বিদায় হজ্জ্বের সময় রাসুলুল্লাহ (সা:) একটি জীর্ণ গদিতে বসে হজ্জ্বের সফর করেন, তার নিচে বিছানো ছিল একটি মোটা চাদর এবং তিনি বলেছিলেন- এমন হজ্জ্ব (আমরা করব) যাতে লোক দেখানো খ্যাতি ও লাভের উদ্দেশ্য নেই। হযরত আনাস (রাঃ) একটি জীর্ণ গদি ব্যবহার করে হজ্জ করেন। তিনি কিন্তু কৃপণ ছিলেন না বরং সুন্নাত পালনে এমনি করেন। আনাস (রা:) বর্ণনা করেন- রাসুলুল্লাহ (সা:) একটি জীর্ণ গদিতে এবং চার দিরহাম সমমূল্যের এমনি চাদরে বসে হজ্জ পালন করেছিলেন। এছাড়া আরাফাতে অবস্হানরত হয়ে রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছিলেন- “এটিকে রিয়াবিহীন, খ্যাতি লিস্পাবিহীন হজ্জ্বে পরিণত কর।” (বুখারী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)। বিশ্বের শ্রেষ্ঠনবী, সকল নবীর ইমাম, জান্নাতের সর্দার যার শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রশাংসা, ক্ষমা ও জান্নাতের নিশ্চয়তা, ইবাদাত কবুল হওয়া স্বয়ং আল্লাহ ঘোষণা করেছেন তিনি ও তার সাহাবীরা রিয়ার ভয়ে অতি সাধারণভাবে হজ্জ্ব করতেন পক্ষান্তরে বর্তমানে হজ্জ্ব করলে কেউ নামের সাথে হাজী সাহেব, আলহাজ্ব লাগাতে ব্যস্ত আর কেউ ব্যস্ত সেলফি ফেতনাতে আর ফেসবুকে পোস্ট করতে। কেউ হয়তো বলবে আমরা হজ্জ্ব শেষে সেলফি তুলছি ক্ষতি কি? মক্কা ও মদীনা কোন জনশূন্য স্হান নয়, বরং হাজার ও লাখো মুসলিমদের স্বপ্ন এখানে হজ্জ্ব ও সালাত আদায় করা। হজ্জ্ব শেষে এখানে ছবি তুলে মানুষকে কষ্ট না দিয়ে বরং এই বরকতময় ভূমিতে যতক্ষন থাকা যায় ততক্ষণই আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও দোয়া চাওয়া উচিত। হজ্জ্ব ও উমরা করে ছবি পোস্ট করলে অন্তরের রিয়া (লৌকিকতা) জাগার সম্ভাবনা থাকে বেশি!! ফলে টাকা ও ইবাদাত দুটো নষ্ট হতে পারে। হা বলতে পারেন মানুষকে অনুপ্রাণিত করার জন্য তা করেন। ভাই টিভিতে প্রতিনিয়ত হজ্জ্বের ভিডিও দেখাচ্ছে আর কুরআনের আয়াত ও লাব্বাইক ধ্বনীর চেয়ে অন্যকিছু কি বেশি আবেগ সৃষ্টি করতে পারে!!? এজন্য কোন শহরে বহু হজ্জ্ব ও উমরা পালনকারী পাওয়া গেলেও ১০/১৫ জন সত্যিকারের দ্বীনদার পাওয়া যায় না। হজ্জ্ব ও ওমরা শেষ করে অনেকেই সুদ, ঘুষ, অশ্লীলতা, গীবত, সম্পদ লুন্ঠনে লিপ্ত থাকে। রিয়া হল লোকের প্রশাংসা লাভের আশায় ইবাদাত করা, এটা গোপন ও ছোট শিরক। “রিয়াকে গুপ্ত শিরক বলা হয় যা মাসীহ দাজ্জ্বালের চেয়ে মরাত্মাক।” (ইবনে মাজাহ-৫২০৪)।” কেয়ামতের দিন অনেক শহীদ, কুরআনের আলেম, ক্বারী, ধন-সম্পদ দানকারীকে জাহান্নামে দেওয়া হবে যারা লোকের প্রশাংসা পাওয়ার আশায় তা করত। (মুসলিম-১৯০৫,মেশকাত ইলম অধ্যায়)। আল্লাহতাআলা বলেন- “আপনি বলুন: নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও মৃত্যু বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহর জন্য।” (সুরা আল আনআম-১৬২)।