যুগে যুগে ইসলামের শত্রুরা মুসলিমদের বড় আলেম ও নওমুসলিমদের উপর অপবাদের কৌশল অবলম্বন করে। যাতে মানুষ তাদের বক্তব্য বিশ্বাস করা হতে বিরত থাকে আর নওমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণে ওদের মিথ্যাচার সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। কারণ নওমুসলিমরা সাক্ষ্যদান করে – পূর্ববর্তী কিতাবে। রসুলুল্লাহ’র (সাঃ) বর্ণনা রয়েছে আর ইহুদি, খ্রিস্টানরা ভুল পথে চলছে।
আল্লাহপাক এরশাদ করেন-
“আর যখন মারইয়াম পুত্র ঈসা বলেছিল, ‘হে বনী ইসরাঈল, নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল। আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আসবেন, যার নাম আহমদ’। অতঃপর সে যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে আগমন করল, তখন তারা বলল, ‘এটাতো স্পষ্ট যাদু’। সেই ব্যক্তির চেয়ে অধিক যালিম আর কে? যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে, অথচ তাকে ইসলামের দিকে আহবান করা হয়। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না। তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূরকে পূর্ণতাদানকারী। যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।”
সূরা আস-সফঃ ৬-৮
আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মদীনা আগমনের খবর আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের নিকট পৌঁছলে তিনি এসে নবী করীম (সাঃ)-কে কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন করেন।
তিনি বলেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি বিষয়ে প্রশ্ন করব যা নবী ছাড়া আর কেউ জানে না- (এক) ক্বিয়ামতের সর্বপ্রথম আলামত কি? (দুই) জান্নাতবাসীগণ সর্বপ্রথম কোন খাদ্য খাবে? (তিন) কিসের কারণে সন্তান (আকৃতিতে কখনো) তার পিতার অনুরূপ হয়, আবার কখনো মায়ের মত হয়? নবী করীম (সাঃ) বললেন, এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিবরাঈল এইমাত্র আমাকে বলে গেলেন।
আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বলেন, ফেরেশতাদের মধ্যে তিনিই তো ইহুদীদের শত্রু। নবী করীম (সাঃ) বললেন, ক্বিয়ামতের সর্বপ্রথম আলামত হ’ল আগুন, যা মানুষকে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিমে নিয়ে সমবেত করবে।
আর জান্নাতবাসীগণ সর্বপ্রথম যে খাদ্য খাবে তা হ’ল মাছের কলিজার অতিরিক্ত টুকরো, যা কলিজার সাথে লেগে থাকে।
আর সন্তানের ব্যাপারটা হ’ল এই- নারী-পুরুষের মিলনকালে যদি নারীর আগে পুরুষের বীর্যপাত ঘটে তবে সন্তান বাপের অনুরূপ হয়, আর যদি পুরুষের আগে নারীর বীর্যপাত ঘটে তবে সন্তান মায়ের আকৃতি ধারণ করে। তখন আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই এবং নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল।
তিনি বললেন, হে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! ইহুদীরা এমন একটি জাতি যারা অপবাদ রটনায় অত্যন্ত পটু। কাজেই আমার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে তারা জ্ঞাত হবার আগে আপনি আমার ব্যাপারে তাদের নিকট জিজ্ঞেস করুন। তারপর ইহুদীরা এলে নবী করীম (সাঃ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির ছেলে।
তিনি আমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তির ছেলে।
তখন নবী করীম (সাঃ) বললেন, আচ্ছা আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম যদি ইসলাম গ্রহণ করে, তবে কেমন ব্যক্তি হবে? তারা বলল, আল্লাহ তাকে এ থেকে রক্ষা করুন। তিনি পুনরায় একথা বললেন। তারাও সেই একই জবাব দিল। এমন সময় আব্দুল্লাহ ভেতর থেকে তাদের সামনে বেরিয়ে এলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া আর কোন মা‘বূদ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।
তখন তারা বলতে লাগল, এ লোকটা আমাদের মধ্য সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি এবং সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তির ছেলে। তারপর তারা তাকে খুব হেয় প্রতিপন্ন করল। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের ব্যাপারে আমি এটাই আশংকা করছিলাম (ছহীহ বুখারী হা/৩৩২৯)।
কুরআনে বনী ইসরায়েল ও ইহুদিদের এরূপ আচরনের উল্লেখ রয়েছে –
“বলুন, যদি এ (কুরআন) আল্লাহর নিকট হতে (অবতীর্ণ) হয়ে থাকে, আর তোমরা এতে অবিশ্বাস কর, অথচ বনী ইসরাইলের একজন এর (অর্থাৎ তাওরাতের) অনুরূপ সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়ে এতে বিশ্বাস স্থাপন করল, আর তোমরা ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে, (তাহলে তোমাদের পরিণাম কী হবে) তা ভেবে দেখেছ কি? নিশ্চয় আল্লাহ সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।”
সূরা আল আহকাফঃ ১০
আজও একই নীতি তারা অনুসরণ করে চলছে- কাফের অবস্থায় তারা যাদের নেতৃত্ব, কতৃত্ব মানতো, যারা ছিল প্রশংসিত। ইসলাম গ্রহণের পর ওরা তাদের নিকৃষ্ট বলে প্রচার করে। অথচ আমরা অপ্রপ্রচারগুলো বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই বিশ্বাস করি।
অথচ আল্লাহ বলেন-
“হে বিশ্বাসীগন, যদি কোন ফাসেক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে তাহলে তা অনুসন্ধান করে দেখ৷ এমন যেন না হয় যে, না জেনে শুনেই তোমরা কোন গোষ্ঠীর ক্ষতি করে বসবে এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে৷”
সুরা হুজুরাত
ইসলামের শত্রুরা চায়- বিভিন্ন অপ্রপ্রচার, অপবাদের মাধ্যমে মুসলিমদের পরস্পরকে সংঘাতে লিপ্ত করতে যেন মুসলিমরা দুর্বল হয়ে যায়।