলিমরা ভালোবাসা দিবস পালন করছে কাফেরদের নীতিতে।
আসুন আামাদের কিছু ভালোবাসার বাস্তব ইতিহাস জানাই,
১. দীর্ঘদিন আইউব (আঃ) অসুস্থ ছিলেন। সম্পদ, সন্তানসহ বহু কিছু হারিয়েছেন তবুও আল্লাহর প্রতি তার বিশ্বাস ছিল অটল। তার সেই কষ্টকর সময় সেবা দিয়ে যান প্রিয় স্ত্রী। বর্তমানে এরকম ভালোবাসা কল্পনা করা যায়!? ভাবুন।
২. মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম (আঃ) ও তার স্ত্রী সারাহ (আঃ) দীর্ঘদিন নিঃসন্তান ছিলেন। অথচ পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার কমতি ঘটেনি, না আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে একটু কমতি ছিল। বর্তমান দম্পত্তির মাত্র কয়েক বছর সন্তান না হলে পরস্পরের প্রতি দোষারোপ করে এমনকি সম্পর্কে ফাটল ধরে।
৩. রসুলুল্লাহ’র (সাঃ) স্ত্রীগণ খেজুর ও পানি পান করে বহুদিন কাটিছেন তবুও রসুলুল্লাহকে (সাঃ) সবকিছুর উর্ধ্বে ভালোবেসেছেন। আর সাহাবীদের স্ত্রীগণ জানতেন – তাদের স্বামী জেহাদে গেলে হয়তো শহীদ হবে আর দেখা হবে না। গৃহে অভাব-অনটন, সন্তান এসব নিয়ে তারা চিন্তিত হতেন না বরং শহীদ স্বামীর মতো শহীদ হওয়ার জন্য সন্তানকে গড়ে তুলতেন। আর তাই তারা পরস্পর একসাথে চিরস্থায়ী জান্নাতে স্হান পাবেন। আজ কয়জন তার স্বামী-সন্তানকে শহীদ হিসেবে দেখতে চায় যেন তারা চিরস্থায়ী জান্নাতে একসাথে থাকতে পারে। কিন্তু ইসলামের ভিত্তি হল ভালোবাসাতে হবে আল্লাহর জন্য। কোন ভালোবাসা আল্লাহ, তার রসুল (সাঃ) ও জেহাদের উর্ধ্বে স্হান দিলে তা ধ্বংসের কারণ হবে।
আল্লাহ বলেন – “বল, ‘তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের সে সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর সে ব্যবসা যার মন্দা হওয়ার আশঙ্কা তোমরা করছ এবং সে বাসস্থান, যা তোমরা পছন্দ করছ, যদি তোমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয় আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে, তবে তোমরা অপেক্ষা কর আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত’। আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।” (সুরা তওবা -২৪)।
কিন্তু চারপাশে তাকিয়ে দেখুন, স্ত্রীরা আজ স্বামীদের দাড়ি ও রসুলের (সাঃ) সুন্নাহ মানতে বাধা দেয়। স্বামীরা ভালোবাসার নামে তা মেনে নেয়। তাহলে মনে রাখুন এসকল দম্পত্তির জীবনে ধ্বংস অনিবার্য।
এখন ভালোবাসর নামে যৌণতা ও অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। অবৈধ প্রেমে একে অপরকে সাহায্য করছে অথচ ইসলামের পথে সাহায্যকারীর অভাব। অথচ আল্লাহ লূত (আঃ) কে হিজরতের সময় তার স্ত্রীকে রেখে যেতে বলেন এজন্য যে তার স্ত্রী অশ্লীল সমকামি নিজ কওমের প্রতি মায়া দেখিয়েছিলেন।
আল্লাহ বলেন- “যারা কুফরী করে, আল্লাহ্ তাদের জন্য দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন নূহের স্ত্রী ও লুতের স্ত্রীর, তারা ছিল আমাদের বান্দাদের মধ্যে দুই সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীন। কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ফলে নূহ ও লুত তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারলেন না এবং তাদেরকে বলা হল, তোমরা উভয়ে প্ৰবেশকারীদের সাথে জাহান্নামে প্ৰবেশ কর।” (সুরা তাহরীম-১০)। তাই অবৈধ প্রেম, পরকীয়া, জেনার পথে সাহায্য করা নিজেকে ধ্বংসের পথে নেওয়া ছাড়া কিছু নয়।
আল্লাহ বলেন-
عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
“যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।” (সুরা নূর-১৯)।
আসুন জানুন আমাদের রব আমাদের কতটা ভালোবাসেন আর কতটা ভালোবাসা, রহমত আমাদের জন্য জমা রেখেছেন।
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ রহমতকে একশ ভাগ করেছেন। তার মধ্যে নিরানব্বই ভাগ তিনি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। আর পৃথিবীতে একভাগ অবতীর্ণ করেছেন। ঐ এক ভাগের কারণেই সৃষ্টজগৎ একে অন্যের উপর দয়া করে। এমনকি জন্তু তার বাচ্চার উপর থেকে পা তুলে নেয় এই ভয়ে যে, সে ব্যথা পাবে।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, নিশ্চয় আল্লাহর একশটি রহমত আছে, যার মধ্য হতে একটি মাত্র রহমত তিনি মানব-দানব, পশু ও কীটপতঙ্গের মধ্যে অবতীর্ণ করেছেন। ঐ এক ভাগের কারণেই (সৃষ্টজীব) একে অপরকে মায়া করে, তার কারণেই একে অন্যকে দয়া করে এবং তার কারণেই হিংস্র জন্তুরা তাদের সন্তানকে মায়া করে থাকে। বাকী নিরানব্বইটি আল্লাহ পরকালের জন্য রেখে দিয়েছেন, যার দ্বারা তিনি কিয়ামতের দিন আপন বান্দাদের উপর রহম করবেন। এ হাদীসটিকে ইমাম মুসলিমও সালমান ফারেসী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার একশটি রহমত আছে, যার মধ্য হতে মাত্র একটির কারণে সৃষ্টিজগৎ একে অন্যের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে। আর নিরানব্বইটি (রহমত) কিয়ামতের দিনের জন্য রয়েছে।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তা‘আলা আসমান যমীন সৃষ্টি করার দিন একশটি রহমত সৃষ্টি করলেন। প্রতিটি রহমত আসমান ও যমীনের মধ্যস্থল পরিপূর্ণ (বিশাল)। অতঃপর তিনি তার মধ্য হতে একটি রহমত পৃথিবীতে অবতীর্ণ করলেন। ঐ একটির কারণেই মা তার সন্তানকে মায়া করে এবং হিংস্র প্রাণী ও পাখীরা একে অন্যের উপর দয়া করে থাকে। অতঃপর যখন কিয়ামতের দিন হবে, তখন আল্লাহ এই রহমত দ্বারা সংখ্যা পূর্ণ করবেন। (বুখারী, মুসলিম)।
চিন্তা করুন মাত্র ১ ভাগ রহমত, ভালোবাসার কারণে কিরূপ মায়া অনুভব করি আর ৯৯ ভাগ পেলে কি হবে”! দুনিয়াতে আল্লাহর রহমত, দয়া, ভালোবাসা মুগ্ধ করে তাই জান্নাতে তার ভালোবাসা, রহমত পাবার প্রার্থনা করি।
[…] ভালবাসা দিবস পর্ব ২ […]