টাকায় ছবি কি শরীয়াভিত্তিক?

Someone counting Bangladeshi 500TK bill

প্রায় প্রতিটি দেশে অর্থের মাঝে রয়েছে তাগুতের ছবি। কারো মন্দির/ধর্মীয় স্থাপনা বা জালেম রাজাদের স্থাপত্য শিল্পের ছবি। আবার আমাদের রয়েছে রাষ্ট্রীয় উপাসনালয়ের ছবি যা সংসদ নামে খ্যাত। যেখানে কুরআন বিরোধী আইন রচনা ও পরিচালনা করা হয়।

অধিকাংশ মুসলিমরা মন্দিরের ছবির বিরোধিতা করবে কিন্তু রাষ্ট্রীয় উপসনালয় সংসদের বিরোধিতা করবে না যেখান কুরআন বিরোধী আইন রচনা করে মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দেয় রাষ্ট্রীয় তাগুতরা বা মানবরচিত দ্বীনের পূজারীরা। মূর্তিপূজা না করলে বা না মানলে মূর্তি আপনাকে শাস্তি দিতে পারবে না কিন্তু সংসদের রব যারা কুরআন বিরোধী আইন রচনা ও পরিচালনা করে তাদের বিরোধীতা করলে জেল, জুলুম ও শাস্তি দেয়। তাই জীবিত রবের কথা না বলে শুধু নির্জীব শির্কের আলোচনা হল দাওয়াহর অপূর্ণতা।

আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুক। আহ!! কবে ফিরবে স্বর্নমুদ্রা ও রৌপ্যমুদ্রা।

আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থার ধারনার মূল কারিগর হল নাইট টেম্পলাররা। নাইট টেম্পলাররা ছিল সন্ন্যাসী যোদ্ধা। যাদের মিশন ছিল ধর্মীয় আদেশ, নীতিমালা ও অন্যান্য কার্যাবলী সাধন করা এবং নিজ ধর্ম ও মানুষদের রক্ষার্থে জীবন দেওয়া।

টেম্পলাররা জেরুজালেমে খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীদের প্রতিরক্ষার জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছিল। শহরটি ১০৯৯ সালে প্রথম ক্রুসেডের মাধ্যমে খ্রিস্টানদের দখলে চলে যায় এবং তীর্থযাত্রীরা ইউরোপ জুড়ে হাজার হাজার মাইল ভ্রমণ করে সেখানে যেতে শুরু করেছিল।

এই তীর্থযাত্রীদের কোনো না কোনোভাবে মাসের পর মাস খাদ্য, পরিবহন এবং বাসস্থানের জন্য তহবিল আবশ্যক ছিল যাতে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা বহন করা এড়াতে পারে। কারণ এটি তাদের ডাকাতদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে।

টেম্পলাররা সেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। একজন তীর্থযাত্রী লন্ডনের টেম্পল চার্চে তার নগদ অর্থ রেখে যেতে পারতেন এবং জেরুজালেমে গিয়ে তা তুলে নিতে পারতেন। টাকা বহনের পরিবর্তে তিনি ক্রেডিট চিঠি বহন করতেন। চিঠি বক্তব্য সোজা বাংলায় এই- ‘চাহিবা মাত্র প্রাপকে তার সম্পদ দিতে হবে’ অনেকটা আধুনিক চেকের মতো। নাইট টেম্পলারার ছিল বর্তমানের টাকা পাঠানোর কোম্পানিদের মত।

যদিও টেম্পলাররা এই ধরনের পরিসেবা প্রদানকারী বিশ্বের প্রথম সংস্থা ছিল না। কয়েক শতাব্দী আগে, চীনের ট্যাং রাজবংশ “ফেইকুয়ান” – উড়ন্ত অর্থ – ব্যাবহার করত। এটি ছিল দুই-অংশের একটি নথি যা ব্যবসায়ীরা আঞ্চলিক অফিসে জমা দিত এবং রাজধানীতে তাদের নগদ টাকা ফেরত পেত।

কিন্তু সে ব্যবস্থা সরকার পরিচালনা করত। টেম্পলাররা একটি প্রাইভেট ব্যাংকের অনেক কাছাকাছি ছিল – যদিও এটি পোপেদের মালিকানাধীন ছিল। ইউরোপ জুড়ে রাজা ও রাজকুমারদের সাথে মিত্রতা এবং দারিদ্র্যের শপথ নেওয়া সন্ন্যাসীদের অংশীদারিত্ব দ্বারা পরিচালিত হত এই সিস্টেম।

নাইটস টেম্পলাররা দীর্ঘ দূরত্বে অর্থ স্থানান্তরের চেয়েও অনেক বেশি কাজ করেছিল।

ইউরোপ হতে জেরুজালেম পৌছতে দীর্ঘসময় লাগতো তীর্থযাত্রীদের। পক্ষান্তরে টেম্পলরা ঘোড়া দিয়ে পরস্পর যোগাযোগ করে সহজে পৌঁছে যেতে পারতো। তাই তারা এমন করত – তীর্থযাত্রীদের রেখে যাওয়া আমানত সম্পদ বা মুদ্রা সুদের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ধার দিত।
এভাবে তারা সম্পদশালী হয়ে গিয়েছিল। আর জেরুজালেম পৌছে তীর্থযাত্রী সম্পদ নেওয়ার আগে তা পোছে দিত।

অনেক সময় অনেক তীর্থযাত্রী নিরাপত্তার জন্য সম্পদ দেরিতে তুলতেন। এভাবে তারা অন্যের টাকা, সম্পদ দ্বারা নিজেরা সমৃদ্ধ হতো। আবার অনেক তীর্থযাত্রী মাঝপথে মারা যেত তাতেও তাদের লাভ হতো।

বর্তমানে ব্যাংকগুলো তাই করে- অন্যের সম্পদের আমামত ভঙ্গ করে তারা ব্যবসা।

তারপর দেখা যায় চার্চের অনুমতিক্রমে অনেকে সম্পদ না তুলে চিরকুট/চিঠি চেক সদৃশ্য কাগজের মাধ্যমে জমি, পণ্য কেনাবেচা করত। প্রথমে সালাউদ্দিন আইয়ুবী ও পরে খ্রিস্টানরা ওদের অত্যাচার, ফেতনা ও জুলুমের জন্য উচ্ছেদ করে। ধারনা করা হয় তাদের বংশধররাই আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থা তৈরি করেছে।

১২৪৪ সালে ইউরোপীয় খ্রিস্টানরা জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলার পরে ১৩১২ সালে টেম্পলাররা শেষ পর্যন্ত ভেঙে যায় এবং পরে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়।

এখন প্রশ্ন হল এসব বক্তব্যের সাথে ইসলাম ও বিশ্বপরিক্রমায় কি সম্পর্ক!?

দেখুন তখনও সম্পদের বিনিময়ে চেক সদৃশ কাগজ দেওয়া হতো। যাতে যেকোন সময় চেক ভাঙ্গিয়ে সম্পদ নেওয়া যেত, তাই বর্তমান মুদ্রার মত তা উঠানামা করত না। কেউ চাইলে অবরোধ দিয়ে মুদ্রা বা কাগুজে চেককে সাধারণ কাগজে পরিণত করতে পারতো না।

আবার একই কাগুজে মুদ্রা কারোটার মূল্য বেশি, কারোটা কম। কেউ বিনা অনুমতিতে মুদ্রা চাপায়, কারো আইএমএফের অনুমতির প্রয়োজন। যদি স্বর্নমুদ্রা, রুপ্যমুদ্রা প্রতিটি দেশে হতো বিশ্ববাজারে সবার মুদ্রার চাহিদা সমান হতো।

ধরুন বাংলাদেশের ৫ গ্রামের স্বর্নমুদ্রা ও ভারত, চীন, আরব, আফ্রিকার ৫ স্বর্নমুদ্রার মান একই হতো ৫ গ্রামই। হয়তো আফ্রিকার মত গরীব দেশগুলোতে স্বর্ন বেশি হওয়ায় ওরাই সবচেয়ে বেশি খাদ্য, পোশাক কিনতে পারতো বিশ্ববাজার হতে।

আজ ওরা অল্পদামে স্বর্ন, হীরা বেচে ডলার ক্রয় করে। অধিক ডলার, ইউরো বা অন্যান্য মুদ্রা দিয়ে সামান্য প্রয়োজনীয় সম্পদ কিনতে পারে। এই অর্থনীতি ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য প্রয়োজন প্রতিটি দেশে তাদের মনপূত সরকার। এই সরকাররা তাদের নিয়মনীতি মেনে তাদের তাগুতী নেতা, ঐতিহ্য, পশু পাখির ছবি অর্থে (টাকা, ডলার, মুদ্রায়) দেওয়া হয়। যেমনটা – পৌত্তলিক পূজারী দেবদেবী, রাজা-রানী, পশু, পাখির ছবি ব্যবহার করতো।

বিশ্ব মোড়লদের সাথে দ্বন্দ্ব হলে তারা যেকোন মুদ্রাকে অবরোধ দেয়, ফলে দেশীয় বাজার বা বন্ধু দেশ ছাড়া লেনদেন করা সম্ভব হয় না। মুদ্রার দাম পড়ে যায়, বহু বছরের গড়ে উঠা অর্থনীতি অল্পদিনে শেষ হয়ে যায়।

যদি স্বর্নমুদ্রা ও রুপ্যমুদ্রা থাকতো অবরোধ দিলেও স্বর্ন ও রৌপ্যের মূল্য ঠিকই থাকতো, লেনদেন করা যেত। কাগুজে মুদ্রার মত যাকে অবরোধ দেওয়া, পানিতে ফেললে, আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করা সম্ভব নয়, পোকামোকড়ও ক্ষতিসাধন করতে পারতো না।

খলিফা মাহাদী হাফি এসে স্বর্ন, রৌপমুদ্রা দান করবেন ইনশাআল্লাহ যা হবে শরীয়াভিত্তিক অর্থব্যবস্থা।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের মধ্যে একজন খলীফা হবেন যিনি মানুষের মধ্যে মুক্ত হস্তে অগণিতভাবে ধন-সম্পদ বিতরণ করবেন’’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *