একদিকে নিজের এলাকা, শহরের উন্নয়নের জন্য বিভাগ চাইছে আবার সেজন্য অনেকে এক শহর/এলাকার অধিবাসীদের (নোয়াখালী, বরিশাল,চট্রগ্রাম) উপহাস করছে ও মন্দ নামে সম্বোধন করছে।
আল্লাহ বলেন-
হে ঈমানদারগণ! কোন মুমিন সম্প্রদায় যেন অপর কোন মুমিন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে; কেননা যাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অন্য নারীদেরকে উপহাস না করে; কেননা যাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে তারা তারা উপহাসকারিণীদের চেয়ে উত্তম পারে। আর তোমরা একে অন্যের প্ৰতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম অতি নিকৃষ্ট। আর যারা তওবা করে না তারাই তো যালিম (সুরা হুজুরাত-১১)
সারাবিশ্বের মুমিনরা একটি দেহের মত। মানুষ যেমন প্রতিটি অঙ্গের সুস্থতা চাইবে, তেমনি মুমিন চাইবে প্রতিটি এলাকার বসবাসরত মুমিনই অভাবমুক্ত, স্বচ্ছল জীবনধারণ করুক।
যেই রাষ্ট্রে মুসা (আ:), হারুন (আ:) সহ দ্বীনদার মুসলিম ছিল সেখানে ফেরাউন, হামান ও তাদের জালেম সেনারা ছিল। ইব্রাহিম (আ) যেখানে ছিলেন সেখানে নমরুদ ও তার সেনারা ছিল। রসুল(সা) সাহাবীরা (রাঃ) যেখানে ছিলেন সেখানে আবু জাহেল ও আবু লাহাবের মত পাপিষ্ঠরা ছিল। তাই একটা এলাকায় মুমিন ও পাপিষ্ঠরা থাকতে পারে।মুমিনদের যেমন ভালোবাসতে হবে তেমনি জালেমের বিরোধিতা করতে হবে।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার ভাইকে সাহায্য করো, সে জালিম হোক অথবা মাজলুম। তিনি (আনাস) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মাজলুমকে সাহায্য করব, তা তো বুঝলাম। কিন্তু জালিমকে কি করে সাহায্য করব? তিনি বললেন, তুমি তার হাত ধরে তাকে বিরত রাখবে (অর্থাৎ তাকে যুলুম করতে দিবে না)।
সহিহ বুখারী যুলুম ও কিসাস অধ্যায় ২২৮২
একটা ব্যক্তির পরিচয় কখনও তার শহর এলাকা, জনপদের উপর নয় বরং তার দ্বীনদারিতার উপর গড়ে উঠে।
ইসলামী রাষ্ট্রনীতিতে শুধু নিজের এলাকার অধিবাসীকে (মুমিন, কাফের, মুশরিক) প্রাধান্য দেওয়া (অর্থনৈতিক ও সামগ্রিক) উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিন্তু অন্য এলাকাকে অবহেলিত রাখার বিধান নেই। বরং খেলাফায়ে রাশেদীনের যুগে সমৃদ্ধ লোক/এলাকা হতে যাকাত/সদকা এনে দারিদ্র্য এলাকায় লোকদের সাহায্য করা হতো যেন সবাই অভাবমুক্ত হতে পারে। আর বিভাগ হোক, প্রদেশ হোক কুফরী আইন বিদ্যমান রেখে কখনও জুলুম, দারিদ্র্যমুক্ত রাষ্ট্র করা কি সম্ভব?
এখন কেউ ভাবে যদি – শুধু স্থাপনা, সড়ক, ফসল উৎপাদনই জাতির সমৃদ্ধির প্রমাণ, তাহলে আদ, সামুদ সমৃদ্ধির প্রমাণ। তাহলে তো আদ, সামুদ, ইরাম, রুম, পারস্য বা বর্তমানের রুশ, ইউরোপ, মার্কিন জাতি সফল। পক্ষান্তরে যুগে যুগে নবী, রসুল, সাহাবীদের তাওহীদে অটল থাকার জন্য হিজরত করতে হয়েছে গৃহ, বাগান, স্বজন সবকিছু ছেড়ে।
আল্লাহ বলেন –
“এবং যারা ঈমান আনে, যা (পবিত্র কুরআন) তোমার (হে মুহাম্মাদ) প্রতি নাজিল করা হয়েছে এবং যা তোমার পূর্বে নাজিল করা হয়েছে তার উপর (যেমন : তাওরাত, জবুর, ইঞ্জিল)। আর আখিরাতের প্রতি তারা বিশ্বাস রাখে। তারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে হিদায়াতের উপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।” (সুরা বাকারাহঃ ৫-৬)
যে ব্যক্তি, রাষ্ট্র তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত তারাই সফল। আর পূর্ববর্তী জাতির মত শির্কের পাশাপাশি যতই উন্নত স্থাপনা করা হোক তা নিয়ে অহংকার করা হলে ধ্বংস অনিবার্য। যত না আমরা অর্থনীতিক সফলতা অর্জন ও স্থাপনা নির্মাণ করতে পেরেছি তার চেয়ে বেশি সংস্কৃতি, প্রগতির নামে শির্ক ছড়িয়েছে পূর্ববর্তী জাতির মত।
কোন কিছুতে সফলতা এলে – সোলেমান (আঃ) এর মত আল্লাহর শোকরিয়া আদায় ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন।
আদ, সামুদ, সাবা, ইরামের মত অহংকারী না হয়ে। আসলে ইসলামের বিপরীত হলো জুলুম। যেখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে না- সেখানে পাপের জুলুম চলবে।
ইউরোপসহ অন্যদেশগুলো দেখুন – যতই আধুনিক নির্মাণ সামগ্রি থাকুক না কেন মদ, নেশা, পরকিয়া, পতিতাবৃত্তির বৈধতা থাকায় আত্মহত্যা, গৃহহীন, খুন, ধর্ষণ বাড়ছেই।
তাই আমাদের উচিত শরীয়া রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা যেন প্রতিটি এলাকার মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে।