অনেকের মতে আমাদের আচরন অতি অদ্ভুত, আসলে কি তা স্বাভাবিক নয়?! আমরা যদি কোনো ভারতীয়, পাকিস্তানি মুসলিমকে ভালোবাসা প্রর্দশন করি তখন কেউ বলে দালাল, কেউ রাজাকার, কেন এই ভূখন্ড বিদ্বেষ? একটা দেশ, জাতি, এলাকা, বংশের প্রতিটি ব্যক্তি খারাপ হতে পারে না। ভালোবাসা বা বিদ্বেষ হবে ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের উপর, কারো ভূখন্ডের সীমারেখার উপর নয়। কে কোন ভূখন্ডে জন্মাবে তা আল্লাহর সিদ্ধান্ত, আল্লাহর প্রতিটি সিদ্ধান্তই সঠিক। কুরআনের শিক্ষা হল প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ কর্মফল ভোগ করবে অন্যের নয়। (সুরা আনআম-১৬৪, সুরা নিসা- ১২৩-২৪)। যদি শুধুমাত্র ভূখন্ড, জন্ম, বংশধরের কর্মকান্ডের জন্য কাউকে ঘৃণা করতে হয় তাহলে হাবিলের জন্য আদম (আঃ) কে ঘৃণা করতে হয়। আর আমরা প্রত্যেকে আদম সন্তান। আদম (আঃ) এর কোটি কোটি সন্তান পাপ করছে এতে আদমের দোষ কোথায়!!? যে রাষ্ট্রে নমরুদ ক্ষমতাশীল ছিলেন সেখানে ইব্রাহীম (আঃ) ছিলেন দ্বীনের বাহক মুসলিম। ইব্রাহীম (আঃ) এর জন্য যদি ইরাককে বা ইরাকবাসীকে ভালোবাসি তাহলে নমরুদের জন্য ঘৃণা করতে হবে। মুসা (আঃ) এর জন্য মিশর ও মিশরবাসীকে এবং প্রিয় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্য মক্কাকে ভালোবাসি, তাহলে ফিরাউন ও আবুজাহেলদের জন্য তাদেরকে ঘৃণা করতে হবে। আসলে ভালোবাসা হবে আল্লাহর জন্য। আল্লাহ তার রাসুলদের ও মক্কা-মদীনাকে ভালোবাসেন দেখে আমরাও ভালোবাসি।পক্ষান্তরে আল্লাহ নমরুদ, ফেরাউন, আবু জাহেলদের ঘৃণা করেন তাই আমরাও তাদের ঘৃণা করি। এবার আরেকটা ফেতনা হল আমাদের অনেকে নোয়াখালী, বরিশাল, চট্রগ্রাম, ময়নমসিংহ, কুমিল্লা নিয়ে উপহাস করায় ব্যস্ত। ভাই কেউ নিজ ইচ্ছেয় কোন স্হানে জন্মায়নি, আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে। একটা এলাকার সবলোকই খারাপ হয় না বরং যেখানে সবচেয়ে খারাপ লোকগুলো থাকে সেখানে ইসলামের দাওয়াতের জন্য আল্লাহ সবচেয়ে উত্তম লোকগুলো পাঠান। রসুলদের জীবনীই তার প্রমাণ। আজ নিজ মুসলিম ভাইয়ের সমালোচনা করছেন। অথচ সুরা হুজুরাতে আছে –
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَىٰ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ ۖ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ ۚ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
“মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।” (সুরা হুজুরাত- আয়াত১১)।
হাদীসে কুদসিতে আছে- আল্লাহর জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্হাপনকারী, পরস্পর উঠা-বসাকারী, পরস্পর সাক্ষাৎকারী ও পরস্পর ব্যয়কারীদের জন্য আমার (আল্লাহর) ভালোবাসা অবধারিত (আহমদ)। তেমনি পাকিস্তানের জালেম সেনাবাহিনী ও শাসক যারা ৭১ এ বর্বরতার ইতিহাস রচনা করে (ভুট্টো, ইয়াহিয়া) তাদের ঘৃণা করি কিন্তু ভালোবাসি মেজর জিয়াউল হককে। ঘৃণা করি সেসব লোকদের যারা আফিয়া সিদ্দিকীকে জালেমদের হাতে তুলে দিয়েছিল আবার ভালোবাসি সেসব মুজাহিদদের যারা প্রিয় বোন আফিয়ার জন্য লড়ছে। ভারতের জালেম শাসক ও খুনী প্রশাসনদের ঘৃণা করি কিন্তু কাশ্মীর, ভারতের মুমিন মুসলিমদের ভালোবাসি। ভালোবাসা ও ঘৃণা ব্যক্তির কর্মকান্ডের উপর হয়, কোন জাতীয়তাবাদের কুফরের উপর ভিত্তি করে নয়!! আর স্বাধীনতার চেতনাধারীদের বলি মুসলিম অর্থ আল্লাহর কাছে আত্মসর্মপনকারী সে তার সকল চিন্তা, মতবাদ, আদর্শ বাদ দিয়ে এক আল্লাহর আনুগত্য মেনে চলে তাই মুসলিম, সে কখনও স্বাধীন হতে পারে না। আমরা নিজ ইচ্ছায় বাচতে পারি না, পারি না সুস্হ থাকতে, নিজ ইচ্ছে অনুযায়ী বাধর্ক্য রোধ করতে পারি না, না পারি ছোট ভাইরাসের সাথে লড়তে, আমরা কি করে স্বাধীন হই? আর অনেক আলেমের মতে ইসলামে স্বাধীনতা বলতে বুঝায় সকল ব্যক্তি, মতবাদের দাসত্ব হতে মুক্তি পেয়ে এক আল্লাহর দাসত্বকে খুশি মনে মেনে নেওয়া। আর ইসলামি রাষ্ট্র বলতে বুঝায় যে রাষ্ট্র কোন তাগুত নয় শুধু আল্লাহর সংবিধান, আল্লাহর আইন দ্বারা পরিচালিত, যেখানে সার্বভৌমত্ব শুধু আল্লাহর অন্য কারো নয়।