মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো তাওহীদকে ভালোবাসবে আর শির্ক, কুফরের প্রতি ঘৃনা থাকবে। মানুষকে তাওহীদের দিকে আহ্বান করবে ও শির্ক, কুফর হতে সতর্ক করবে যেন ইসলাম গ্রহণ করে মানুষ জাহান্নাম হতে রক্ষা পেতে পারে। অথচ মুমিন দাবিদার অনেকে শির্ক, কুফরের অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছে, অন্যদের সতর্ক না করে বরং যেন কুফর, শির্কের সমর্থন দিচ্ছে।
সাবিত ইবনু দাহহাক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এক ব্যক্তি মানত করে যে, সে বুওয়ানা নামক স্থানে একটি উট যাবাহ করবে। সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললো, আমি বুওয়ানা নামক স্থানে একটি উট কুরবানী করার মানত করেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সেখানে কি জাহিলী যুগের কোনো মূর্তি রয়েছে? লোকেরা বললো, না।
তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ সেখানে কি তাদের কোনো মেলা বসতো? লোকেরা বললো, না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার মানত পূর্ণ করতে পারো। কেননা আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজের জন্য কৃত মানত পূর্ণ করা জায়িয নয় এবং আদম সন্তান যে জিনিসের মালিক নয় তারও কোনো মানত নেই। [আবু দাউদ -৩৩১৩]
জাহেলী যুগের কোন মূর্তি, মেলা যদি চলে থাকতো রসুল (সা) সেখানে পশু জবাই করতে নিষেধ করেছেন। তিনি যাদের নিষেধ করেছেন তারা ছিল সাহাবী (রাঃ), যারা উম্মাহর শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি। আর অথচ বর্তমানে কুফর, শির্ক, মূর্তিপূজা চলছে এসব স্থানে যদেরকে মুসলিম আলেম ভাবা হয় তারা দর্শন করতে যাচ্ছে। তারা কি নিজেদের সাহাবীদের চেয়ে উত্তম ভাবছে?
অনেকে নেশা/অপরাজনীতির সাথে এমনভাবে জড়তি হয়, তওবা করে ফিরে আসাটা কঠিন হয়ে যায়। তাদের উচিত তওবা করে লড়াই করার মত সাহস, ঈমান থাকলে দাওয়াহ দেওয়া অথবা পাপের স্থান ও পাপী সঙ্গী হতে দূরে থাকা। কারণ পাপী সঙ্গী তাকে নেশা/অপরাজনীতির পথে আহ্বান করবে, ছাড়তে বাধা দিবে।
হয়তো পূর্বের রাজনীতি/নেশাগ্রস্ত জীবনে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে শত্রুতায় লিপ্ত হওয়ায় – এসব ছাড়লে শত্রুতার কারণে ফেতনায় আবার জড়িয়ে যেতে পারে। তার ঐসব স্থানে হিজরত করা উচিত যেখানে অপেক্ষাকৃত নেককার মুমিন রয়েছে – যা নেশা/অপরাজনীতি হতে মুক্ত।
আবূ সাঈদ সা’দ ইবনু মালেক ইবনু সিনান খুদরী রাদিয়াল্লাহু ’আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’তোমাদের পূর্বে (বনী ইস্রাইলের যুগে) একটি লোক ছিল; যে ৯৯টি মানুষকে হত্যা করেছিল। অতঃপর লোকদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তাকে একটি খ্রিষ্টান সন্নাসীর কথা বলা হল। সে তার কাছে এসে বলল, ’সে ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করেছে। এখন কি তার তওবার কোন সুযোগ আছে?’ সে বলল, ’না।’ সুতরাং সে (ক্রোধান্বিত হয়ে) তাকেও হত্যা করে একশত পূরণ করে দিল। পুনরায় সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। এবারও তাকে এক আলেমের খোঁজ দেওয়া হল। সে তার নিকট এসে বলল যে, সে একশত মানুষ খুন করেছে। সুতরাং তার কি তওবার কোন সুযোগ আছে? সে বলল, ’হ্যাঁ আছে! তার ও তওবার মধ্যে কে বাধা সৃষ্টি করবে? তুমি অমুক দেশে চলে যাও। সেখানে কিছু এমন লোক আছে যারা আল্লাহ তা’আলার ইবাদত করে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত কর। আর তোমার নিজ দেশে ফিরে যেও না। কেননা, ও দেশ পাপের দেশ।’
সুতরাং সে ব্যক্তি ঐ দেশ অভিমুখে যেতে আরম্ভ করল। যখন সে মধ্য রাস্তায় পৌঁছল, তখন তার মৃত্যু এসে গেল। (তার দেহ-পিঞ্জর থেকে আত্মা বের করার জন্য) রহমত ও আযাবের উভয় প্রকার ফিরিশ্তা উপস্থিত হলেন। ফিরিশ্তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক আরম্ভ হল। রহমতের ফিরিশ্তাগণ বললেন, ’এই ব্যক্তি তওবা করে এসেছিল এবং পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর দিকে তার আগমন ঘটেছে।’ আর আযাবের ফিরিশ্তারা বললেন, ’এ এখনো ভাল কাজ করেনি (এই জন্য সে শাস্তির উপযুক্ত)।’ এমতাবস্থায় একজন ফিরিশ্তা মানুষের রূপ ধারণ করে উপস্থিত হলেন। ফিরিশ্তাগণ তাঁকে সালিস মানলেন। তিনি ফায়সালা দিলেন যে, ’তোমরা দু’ দেশের দূরত্ব মেপে দেখ। (অর্থাৎ এ যে এলাকা থেকে এসেছে সেখান থেকে এই স্থানের দূরত্ব এবং যে দেশে যাচ্ছিল তার দূরত্ব) এই দুয়ের মধ্যে সে যার দিকে বেশী নিকটবর্তী হবে, সে তারই অন্তর্ভুক্ত হবে।’ অতএব তাঁরা দূরত্ব মাপলেন এবং যে দেশে সে যাওয়ার ইচ্ছা করেছিল, সেই (ভালো) দেশকে বেশী নিকটবর্তী পেলেন। সুতরাং রহমতের ফিরিশতাগণ তার জান কবয করলেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
এই ব্যক্তি তওবা করেছিল এবং নিজেকে সংশোধনের জন্য হিজরতের পথে রওনা দেন। ফলে আল্লাহর সাহায্যে জান্নাত অর্জন করেন। তাই যারা পাপ ছাড়তে চান তাদের উচিত তওবা করে পাপের স্থান ও পাপীদের হতে দূরত্ব বজায় রাখা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীর উত্তম সাহায্যকারী।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং তাদেরও ভালোবাসেন যারা পবিত্র থাকে।’ -(সুরা : বাকারা, আয়াত, ২২২)।
হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩১)